পরিবারের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের একটি চক্রান্তমূলক পরিকল্পনা আপাতত ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু এর পেছনে জমি খেকোদের অন্ধকার হাতের ছায়া দেখা যাচ্ছে। ৫৩ বছর ধরে এই ১৬ কাঠা জমিতে বসবাসকারী এই সম্প্রদায়ের জীবন আজ অনিশ্চয়তার মুখে, যেখানে স্থানীয় এক ব্যক্তি খাসি ভোজের লোভ দেখিয়ে তাদের উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন। এই ঘটনা বাংলাদেশে আদিবাসীদের জমি দখলের ভয়াবহতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ, যা দেশব্যাপী জমি খেকোদের দৌরাত্ম্যকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে চলে যাওয়া পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো স্বাধীনতা পাওয়ার পর ফিরে এসে বাসস্থান হারিয়ে ফেলেন। তখন একজন হিন্দু ব্যক্তি (নাম অজ্ঞাত) তাদের ১৬ কাঠা জমিতে বসবাসের সুযোগ দেন, যা শুরু হয় ছয়টি পরিবারের সাথে। সময়ের সাথে সাথে এই সংখ্যা বেড়ে ১৬টি পরিবারে পৌঁছেছে। এই এলাকা স্থানীয়ভাবে “আদিবাসীপাড়া” নামে পরিচিত। দুই বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ আলী এই জমির ওপর দাবি করে তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা শুরু করেন, দাবি করে যে তিনি ১৯৯৪ সালে এই জমি কিনেছেন। সাজ্জাদের পরিকল্পনায় খাসি ভোজের লোভ দেখিয়ে তাদের রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময় দিয়ে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালানো হয়েছে, কিন্তু পুলিশ, মানবাধিকার কর্মী ও গণমাধ্যমের হস্তক্ষেপে এটি ব্যর্থ হয়েছে।
অনুরূপ ঘটনা এবং জমি খেকোদের পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে আদিবাসীদের জমি দখলের ঘটনা বিরল নয়। ২০২০-২০২৫ সালে চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টস (CHT) এ ৫ মিলিয়ন আদিবাসীর জমি দখলের অনেক কেস রয়েছে, যেমন বান্দরবানে লামা রাবার কোম্পানির দখল, খাগড়াছড়িতে বাঙালি সেটেলারদের দ্বারা হামলা, এবং রাঙ্গামাটিতে আদিবাসী উচ্ছেদ (সূত্র: Amnesty International, ২০২৪)। ২০২৪ সালে সিরাজগঞ্জে আদিবাসী জমি দখলের ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশে জমি খেকোদের সংখ্যা ভয়াবহ: ল্যান্ড মিনিস্ট্রির তথ্য অনুসারে, ১.৩ মিলিয়ন হেক্টর সরকারী জমি দখলকৃত, যার মধ্যে ০.৮ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমি (সূত্র: ল্যান্ড মিনিস্ট্রি, ২০২১)। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (TIB) রিপোর্টে বলা হয়েছে, বছরে হাজার হাজার একর জমি দখল হয় আদিবাসীদের!
জমি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত (সূত্র: TIB, ২০২৩)।
আদিবাসীদের বিরুদ্ধে হিংসা, জমি দখল, ধর্ষণ, হত্যা। ২০২০-২০২৫ সালে CHT-এ ৭৯ জন মানুষ হিংসার শিকার, ৭০৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত (সূত্র: IWGIA, ২০২৩)। ২০২৩ সালে ১১০ ঘটনায় ৭৯ জন নিহত/আহত (সূত্র: Kapaeeng Foundation, ২০২৪)। ২০২৪ সালে বান্দরবানে ৫ মিলিয়ন আদিবাসীর জমি দখল (সূত্র: Front Line Defenders, ২০২৫)। নারীদের লিঙ্গভিত্তিক হিংসা বেড়েছে, যেমন ২০২১ সালে ৩৭ জন আদিবাসী নারী হিংসার শিকার (সূত্র: AIPP, ২০২১)।
প্রভাব: সম্প্রদায়ের ভবিষ্যত বিপন্ন
এই দখলের চেষ্টা পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের জীবনকে বিপন্ন করেছে। সাজ্জাদের চাপে ৩টি পরিবার বাধ্য হয়ে জায়গা ছেড়ে চলে গিয়েছে, যারা এখন আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বাকি ১৩টি পরিবার ভয়ে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজছেন। ফুলমণি বিশ্বাস বলেন, “আজ কোথায় যাব? আমরা অন্ধকারে হাতড়াচ্ছি।” এই ঘটনা আদিবাসীদের অধিকার লঙ্ঘন এবং জমি খেকোদের দৌরাত্ম্যকে প্রকাশ করে, যা দেশব্যাপী সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
এই ধরনের জমি দখল রোধে বাংলাদেশে ‘পানি ব্যবস্থাপনা নীতি ২০২৫’ এর মতো নিয়মাবলী প্রণয়ন হয়েছে, কিন্তু আদিবাসীদের জমি রক্ষায় আরও কঠোর আইন দরকার। স্থানীয় প্রশাসনকে জমির কাগজপত্র যাচাই করে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। সরকারকে আদিবাসী জমি দখল রোধে কমিশন গঠন করতে হবে। জনগণকে সচেতন করে জমি খেকোদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার করতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Rajshahir Somoy
পাহাড়িয়াদের প্রাণযুদ্ধ: রাজশাহীতে খাসি ভোজের ফন্দি ব্যর্থ, জমি খেকোদের অমানবিক হামলার জবাব!
- আপলোড সময় : ০৫-০৯-২০২৫ ০৩:১৩:০২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৯-২০২৫ ০৩:১৩:০২ অপরাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ