যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা এখন যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্ট্যালিনগ্রাদে (মানবসভ্যতার সব থেকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ) পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে কর্মরত এক ব্রিটিশ চিকিৎসক ডঃ টম পোটোকার স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটি একটি কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। এখানে প্রতিদিন যা ঘটছে, তা মানব সভ্যতার জন্য লজ্জার।’ গাজার নির্যাতিত জনগণের কথা বর্ণনা দিয়ে তিনি বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে জোরালো বার্তা দিয়ে বলেন, ‘আর কথা নয়, এবার দয়া করে গাজার জন্য কিছু করুন।’
ডাঃ পোটোকারের কথায় উঠে এসেছে এক অবর্ণনীয় বাস্তবতা। ক্ষুধার্ত শিশু, ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতাল, বারবার বোমার লক্ষ্যবস্তু হয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং চিকিৎসা সামগ্রীর চরম সংকট। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যেই চিকিৎসা দিচ্ছি, অথচ আমাদের আশেপাশে কেবল মৃত্যু ও ধ্বংস আর মানুষের কান্না।’ বিশ্ব নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে গাজায় মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। এখানে এখনই পদক্ষেপ দরকার, ভবিষ্যতের জন্য আর অপেক্ষা নয়।’
ইসরায়েলি বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া দক্ষিণ গাজার শেষ হাসপাতাল নাসের এবং আমাল। শুধুমাত্র এই দুটি স্থানে প্লাস্টিক সার্জন, অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও অ্যানেস্থেটিস্টরা কাজ করছেন জীবন বাঁচানোর জন্য। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার রুম যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মাঝে যেন এক টুকরো শান্তি। তবে থেমে নেই বিপদ। নাসের হাসপাতালের বার্ন ইউনিট একসময় ছিল সবচেয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এক বিমান হামলায় সেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি ডাঃ পোটোকার আগে যেখানে কাজ করতেন সেটিও সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।
হাসপাতালের ভেতরেই ডাক্তারদের আবাসিক এলাকা। সারাদিনে মাত্র একবার খাবার দেওয়া হয়। তাও মাত্র ৪০০ ক্যালোরির। তাই খেয়ে দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। চিকিৎসকরা জানান, তারা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে কাজ করছেন, কিন্তু থেমে নেই তাদের সেবা। প্রতিদিন অসংখ্য শিশু, নারী, তরুণ তাদের কাছে আসে। বোমার আঘাতে তাদের কারো হাত, কারো পা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি করুণ।
জাতিসংঘের এক হিসাব বলছে , গাজায় প্রতিদিন এক বেলার খাবারও পাচ্ছে না প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। ইউনিসেফ সতর্ক করে জানিয়েছে, দ্রুত সাহায্য না পৌঁছালে ১৪,০০০ শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, হামাস হাসপাতালগুলোর ভেতর বা নিচে সুড়ঙ্গের ভিতরে আশ্রয় নিচ্ছে, যা তাদের হামলার কারণ। কিন্তু চিকিৎসক ও মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, ‘এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক যুক্তির চেয়ে জরুরি হলো মানুষের প্রাণ বাঁচানো।’ নাসের হাসপাতাল বর্তমানে দক্ষিণ গাজার শেষ আইসিইউ ইউনিট চালু রাখার লড়াইয়ে লিপ্ত। অক্সিজেন সরবরাহ চালু রাখা হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। যদি এই ইউনিট সরিয়ে নিতে হয়, তাহলে পুরো অঞ্চল কার্যত চিকিৎসা সুবিধা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
ডাঃ ভিক্টোরিয়া রোজ বলেন, ‘আমার অ্যানেস্থেটিক নার্স এবং ডাঃ গ্রেইমের সহকর্মীরা পরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। এটা আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি।’ তারপরও যারা আছেন, তাদের মনোবল অটুট রাখার চেষ্টা করছেন। অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ গ্রেইম গ্রুম বলেন, ‘এই মানুষগুলো আমাদের মতোই, কারো শিক্ষক, কারো ব্যবসায়ী, কারো বাবার হাত কেটে গেছে, কারো মেয়ের চোখ গেছে কিন্তু তারা প্রতিদিন কাজে আসে। যুদ্ধ থেমে নেই, তাই আমরা ডাক্তাররাও থামতে পারি না।’
ডাঃ পোটোকার বলেন, ‘আমি যখন ২০২৩ সালে এখানে ছিলাম, তখনো পরিস্থিতি খারাপ ছিল, কিন্তু আজ যা দেখছি, তা অসহনীয়। খান ইউনিস এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। স্ট্যালিনগ্রাদের মতো এখানে বাড়ি নেই, পানি নেই, খাবার নেই, জীবন নেই। আছে শুধু মৃত্যু আর মানুষের কান্না। তিনি আরও বলেন, ‘যদি এখনি কিছু না করা হয়, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। এটা এক মানবিক ব্যর্থতা।’
এই যুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যেমনই হোক, গাজায় আজ যা ঘটছে তা নিছক মানবিক সংকট। ক্ষুধার্ত শিশু, ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতাল, নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু কোনো কূটনৈতিক ব্যাখ্যার দ্বারা ঢেকে রাখা সম্ভব নয়। বিশ্বনেতারা যদি এখনও নীরব থাকেন, তাহলে গাজার মানুষের কষ্টের ভার তাদের ইতিহাস বহন করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তথ্যসূত্র: স্কাই নিউজ
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে কর্মরত এক ব্রিটিশ চিকিৎসক ডঃ টম পোটোকার স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটি একটি কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। এখানে প্রতিদিন যা ঘটছে, তা মানব সভ্যতার জন্য লজ্জার।’ গাজার নির্যাতিত জনগণের কথা বর্ণনা দিয়ে তিনি বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে জোরালো বার্তা দিয়ে বলেন, ‘আর কথা নয়, এবার দয়া করে গাজার জন্য কিছু করুন।’
ডাঃ পোটোকারের কথায় উঠে এসেছে এক অবর্ণনীয় বাস্তবতা। ক্ষুধার্ত শিশু, ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতাল, বারবার বোমার লক্ষ্যবস্তু হয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং চিকিৎসা সামগ্রীর চরম সংকট। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যেই চিকিৎসা দিচ্ছি, অথচ আমাদের আশেপাশে কেবল মৃত্যু ও ধ্বংস আর মানুষের কান্না।’ বিশ্ব নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে গাজায় মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। এখানে এখনই পদক্ষেপ দরকার, ভবিষ্যতের জন্য আর অপেক্ষা নয়।’
ইসরায়েলি বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া দক্ষিণ গাজার শেষ হাসপাতাল নাসের এবং আমাল। শুধুমাত্র এই দুটি স্থানে প্লাস্টিক সার্জন, অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও অ্যানেস্থেটিস্টরা কাজ করছেন জীবন বাঁচানোর জন্য। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার রুম যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মাঝে যেন এক টুকরো শান্তি। তবে থেমে নেই বিপদ। নাসের হাসপাতালের বার্ন ইউনিট একসময় ছিল সবচেয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এক বিমান হামলায় সেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি ডাঃ পোটোকার আগে যেখানে কাজ করতেন সেটিও সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।
হাসপাতালের ভেতরেই ডাক্তারদের আবাসিক এলাকা। সারাদিনে মাত্র একবার খাবার দেওয়া হয়। তাও মাত্র ৪০০ ক্যালোরির। তাই খেয়ে দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। চিকিৎসকরা জানান, তারা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে কাজ করছেন, কিন্তু থেমে নেই তাদের সেবা। প্রতিদিন অসংখ্য শিশু, নারী, তরুণ তাদের কাছে আসে। বোমার আঘাতে তাদের কারো হাত, কারো পা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি করুণ।
জাতিসংঘের এক হিসাব বলছে , গাজায় প্রতিদিন এক বেলার খাবারও পাচ্ছে না প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। ইউনিসেফ সতর্ক করে জানিয়েছে, দ্রুত সাহায্য না পৌঁছালে ১৪,০০০ শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, হামাস হাসপাতালগুলোর ভেতর বা নিচে সুড়ঙ্গের ভিতরে আশ্রয় নিচ্ছে, যা তাদের হামলার কারণ। কিন্তু চিকিৎসক ও মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, ‘এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক যুক্তির চেয়ে জরুরি হলো মানুষের প্রাণ বাঁচানো।’ নাসের হাসপাতাল বর্তমানে দক্ষিণ গাজার শেষ আইসিইউ ইউনিট চালু রাখার লড়াইয়ে লিপ্ত। অক্সিজেন সরবরাহ চালু রাখা হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। যদি এই ইউনিট সরিয়ে নিতে হয়, তাহলে পুরো অঞ্চল কার্যত চিকিৎসা সুবিধা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
ডাঃ ভিক্টোরিয়া রোজ বলেন, ‘আমার অ্যানেস্থেটিক নার্স এবং ডাঃ গ্রেইমের সহকর্মীরা পরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। এটা আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি।’ তারপরও যারা আছেন, তাদের মনোবল অটুট রাখার চেষ্টা করছেন। অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ গ্রেইম গ্রুম বলেন, ‘এই মানুষগুলো আমাদের মতোই, কারো শিক্ষক, কারো ব্যবসায়ী, কারো বাবার হাত কেটে গেছে, কারো মেয়ের চোখ গেছে কিন্তু তারা প্রতিদিন কাজে আসে। যুদ্ধ থেমে নেই, তাই আমরা ডাক্তাররাও থামতে পারি না।’
ডাঃ পোটোকার বলেন, ‘আমি যখন ২০২৩ সালে এখানে ছিলাম, তখনো পরিস্থিতি খারাপ ছিল, কিন্তু আজ যা দেখছি, তা অসহনীয়। খান ইউনিস এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। স্ট্যালিনগ্রাদের মতো এখানে বাড়ি নেই, পানি নেই, খাবার নেই, জীবন নেই। আছে শুধু মৃত্যু আর মানুষের কান্না। তিনি আরও বলেন, ‘যদি এখনি কিছু না করা হয়, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। এটা এক মানবিক ব্যর্থতা।’
এই যুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যেমনই হোক, গাজায় আজ যা ঘটছে তা নিছক মানবিক সংকট। ক্ষুধার্ত শিশু, ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতাল, নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু কোনো কূটনৈতিক ব্যাখ্যার দ্বারা ঢেকে রাখা সম্ভব নয়। বিশ্বনেতারা যদি এখনও নীরব থাকেন, তাহলে গাজার মানুষের কষ্টের ভার তাদের ইতিহাস বহন করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তথ্যসূত্র: স্কাই নিউজ