জেনেভায় ইরানের সঙ্গে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পরমাণু বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। তেহরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, সমঝোতা নয়, আলোচনায় রাজি তারা। ইউরোপের দাবি ছিল, পরমাণু অস্ত্র বিসর্জন দিতেই হবে ইরানকে। ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, ইজ়রায়েল হামলা না বন্ধ করলে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবে না তারা। ঘটনাচক্রে, সেই পরমাণু বৈঠক ‘ব্যর্থ’ হতেই শনিবার আরও আগ্রাসী হল ইজ়রায়েল! তেল আভিভের হামলার ইরানে নিহত হলেন তিন কমান্ডার এবং এক পরমাণু বিজ্ঞানী। হামলা চলল পরমাণুকেন্দ্রেও।
শুক্রবার মধ্যরাতেও ইজ়রায়েলে আক্রমণ চালিয়েছিল ইরান। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাত আড়াইটে নাগাদ ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দেশ জুড়ে সতর্কতা জারি করে। ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয় নাগরিকদের। তার কিছু ক্ষণ পরেই তেল আভিভ, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক-সহ মধ্য ইজ়রায়েলের অধিকাংশ এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে। আকাশে দেখা যায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। তবে সেগুলিকে আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি আইডিএফের। মধ্য ইজ়রায়েলে একটি বহুতলে আগুন লেগেছিল। মনে করা হচ্ছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসবশেষ এসে পড়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
ইজ়রায়েলও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। গভীর রাতে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে তেহরানে। আইডিএফের দাবি, ইরানের সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্রের সংরক্ষণকেন্দ্রগুলিকে নিশানা করা হয়েছিল রাতের হামলায়। ইজ়রায়েলি হামলায় প্রাণ গিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লার সিনিয়র কমান্ডার মহম্মদ খাদর আল-হুসেইনির। দাবি, হিজ়বুল্লা ইরানের ঘনিষ্ঠ। সেই সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল হুসেইনির। ইজ়রায়েলের নাহারিয়া, হাইফার মতো শহরে একাধিক হামলার নেপথ্যে তাঁর হাত ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে তিনি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সম্প্রতি তিনি হিজ়বুল্লার পুরনো অস্ত্রভান্ডার নতুন করে তৈরি করার দায়িত্বও পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছে আইডিএফ।
ইজ়রায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইরানিয়ান রেভলিউশনারি গার্ড্সের (আইআরজি) দুই শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যু হয়েছে বলে শনিবার দাবি করেছেন ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কাট্জ়। কাট্জ় জানিয়েছেন, ইরানের কুম প্রদেশে একটি বহুতলে হামলা হয়েছিল। তাতেই মৃত্যু হয়েছে আইআরজি কমান্ডার সইদ ইজ়াদির। এ ছাড়া গভীর রাতে আইআরজি-র আরও এক কমান্ডার বেনহ্যাম শরিয়ারির গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁরও মৃত্যু হয়েছে। তেহরান অবশ্য দুই সেনা কমান্ডারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি এখনও।
ইজ়রায়েলি হামলায় ইরানের আরও এক পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। এই নিয়ে ১০ জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়েছে ইরানে। ইরান সরকারের নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘তেহরান টাইমস’-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী সইদ ইসার তাবাতাবায়েইর বাড়িতে ইজ়রায়েলি বোমা আছড়ে পড়ে। সেই সময় বাড়িতে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। হামলায় দু’জনেরই মৃত্যু হয়। ওই বিজ্ঞানী ইরানের শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। শনিবার ইরানের ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রেও হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। নিশানা করা হয়েছিল দু’টি সেন্ট্রিফিউজ় উৎপাদনকেন্দ্র। এই হামলার কথা ইরানও স্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, পরমাণুকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
ইজ়রায়েল এর আগেও ইরানের একাধিক পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। জার্মান সংবাদপত্র ‘বিল্ড’কে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিদন সার বলেছেন, “যা খবর পাচ্ছি তাতে, ওদের (ইরানের) পরমাণু বোমা তৈরির সম্ভাবনাকে আমরা ইতিমধ্যে অন্তত দুই-তিন বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছি।” যদিও ইরানের দাবি, তাদের পরমাণু প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত জরুরি যে কেন্দ্রটি, ফোর়ডোর সেই ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম ভান্ডার এখনও অক্ষতই রয়েছে। সেটিকে ধ্বংস করাই ইজ়রায়েল লক্ষ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য, ওই পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েও কিছু করতে পারবে না ইজ়রায়েল। তাদের সেই ক্ষমতা নেই। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘ওদের (ইজ়রায়েল) ক্ষমতা খুবই সীমিত। ওরা (পরমাণু কেন্দ্রের) ছোট একটা অংশকে ভাঙতে পারে মাত্র। কিন্তু গভীরে যেতে পারবে না। সে ক্ষমতা ওদের নেই।’’
এর আগে ইরানের ফোরদো পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েলি বাহিনী। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, সেটিতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, আমেরিকার ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ইরানের ওই পরমাণুকেন্দ্রকে ধ্বংস করতে পারবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে চান ট্রাম্প। যদি সেটি পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব হয়, তা হলেই ইরানে হামলা করার কোনও অর্থ দাঁড়ায়। সূত্রের খবর, আমেরিকার প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের এমনটাই জানিয়েছেন ট্রাম্প। ইরানের ওই পরমাণুকেন্দ্রটি মাটি থেকে কতটা গভীরে তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে ইজ়রায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অনুমান, মাটি থেকে খুব বেশি হলে ৩০০ ফুট (৯০ মিটার) গভীরে থাকতে পারে ওই পরমাণুকেন্দ্রটি। আমেরিকা ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে কি না, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সপ্তাহ দুয়েক সময় নিয়েছেন।
শনিবার ফের আমেরিকা হুমকি দিয়েছে ইরান। ইউরোপ সফরে গিয়ে এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘‘আমেরিকা যদি ইজ়রায়েলের সঙ্গে মিলে আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যোগ দেয়, তবে পশ্চিম এশিয়ার মার্কিন সেনাঘাঁটিগুলিতে প্রতিশোধমূলক প্রত্যাঘাত চালাতে আমরা দ্বিধা করব না। আত্মরক্ষা প্রতিটি দেশেরই মৌলিক অধিকার।’’
পশ্চিম এশিয়ার শান্তির খোঁজ ‘বিশ বাঁও জলে’। শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরান এবং ইজ়রায়েল, দু’দেশের প্রতিনিধিই যুদ্ধের জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করেছেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যেতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের প্রতিনিধি আমির সঈদ ইরাভানি বলেন, ‘‘ইজ়রায়েল একতরফা ভাবে, অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমরা তাই প্রত্যাঘাত করেছি।’’ প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ড গাজ়ায় গত দেড় বছর ইজ়রায়েলি সেনার হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘ইজ়রায়েল সব সময়ই অন্য দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে। সাধারণ মানুষকে হত্যা করে।’’ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ কথা বলার সময় ইজ়রায়েলি হামলায় নিহত ইরানি শিশুদের ছবি হাতে নিয়ে তুলে ধরেন তিনি। অন্য দিকে, ইজ়রায়েলের প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন বলেন, ‘‘ইরান এখন আক্রান্ত সেজে নাটক করছে।’’ তাঁর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক জনমত উপেক্ষা করে গণবিধ্বংসী অস্ত্র বানিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি বিঘ্নিত করছে ইরান। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাত বন্ধ এবং সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানানো হলেও তার রূপরেখা নির্ধারণের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কোনও ঐকমত্য হয়নি।
খামেনেই ‘উদ্দেশ্য’ নয়
আয়াতোল্লা আলি খামেনেই ইরানের মসনদে থাকতে পারেন না! দাবি করেছিলেন ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজ়রায়েল কাৎজ়। এ বার ইজ়রায়েলের বিদেশ মন্ত্রী জিডিয়ন সারের গলায় শোনা গেল ভিন্ন সুর। তিনি জানালেন, ইরানে শাসক-বদল তাদের উদ্দেশ্য নয়, অন্তত এখনও পর্যন্ত। জার্মানির একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি জানালেন, ইজ়রায়েলের মূল্য উদ্দেশ্য হল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করা। আর সেজন্যই পদক্ষেপ করছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। জার্মানির ‘বিল্ড’ সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী সার বলেন, ‘‘এই যুদ্ধের লক্ষ্য ইরানে শাসক-বদল নয়, ইজ়রায়েলের নিরাপত্তা ক্যাবিনেট তা নির্ধারণ করেনি। অন্তত এখনও পর্যন্ত নয়।’’ সারের এই বক্তব্য নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এখন না হলেও ভবিষ্যতে ইরানে খামেনেইকে সরাতে উদ্যত হতে পারে নেতানিয়াহুর সরকার। সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন মন্ত্রী। যদিও তিনি সেই জল্পনা উড়িয়ে বলেন, ‘‘পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র— এই দুই হুঁশিয়ারি অপসারণের জন্য যা প্রয়োজন, তা করবে ইজ়রায়েল। এই কাজ, এই অভিযান শেষ করব, যেমনটা বলেছিলাম।’’ মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দিয়ে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ় জানিয়েছিলেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনেইয়ের ‘পরিণতি’ হবে পড়শি দেশ ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত একনায়ক সাদ্দাম হুসেনের মতো। রয়টার্সে প্রকাশিত একটি খবরে দাবি করা হয়েছিল, খামেনেইকে খুন করতে উদ্যত হয়েছিল নেতানিয়াহু সরকার। ওই প্রতিবেদন দাবি করা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেল আভিভের ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। অন্য দিকে, নেতানিয়াহু রবিবার প্রকাশ্যে তেহরানে ক্ষমতার পালাবদলে সক্রিয় হওয়ার জন্য ইরানের আমজনতার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। ঠিক যেমন ভাবে দু’দশক আগে সাদ্দামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সময় ইরাকের জনতার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ।
উত্তরসূরি বাছছেন খামেনেই
গোপন বাঙ্কারে বসেই নিজের উত্তরসূরি বাছতে শুরু করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। সম্ভাব্য তিন জনের নামও ইতিমধ্যে বেছে নিয়েছেন তিনি। তবে সেই তালিকায় নেই খামেনেইয়ের পুত্র মোজতবা খামেনেইয়ের নাম! আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’-এর এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষের মাঝে ৮৬ বছর বয়সি খামেনেই কোনও এক গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি কোথায় রয়েছেন, তা সকলের কাছ থেকে গোপনে রাখতে চাইছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। যোগাযোগের জন্য বৈদ্যুতিন কোনও মাধ্যম ব্যবহার করাও বন্ধ করেদিয়েছেন। বিশ্বস্ত এক সহচরের মাধ্যমেই বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইরানের প্রস্তুতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তিন সরকারি আধিকারিক এমনটাই জানিয়েছেন ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’কে। পশ্চিম এশিয়ায় সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে ইরানের একাধিক সামরিক কর্তা নিহত হয়েছেন। তাঁদের পরিবর্তও ইতিমধ্যে বেছে নিয়েছেন খামেনেই। এ বার নিজের উত্তরসূরি হিসাবেই তিন জন শীর্ষ ধর্মীয় নেতাকে মনোনীত করে ফেললেন তিনি। সূত্রের খবর, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খামেনেই নিহত হলে ওই তিন জনের মধ্যে থেকেই কাউকে ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসাবে বেছে নেওয়া হতে পারে। অনেকের মতে, খামেনেইয়ের তিন দশকের শাসনকালে এমন অনিশ্চয়তা আগে কখনও তৈরি হয়নি।
ডিগবাজি তুলসীর!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রেগে যেতেই ডিগবাজি খেলেন সে দেশের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গাবার্ড। শুধু পাল্টিই খেলেন না, ট্রাম্পের চেয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন দাবি করলেন তিনি। ইরান এই মুহূর্তে কোনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না বলেই চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন কংগ্রেসে দাবি করেছিলেন তুলসী। সাম্প্রতিক ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধে তুলসীর সেই মন্তব্য প্রকাশ্যে চলে আসায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছিল, ট্রাম্প কিসের ভিত্তিতে বলছেন যে, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে। এ বিষয়ে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ তুলসীর দাবিকে অস্বীকার করেছিলেন। গুরুত্বই দেননি। এ বার তুলসীই নিজের মত বদলে ফেললেন। সমাজমাধ্যমের পোস্টে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের দাবি, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে ইরান। তাঁর কথায়, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এটা ঘটতে দেওয়া যাবে না। আমারও তাতে সমর্থন রয়েছে।’’
ইরানে ভূমিকম্প
ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর ইরানের সেমনান এলাকা। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.১। ভূতাত্ত্বিক কারণে ইরানে ভূমিকম্প প্রায়ই হয়। কিন্তু এই সংঘাতের আবহে এই ভূমিকম্প নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করতে গিয়েই কি কেঁপে উঠেছে মাটি! প্রসঙ্গত, এই সেমনানে ক্ষেপণাস্ত্র কমপ্লেক্স এবং স্পেস সেন্টার রয়েছে। শুক্রবার, ২০ জুন ভূমিকম্প হয়েছে ইরানের উত্তরে সেমনানে। তাসনিম সংবাদসংস্থা বলছে, কম্পনের কেন্দ্র ছিল সেমনানের ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ১৩ জুন থেকে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান এবং ইজ়রায়েল। ইরানের পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। এই আবহে ইরানে ভূমিকম্প নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করা শুরু করে দিয়েছে তেহরান? সেমনানে যেখানে ভূমিকম্প হয়েছে, সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র কমপ্লেক্স এবং স্পেস সেন্টার রয়েছে। এগুলি পরিচালনা করে ইরানের সেনা।
শুক্রবার মধ্যরাতেও ইজ়রায়েলে আক্রমণ চালিয়েছিল ইরান। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাত আড়াইটে নাগাদ ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দেশ জুড়ে সতর্কতা জারি করে। ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয় নাগরিকদের। তার কিছু ক্ষণ পরেই তেল আভিভ, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক-সহ মধ্য ইজ়রায়েলের অধিকাংশ এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে। আকাশে দেখা যায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। তবে সেগুলিকে আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি আইডিএফের। মধ্য ইজ়রায়েলে একটি বহুতলে আগুন লেগেছিল। মনে করা হচ্ছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসবশেষ এসে পড়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
ইজ়রায়েলও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। গভীর রাতে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে তেহরানে। আইডিএফের দাবি, ইরানের সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্রের সংরক্ষণকেন্দ্রগুলিকে নিশানা করা হয়েছিল রাতের হামলায়। ইজ়রায়েলি হামলায় প্রাণ গিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লার সিনিয়র কমান্ডার মহম্মদ খাদর আল-হুসেইনির। দাবি, হিজ়বুল্লা ইরানের ঘনিষ্ঠ। সেই সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল হুসেইনির। ইজ়রায়েলের নাহারিয়া, হাইফার মতো শহরে একাধিক হামলার নেপথ্যে তাঁর হাত ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে তিনি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সম্প্রতি তিনি হিজ়বুল্লার পুরনো অস্ত্রভান্ডার নতুন করে তৈরি করার দায়িত্বও পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছে আইডিএফ।
ইজ়রায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইরানিয়ান রেভলিউশনারি গার্ড্সের (আইআরজি) দুই শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যু হয়েছে বলে শনিবার দাবি করেছেন ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কাট্জ়। কাট্জ় জানিয়েছেন, ইরানের কুম প্রদেশে একটি বহুতলে হামলা হয়েছিল। তাতেই মৃত্যু হয়েছে আইআরজি কমান্ডার সইদ ইজ়াদির। এ ছাড়া গভীর রাতে আইআরজি-র আরও এক কমান্ডার বেনহ্যাম শরিয়ারির গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁরও মৃত্যু হয়েছে। তেহরান অবশ্য দুই সেনা কমান্ডারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি এখনও।
ইজ়রায়েলি হামলায় ইরানের আরও এক পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। এই নিয়ে ১০ জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়েছে ইরানে। ইরান সরকারের নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘তেহরান টাইমস’-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী সইদ ইসার তাবাতাবায়েইর বাড়িতে ইজ়রায়েলি বোমা আছড়ে পড়ে। সেই সময় বাড়িতে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। হামলায় দু’জনেরই মৃত্যু হয়। ওই বিজ্ঞানী ইরানের শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। শনিবার ইরানের ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রেও হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। নিশানা করা হয়েছিল দু’টি সেন্ট্রিফিউজ় উৎপাদনকেন্দ্র। এই হামলার কথা ইরানও স্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, পরমাণুকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
ইজ়রায়েল এর আগেও ইরানের একাধিক পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। জার্মান সংবাদপত্র ‘বিল্ড’কে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিদন সার বলেছেন, “যা খবর পাচ্ছি তাতে, ওদের (ইরানের) পরমাণু বোমা তৈরির সম্ভাবনাকে আমরা ইতিমধ্যে অন্তত দুই-তিন বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছি।” যদিও ইরানের দাবি, তাদের পরমাণু প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত জরুরি যে কেন্দ্রটি, ফোর়ডোর সেই ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম ভান্ডার এখনও অক্ষতই রয়েছে। সেটিকে ধ্বংস করাই ইজ়রায়েল লক্ষ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য, ওই পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েও কিছু করতে পারবে না ইজ়রায়েল। তাদের সেই ক্ষমতা নেই। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘ওদের (ইজ়রায়েল) ক্ষমতা খুবই সীমিত। ওরা (পরমাণু কেন্দ্রের) ছোট একটা অংশকে ভাঙতে পারে মাত্র। কিন্তু গভীরে যেতে পারবে না। সে ক্ষমতা ওদের নেই।’’
এর আগে ইরানের ফোরদো পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েলি বাহিনী। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, সেটিতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, আমেরিকার ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ইরানের ওই পরমাণুকেন্দ্রকে ধ্বংস করতে পারবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে চান ট্রাম্প। যদি সেটি পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব হয়, তা হলেই ইরানে হামলা করার কোনও অর্থ দাঁড়ায়। সূত্রের খবর, আমেরিকার প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের এমনটাই জানিয়েছেন ট্রাম্প। ইরানের ওই পরমাণুকেন্দ্রটি মাটি থেকে কতটা গভীরে তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে ইজ়রায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অনুমান, মাটি থেকে খুব বেশি হলে ৩০০ ফুট (৯০ মিটার) গভীরে থাকতে পারে ওই পরমাণুকেন্দ্রটি। আমেরিকা ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে কি না, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সপ্তাহ দুয়েক সময় নিয়েছেন।
শনিবার ফের আমেরিকা হুমকি দিয়েছে ইরান। ইউরোপ সফরে গিয়ে এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘‘আমেরিকা যদি ইজ়রায়েলের সঙ্গে মিলে আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যোগ দেয়, তবে পশ্চিম এশিয়ার মার্কিন সেনাঘাঁটিগুলিতে প্রতিশোধমূলক প্রত্যাঘাত চালাতে আমরা দ্বিধা করব না। আত্মরক্ষা প্রতিটি দেশেরই মৌলিক অধিকার।’’
পশ্চিম এশিয়ার শান্তির খোঁজ ‘বিশ বাঁও জলে’। শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরান এবং ইজ়রায়েল, দু’দেশের প্রতিনিধিই যুদ্ধের জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করেছেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যেতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের প্রতিনিধি আমির সঈদ ইরাভানি বলেন, ‘‘ইজ়রায়েল একতরফা ভাবে, অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমরা তাই প্রত্যাঘাত করেছি।’’ প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ড গাজ়ায় গত দেড় বছর ইজ়রায়েলি সেনার হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘ইজ়রায়েল সব সময়ই অন্য দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে। সাধারণ মানুষকে হত্যা করে।’’ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ কথা বলার সময় ইজ়রায়েলি হামলায় নিহত ইরানি শিশুদের ছবি হাতে নিয়ে তুলে ধরেন তিনি। অন্য দিকে, ইজ়রায়েলের প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন বলেন, ‘‘ইরান এখন আক্রান্ত সেজে নাটক করছে।’’ তাঁর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক জনমত উপেক্ষা করে গণবিধ্বংসী অস্ত্র বানিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি বিঘ্নিত করছে ইরান। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাত বন্ধ এবং সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানানো হলেও তার রূপরেখা নির্ধারণের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কোনও ঐকমত্য হয়নি।
খামেনেই ‘উদ্দেশ্য’ নয়
আয়াতোল্লা আলি খামেনেই ইরানের মসনদে থাকতে পারেন না! দাবি করেছিলেন ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজ়রায়েল কাৎজ়। এ বার ইজ়রায়েলের বিদেশ মন্ত্রী জিডিয়ন সারের গলায় শোনা গেল ভিন্ন সুর। তিনি জানালেন, ইরানে শাসক-বদল তাদের উদ্দেশ্য নয়, অন্তত এখনও পর্যন্ত। জার্মানির একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি জানালেন, ইজ়রায়েলের মূল্য উদ্দেশ্য হল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করা। আর সেজন্যই পদক্ষেপ করছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। জার্মানির ‘বিল্ড’ সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী সার বলেন, ‘‘এই যুদ্ধের লক্ষ্য ইরানে শাসক-বদল নয়, ইজ়রায়েলের নিরাপত্তা ক্যাবিনেট তা নির্ধারণ করেনি। অন্তত এখনও পর্যন্ত নয়।’’ সারের এই বক্তব্য নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এখন না হলেও ভবিষ্যতে ইরানে খামেনেইকে সরাতে উদ্যত হতে পারে নেতানিয়াহুর সরকার। সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন মন্ত্রী। যদিও তিনি সেই জল্পনা উড়িয়ে বলেন, ‘‘পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র— এই দুই হুঁশিয়ারি অপসারণের জন্য যা প্রয়োজন, তা করবে ইজ়রায়েল। এই কাজ, এই অভিযান শেষ করব, যেমনটা বলেছিলাম।’’ মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দিয়ে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ় জানিয়েছিলেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনেইয়ের ‘পরিণতি’ হবে পড়শি দেশ ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত একনায়ক সাদ্দাম হুসেনের মতো। রয়টার্সে প্রকাশিত একটি খবরে দাবি করা হয়েছিল, খামেনেইকে খুন করতে উদ্যত হয়েছিল নেতানিয়াহু সরকার। ওই প্রতিবেদন দাবি করা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেল আভিভের ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। অন্য দিকে, নেতানিয়াহু রবিবার প্রকাশ্যে তেহরানে ক্ষমতার পালাবদলে সক্রিয় হওয়ার জন্য ইরানের আমজনতার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। ঠিক যেমন ভাবে দু’দশক আগে সাদ্দামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সময় ইরাকের জনতার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ।
উত্তরসূরি বাছছেন খামেনেই
গোপন বাঙ্কারে বসেই নিজের উত্তরসূরি বাছতে শুরু করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। সম্ভাব্য তিন জনের নামও ইতিমধ্যে বেছে নিয়েছেন তিনি। তবে সেই তালিকায় নেই খামেনেইয়ের পুত্র মোজতবা খামেনেইয়ের নাম! আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’-এর এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষের মাঝে ৮৬ বছর বয়সি খামেনেই কোনও এক গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি কোথায় রয়েছেন, তা সকলের কাছ থেকে গোপনে রাখতে চাইছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। যোগাযোগের জন্য বৈদ্যুতিন কোনও মাধ্যম ব্যবহার করাও বন্ধ করেদিয়েছেন। বিশ্বস্ত এক সহচরের মাধ্যমেই বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইরানের প্রস্তুতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তিন সরকারি আধিকারিক এমনটাই জানিয়েছেন ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’কে। পশ্চিম এশিয়ায় সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে ইরানের একাধিক সামরিক কর্তা নিহত হয়েছেন। তাঁদের পরিবর্তও ইতিমধ্যে বেছে নিয়েছেন খামেনেই। এ বার নিজের উত্তরসূরি হিসাবেই তিন জন শীর্ষ ধর্মীয় নেতাকে মনোনীত করে ফেললেন তিনি। সূত্রের খবর, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খামেনেই নিহত হলে ওই তিন জনের মধ্যে থেকেই কাউকে ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসাবে বেছে নেওয়া হতে পারে। অনেকের মতে, খামেনেইয়ের তিন দশকের শাসনকালে এমন অনিশ্চয়তা আগে কখনও তৈরি হয়নি।
ডিগবাজি তুলসীর!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রেগে যেতেই ডিগবাজি খেলেন সে দেশের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গাবার্ড। শুধু পাল্টিই খেলেন না, ট্রাম্পের চেয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন দাবি করলেন তিনি। ইরান এই মুহূর্তে কোনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না বলেই চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন কংগ্রেসে দাবি করেছিলেন তুলসী। সাম্প্রতিক ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধে তুলসীর সেই মন্তব্য প্রকাশ্যে চলে আসায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছিল, ট্রাম্প কিসের ভিত্তিতে বলছেন যে, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে। এ বিষয়ে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ তুলসীর দাবিকে অস্বীকার করেছিলেন। গুরুত্বই দেননি। এ বার তুলসীই নিজের মত বদলে ফেললেন। সমাজমাধ্যমের পোস্টে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের দাবি, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে ইরান। তাঁর কথায়, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এটা ঘটতে দেওয়া যাবে না। আমারও তাতে সমর্থন রয়েছে।’’
ইরানে ভূমিকম্প
ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর ইরানের সেমনান এলাকা। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.১। ভূতাত্ত্বিক কারণে ইরানে ভূমিকম্প প্রায়ই হয়। কিন্তু এই সংঘাতের আবহে এই ভূমিকম্প নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করতে গিয়েই কি কেঁপে উঠেছে মাটি! প্রসঙ্গত, এই সেমনানে ক্ষেপণাস্ত্র কমপ্লেক্স এবং স্পেস সেন্টার রয়েছে। শুক্রবার, ২০ জুন ভূমিকম্প হয়েছে ইরানের উত্তরে সেমনানে। তাসনিম সংবাদসংস্থা বলছে, কম্পনের কেন্দ্র ছিল সেমনানের ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ১৩ জুন থেকে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান এবং ইজ়রায়েল। ইরানের পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। এই আবহে ইরানে ভূমিকম্প নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করা শুরু করে দিয়েছে তেহরান? সেমনানে যেখানে ভূমিকম্প হয়েছে, সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র কমপ্লেক্স এবং স্পেস সেন্টার রয়েছে। এগুলি পরিচালনা করে ইরানের সেনা।