বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) তীব্র জনবল সংকট সত্তে¡ও স্থিতিশীলভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (ইডি) হিসেবে অতিরিক্ত সচিব মোঃ তরিকুল আলম দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কার্যক্রমে কোনো অস্থিরতা দেখা যায়নি। তবে, সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান ড. মো. আসাদ উজ জামানের মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদটি বর্তমানে শূন্য রয়েছে।
নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার আতাউর রহমান (৫৬) নামে এক কৃষক বলেন, বিএমডিএ উত্তরাঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ। এই অঞ্চলকে দেশের শস্যভাÐারে পরিণত করার পেছনে বিএমডিএ-এর ভ‚মিকা মূখ্য।
১৯৮৫ সালে বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (বিআইএডিপি) হিসেবে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে ১৯৯২ সালে এর নতুন নামকরণ হয় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালে সংসদে 'বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ' পাস হয়। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৩৫টি উপজেলায় গভীর নলক‚প স্থাপন, নিবিড় বনায়ন, সেচনালা নির্মাণ, খাল খনন এবং গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে বিএমডিএ তার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই সংস্থার বিভিন্ন কমসূচির ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল খাদ্যশস্য উৎপাদনে একটি উদ্বৃত্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে এবং এলাকাটি সবুজ গাছপালায় ভরে উঠেছে।
বিএমডিএ-এর কার্যক্রম ও অর্জন:
বিএমডিএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১২২ কিলোমিটার খাস খাল/খাঁড়ি পুনঃখনন, ৫৬টি খাস পুকুর পুনঃখনন, একটি বিল পুনঃখনন, ২২টি ক্রসড্যাম নির্মাণ এবং নদীতে দুটি পন্টুন স্থাপন। এছাড়াও, ৫৬টি সেচযন্ত্রে (এলএলপি) সোলার সিস্টেম স্থাপন, ৮৯টি নদী, খাল ও পুকুর পাড়ে এলএলপি স্থাপন, ৪৫০টি গভীর নলক‚প পুনর্বাসন, এবং ১৩০৫ কিলোমিটার ভ‚-গর্ভস্থা পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএমডিএ ২,৬৪৯ কিলোমিটার খাস খাল/খাঁড়ি পুনঃখনন, ৪,৩১৩টি খাস পুকুর পুনঃখনন, ৮টি বিল পুনঃখনন, এবং ৮০০টি ক্রসড্যাম নির্মাণ করেছে। এছাড়াও, ১৩টি নদীতে পন্টুন স্থাপন, ৬৭৬টি সেচযন্ত্রে সোলার সিস্টেম স্থাপন এবং মোট ১,০৫৫টি নদী, খাল ও পুকুর পাড়ে এলএলপি স্থাপন করা হয়েছে। গভীর নলক‚প পুনর্বাসন করা হয়েছে ৪,৭৯০টি এবং ১৫,৩৪৮ কিলোমিটার ভ‚-গর্ভস্থা পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। 
কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, জুন ২০২৫ পর্যন্ত মোট ১৫,৫৬০টি গভীর নলক‚প ও ৯৯১টি এলএলপি ব্যবহার করে প্রায় ৬ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৭০ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৮৪ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়েছে এবং প্রায় ১১ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৬ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন।
জনবল সংকট ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ:
এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান মাত্র ১২৫ জন কর্মকর্তা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে ৯৫ জনই চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। জনবল কাঠামো না থাকায় পদায়ন, পদোন্নতি এবং বেতন-ভাতা নির্ধারণে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দুই দশক ধরে এই ধরনের অব্যবস্থাপনা চলছে বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন। ২০০৩ ও ২০০৮ সালের পর নতুন কোনো জনবল নিয়োগ হয়নি। পূর্বে যেখানে ১,২৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে ৭০৩ জনে দাঁড়িয়েছে। বাকি চাহিদা অস্থাায়ী ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে ১,৯১১ জন জনবলের একটি প্রস্তাবিত কাঠামো কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। 
এ বিষয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. শামসুল হোদা বলেন, জনবল কাঠামোর বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
নির্বাহী পরিচালক মো. তরিকুল আলম জানান, মন্ত্রণালয়ে ৬০০ জনের একটি নিয়োগের আদেশ অপেক্ষমাণ রয়েছে। তিনি আশা করছেন এই আদেশটি বাস্তবায়িত হলে পরবর্তীতে ১,৯১১ জনের জনবল কাঠামোর বিষয়টি সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, কিছু বদলির মাধ্যমে প্রশাসনে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে আরও বদলির নির্দেশ দেওয়া হবে।
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Rajshahir Somoy
         
                   
                       
    জনবল সংকটের মুখেও বিএমডিএ'র কার্যক্রম স্থিতিশীল
- আপলোড সময় : ১১-০৮-২০২৫ ০৫:২০:৫৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-০৮-২০২৫ ০৫:২০:৫৪ অপরাহ্ন
 জনবল সংকটের মুখেও বিএমডিএ'র কার্যক্রম স্থিতিশীল
                                 জনবল সংকটের মুখেও বিএমডিএ'র কার্যক্রম স্থিতিশীল 
                     
                             কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  মোঃ মাসুদ রানা রাব্বানী :
 মোঃ মাসুদ রানা রাব্বানী :  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                