ঢাকা , রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আমি নাকি বিয়ে নিয়ে খুব প্রেশার দিই ওকে নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন খুলনায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিডিপির প্রশংসনীয় উদ্যোগ: স্বেচ্ছাশ্রমে সুইজগেট খাল পরিষ্কার আনসার ভিডিপি'র মহাপরিচালকের শফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমি পরিদর্শনে রাজশাহীতে ঋণের দায়ে ও খাওয়ার অভাবে চার মৃত্যু, ধার করে চল্লিশা ক্যাটরিনাকে বিয়ের আগে রাধিকার সঙ্গে সম্পর্ক? অভিনেত্রীর বা়ড়ি থেকে পাওয়া গেল ভিকির বিশেষ জিনিস রাশিয়া থেকে তেল কিনে যাচ্ছে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সদস্যেরাও! পাকিস্তান, চিনের আকাশ হামলা ঠেকাতে থ্রিডি রেডার পেল নৌসেনা, স্পেনের সহযোগিতায় বানাল টাটা শতায়ুর সংখ্যায় লাখ ছুঁইছুঁই জাপানে, নতুন তথ্য প্রকাশ করল সরকার! বেশি দিন বাঁচার রহস্য কী? শাহরুখ কন্যা সুহানার ২ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিও, রইল নায়িকা রাধিকার পর্ন ভিডিও এখন বাজারে নোয়াখালীতে ৪২৫ কচ্ছপ উদ্ধার মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ১০ শাহজাদপুরে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সেলিম রেজা গ্রেফতার ফেনীতে দেশীয় অস্ত্রসহ ৬ ডাকাত গ্রেপ্তার, ৪টি চোরাই গরু উদ্ধার গাছ প্রিয় রাণীশংকৈলের করিমুল রাজশাহীতে প্রাথমিক শিক্ষায় অচলাবস্থা: এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ, ব্যালট বাক্সের নমুনা তৈরি রাজশাহীতে ২৪ লাখ টাকার স্বর্ণলংকার উদ্ধার; নারী-সহ দুই চোর গ্রেফতার গোদাগাড়ী খাদ্য গুদামে নিম্নমানের চাল মজুদের অভিযোগ

জিয়াউল সিরিয়াল কিলার শিকার ১০৩০ জন

  • আপলোড সময় : ১৭-০৮-২০২৫ ০২:২৪:৫৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৭-০৮-২০২৫ ০২:২৪:৫৩ অপরাহ্ন
জিয়াউল সিরিয়াল কিলার শিকার ১০৩০ জন জিয়াউল সিরিয়াল কিলার শিকার ১০৩০ জন
‘একজন আসামি আছে যার ব্যাপারে তদন্ত করে পেয়েছি সে মাথায় গুলি করে এক হাজার ৩০ জন মানুষকে হত্যা করেছে। গুম করে মানুষদের আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল। তার একটা নেশা ছিল এই গুম ব্যক্তিদের হাত-পা-চোখ বেঁধে নৌকায় করে মাঝ বুড়িগঙ্গায় নিয়ে যেত। গুলি করে লাশটা নদীতে ফেলত। গুলিটা ভিকটিমের মাথার কাছে নিয়ে করত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম-সেটা কেন? তার জবাব-গুলি করার পর নিহত ব্যক্তির মগজ ও রক্তের গরম ছিটা হাতে লাগলে দারুণ ফিলিংস অনুভব হতো।’

কে এই ভয়ানক খুনি, কে এই সিরিয়াল কিলার? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের এ বক্তব্যের সূত্র ধরে আমার দেশ অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই হিংস্র খুনি বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত র‌্যাবের বিভিন্ন পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজের টিম নিয়ে এই খুনগুলো করেছেন তিনি। গুম করা ব্যক্তিকে খুন করতে তিনি বলতেন-‘গলফ করো’।

অর্থাৎ ওকে খুন করো। জিয়াউল আহসান এখন কেরানীগঞ্জ বিশেষ কারাগারের ধলেশ্বরী ভবনে ডিভিশনপ্রাপ্ত সেলে বন্দি আছেন। টেলিফোনে জানতে চাইলে বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সায়েফ উদ্দিন নয়ন জানান, সুনির্দিষ্ট কী অপরাধে তিনি কারাগারে আছেন বলতে পারছি না। তবে তিনি ১৫টি মামলায় (ধারা ৩০২, ৩০৭, ১০৯, ৩২৬) বন্দি আছেন।

এ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জিয়াউল আহসানের নৃশংসতার অসংখ্য কাহিনি জানা গেছে। পলাতক শেখ হাসিনা এবং তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের নির্দেশেই বেশি মানুষকে গুম-খুন করেছেন জিয়াউল আহসান। তিনি হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকের একান্ত অনুগত ও বিশ্বস্ত ছিলেন। তাদের নির্দেশে গুম করে আয়নাঘরে রাখতেন ভিকটিমদের। সেখান থেকে বিভিন্ন কায়দায় খুন করে লাশ গুম করে দেওয়া হতো। জিয়াউল আহসান গুম হওয়া ব্যক্তিদের যমটুপি পরিয়ে মাইক্রোবাসে করে পোস্তগোলা ব্রিজ, কাঞ্চন ব্রিজ কিংবা কাঁচপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গুলি করে লাশ ফেলে দিতেন শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে। একদিনে একজনকে দিয়ে ১১টি এবং আরেকজনকে দিয়ে ১৩টি খুন করারও রেকর্ড আছে। কখনো মাইক্রোবাসেই ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হতো। এরপর লাশ রেললাইনের ওপর শুইয়ে দিতেন। ট্রেন এসে লাশ দ্বিখণ্ডিত, ত্রিখণ্ডিত করত।

২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে কমলাপুর থেকে টঙ্গি পর্যন্ত ট্রেনে কাটা যত অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ পাওয়া যেত, তা সবই জিয়াউল আহসানের খুন করা। বেশিরভাগ খুন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। একটি নির্দিষ্ট নৌকা ছিল। সেই নৌকায় করে যমটুপি পরা ব্যক্তিদের মাঝনদীতে নিয়ে টুপি খুলতেন। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই থাকত। মাথার একেবারে কাছে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতেন। ফিনকি দিয়ে রক্ত ও মগজ এসে পড়ত জিয়াউল আহসানের হাতে। তখন তিনি উল্লাস করতেন। কখনো আবার দেখা যেত আগেই হত্যা করা লাশ নৌকায় তুলে নিচে ও উপরে সিমেন্টভর্তি বস্তার সঙ্গে বেঁধে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতেন, যাতে লাশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। হতভাগ্য বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর শেষ পরিণতিও ঘটে জিয়াউলের হাতে।

শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরে সীমান্তের ওপারে তাদের হাতে তুলে দেওয়ারও অনেক ঘটনা আছে। সিলেট সীমান্তে এমন ৭ জনকে তুলে দেওয়ার নজির একটি রেকর্ডে উল্লেখ আছে। একবার মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে ৫০ কেজিরও বেশি ওজনের একটি বস্তা পাঠানো হয় জিয়াউল আহসানের বাসায়। গাড়িতে করে যিনি এই বস্তা জিয়াউলের বাসায় নিয়ে যান, তার বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, ‘এটি ছিল টাকার বস্তা’।

কে এই মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান? তার চাকরিজীবন সম্পর্কে খোঁজ করে জানা গেছে, তিনি সেনাবাহিনীর ২৪তম লং কোর্সের কর্মকর্তা। পরিচিতি নম্বর বিএ-৪০৬০। ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে যেকোনো বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, আয়নাঘর, টেলিমনিটরিং ইত্যাদি সব অপরাধের চিহ্নিত অন্যতম প্রধান ব্যক্তি এই জিয়াউল আহসান। তারিক সিদ্দিকই তার প্রধান বস। তিনিই তাকে ‘মনস্টার’ বা দানব বানিয়েছেন।

জিয়াউল আহসান ২০০৯ সালে এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত র‌্যাব-২ এর টুআইসি হিসেবে যোগদান করেন। লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হন। ওই বছরের মে মাসে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যায় তিনি র‌্যাবের অভিযান পরিচালনা করেন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনাও তার নির্দেশনায় ঘটে। ২০১৫ সালে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। তাকে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) পদে পদায়ন করা হয়। এক বছর পর তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) পরিচালক করা হয়। ২০২১ সালে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতির পর তিনি এনটিএমসির মহাপরিচালক হন।

জিয়াউল আহসানের গুম সংক্রান্ত অপরাধ সম্পর্কে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে গুম কমিশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কমিশন নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে নয়, সামগ্রিক গুমের তদন্ত করছে। গুম কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জানা গেছে, কীভাবে গুম করা হতো, গুমের পর খুন করা হতো এবং লোমহর্ষক নির্যাতন করা হতো। গুমে ‘সুপিরিয়র কমান্ড’ ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি তারেক সিদ্দিকের মাধ্যমে গুমের কিংবা খুন করার নির্দেশগুলো দিতেন। কমিশনের রিপোর্টে বিভিন্ন কেস স্টাডি তুলে ধরা হয়েছে। সাদা পোশাকে এক বাহিনীর সদস্যরা গুম করত, প্রচার করা হতো অন্য বাহিনীর নাম। এক বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে আসত টার্গেট মানুষটিকে, হস্তান্তর করত অন্য বাহিনীর হাতে। যত গুম হয়েছে তার মধ্যে জিয়াউল আহসানের টিমই বেশি করেছে। গুমের শিকার হওয়া মানুষদের মধ্যে জিয়াউল আহসান ও তার টিম হত্যাই করেছে এক হাজার ৩০ জনকে। এজন্য বুড়িগঙ্গার পোস্তগোলা ঘাট নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। কত মানুষকে তিনি গুম করেছেন এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়।

বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান শেখ হাসিনার পনেরো বছরের শাসনকালে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। শেখ হাসিনা ও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিক বড় বড় যত অপকর্ম করিয়েছেন, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন জিয়াউল আহসান। অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ফোনে আড়ি পেতে কল রেকর্ড করা সবকিছুতেই তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। জুলাই-আগস্টের গণহত্যায়ও অভিযুক্ত হয়েছেন এই কর্মকর্তা। সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়ার (আইকেবি) লেখাতেও জিয়াউল আহসানের অপরাধের বর্ণনা রয়েছে। জিয়াউল আহসান তাকে মেরে ফেলতে পারেনÑএমন তথ্যে তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। একদিন সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে বোমা আতঙ্কও দেখা দেয়।

গুম-খুনে জড়িত জিয়াউলসহ বিভিন্ন বাহিনীর ২৩ কমান্ডারকে চিহ্নিত গুম কমিশনের

গত পনেরো বছরে বিপুলসংখ্যক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। এই গুমের সঙ্গে রাষ্ট্রের পাঁচটি বাহিনীর চিহ্নিত কিছু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে র‌্যাবের কর্মকর্তারা ৬০ শতাংশ গুমে জড়িত ছিলেন। গত ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুমে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। পাঁচজনই ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক ও পরিচালক। তারা হলেন- লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তৌহিদুল ইসলাম। অন্তর্বর্তী সরকার গুমের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠন করে গত বছরের ২৭ আগস্ট। কমিশনকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিশন ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ : অ্যা স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে দুটি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম আমার দেশকে জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরে কমিশন গুমসংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট সরকারের কাছে পেশ করবে।

গুম কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গুম করা হতো তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপে ছিল ‘কৌশলগত নেতৃত্ব’। এরা হলেন- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক এবং পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় ধাপে ছিলেন- বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার চিহ্নিত কর্মকর্তারা। তৃতীয় ধাপে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন। গুম কমিশন গুমের এক হাজার ৮৫০টি অভিযোগ পেয়েছে। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে এখনো ৩৪৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গুম কমিশনে যারা অভিযোগ দায়ের করেছেন, এখনো তাদের অনেককে হুমকি বা ‘থ্রেট’ করা হচ্ছে। ভিকটিমরা ভয়ে আছে। এসব থ্রেট করার প্রমাণ গুম কমিশনে রয়েছে। কমিশন গুম-খুনের জন্য জিয়াউল আহসানসহ ২৩ জন কমান্ডারকে চিহ্নিত করেছে।

জিয়াউল আহসান সম্পর্কে সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া

র‌্যাবে কর্মরত থাকাকালে জিয়াউল আহসান কীভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে লিখেছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে ‘বিজিবি, র‌্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার যত অভিজ্ঞতা’ বিষয়ে জিয়াউল আহসানকে নিয়ে লেখেন : “যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দিত, তা ছিল র‍্যাব-এ প্রেষণে থাকা আমাদের অফিসারদের দ্বারা সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অপহরণ ও হত্যা।

তরুণ, ক্যারিয়ারমুখী অফিসারদের র‍্যাবে পাঠানো হতো, সেখানে কিছুদিন কাজ করে তারা এমন এক চরিত্র নিয়ে ফিরত, যেন তারা পেশাদার খুনি। একই প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছিল জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও), নন-কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) এবং সৈনিকদের মধ্যেও। আমি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই চাইছিলাম তাদের সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে আনা হোক। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানালে তিনি আমার কথায় সম্মতিসূচক ইঙ্গিত দিলেন, এমনকি বললেন জাতীয় রক্ষীবাহিনী থেকেও র‍্যাব খারাপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বাস্তবে রূপ নেয়নি।

কয়েক দিন পর আমি কর্নেল (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও ডিজি এসএসএফ) মুজিবকে—যিনি তখন র‍্যাবের এডিজি (ADG) ছিলেন—ডেকে বলি যেন তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (এখন মেজর জেনারেল) জিয়াউল আহসানকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং আর যেন কোনো ‘ক্রসফায়ার’ না ঘটে। কর্নেল মুজিব এ ব্যাপারে আমাকে কথা দেন এবং বিদায় নেওয়ার সময় তাকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হয়। পরের কয়েক দিন পত্র-পত্রিকা লক্ষ করলাম, নতুন কোনো ক্রসফায়ারের খবর নেই—এতে মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।

এরপর কর্নেল মুজিব একাধিকবার আমাকে এসে জানিয়েছিলেন, সত্যিই ক্রসফায়ারের ঘটনা বন্ধ হয়েছে। কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারি ঘটনা ঠিকই ঘটছে কিন্তু সেগুলোর খবর চাপা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে যখন কর্নেল মুজিব র‍্যাব ছেড়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যান, আর কর্নেল জিয়াউল আহসানÑযিনি আগে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বে ছিলেনÑনতুন ডিজি বেনজীর আসার সঙ্গে সঙ্গে এডিজি র‍্যাব হিসেবে দায়িত্ব নেন।

এরপর আর্মি নিরাপত্তা ইউনিট (ASU) সূত্রে খবর পাই যে, কর্নেল জিয়া নিজের আবাসিক টাওয়ারে একজন গার্ড রেখেছেন, বাসায় অস্ত্র রাখছেন এবং পুরো ফ্ল্যাটে সিসিটিভি বসিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বলা হয় গার্ড সরিয়ে নিতে, ক্যামেরাগুলো খুলে ফেলতে, বাসায় অস্ত্র রাখা থেকে বিরত থাকতে এবং অফিসিয়াল কোয়ার্টারে যে সামরিক নিয়মকানুন আছে, সেগুলো মেনে চলতে।

পরবর্তীকালে তার আচরণ আরো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। ডাইরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (DMI) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জগলুল তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু তাতে কর্নেল জিয়া কোনো কর্ণপাত করেননি। পরে আর্মি নিরাপত্তা ইউনিটের (ASU) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল তাকে আলাপের জন্য ডাকেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল আমাকে জানান, জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মনে হয়েছে যেন সে এমন একজনের সঙ্গে কথা বলছে যার মস্তিষ্ক পাথর বা ইটের টুকরো দিয়ে ঠাসা—বোঝানোর কোনো উপায় নেই।”

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিমের লেখা থেকে আরো জানা যায়, ঢাকা সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জিয়াউল আহসানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তিনি এও লেখেন, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রী মিলিটারি সেক্রেটারি ও অ্যাসিসট্যান্ট মিলিটারি সেক্রেটারির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে জিয়াউল আহসান তার নির্দেশকে তখন চ্যালেঞ্জ করা শুরু করেন।

এত বড় সিরিয়াল কিলার বিশ্বে নেই

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ১৫ জন সিরিয়াল কিলারের কাহিনি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০০ জনকে পর্যন্ত খুন করার ইতিহাস রয়েছে। যিনি তিন বা ততোধিক ব্যক্তিকে হত্যা করে অস্বাভাবিক মানসিক তৃপ্তিলাভ করেন, পুলিশের ভাষায় সেই ব্যক্তি ‘সিরিয়াল কিলার’। অর্থাৎ, যে ধারাবাহিক বা একের পর এক মানুষ হত্যা করে, তাকেই সিরিয়াল কিলার বলা হয়।।

খুনের নেশায় মত্ত থাকে সিরিয়াল কিলাররা। বিশ্বের কুখ্যাত এই সিরিয়াল কিলারদের ভয়ংকর কাহিনিকে ম্লান করে দিয়েছেন জিয়াউল আহসান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিপ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বক্তব্যে এসেছে, জিয়াউল আহসান ১ হাজার ৩০ জনকে গুম-খুন করেছেন অত্যন্ত নৃশংস বীভৎসতায়। এর আগে বাংলাদেশে সিরিয়াল কিলার হিসেবে খুলনার এরশাদ শিকদার ও চাঁদপুরের রসুখাঁর কাহিনি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি, দুদকের মামলা

শুধু গুম-খুন, নৃশংসতাই নয়, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানের নামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুস নেওয়ার মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রী নুসরাত জাহান ও জিয়াউল আহসানের নামে-বেনামে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের নামে ২৪ জানুয়ারি মামলা করেছে। তাদের ১২টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক অনুসন্ধান করে জানিয়েছে, জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব নিয়ে সেদেশে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি দুবাই, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও বিপুল টাকা পাচার করেছেন। দুদক সূত্র জানায়, স্পেস ইনোভেশন লিমিটেড নামে জিয়াউল আহসানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ব্যাংক হিসাবেও ২৭ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তার দুটি প্রতিষ্ঠান এআই ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও এআই ল্যান্ডস্কেপ লিমিটেডের নামে ২৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য রয়েছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Rajshahir Somoy

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ, ব্যালট বাক্সের নমুনা তৈরি

মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ, ব্যালট বাক্সের নমুনা তৈরি