ভারতের উত্তর প্রদেশে ১২ বছরের একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাঁচজন ছাত্রের বিরুদ্ধে। উত্তর প্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় অপ্রাপ্তবয়স্ক যে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্র, বয়স ১২ থেকে ১৫-র মধ্যে। ঘটনার ভিডিও করে তা ভাইরাল করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করা হয়।
উত্তর প্রদেশ পুলিশের পরিদর্শক মনীশ সাক্সেনা সাংবাদিকদের জানান, ওই ছাত্রী দলিত সম্প্রদায়ের। তার মেডিক্যাল টেস্ট করা হয়েছে। পাঁচজন অভিযুক্তই নাবালক। তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তারাও দলিত সম্প্রদায়ের এবং প্রত্যেকেই হেনস্তার শিকার ছাত্রীর বাড়ির কাছেই থাকে। তাদের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে পেশ করা হবে।
ভারতে স্কুলে যাওয়ার পথে দলিত কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেফতার ২
ভারতে ৩ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, স্কুলভ্যান চালক গ্রেফতার
আন্দোলনে উত্তাল ভারতে বাসের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ
ভারতে ৬ দিনে ২৩ জনের ধর্ষণের শিকার নারী
ঘটনাটি গত ৮ মে ঘটলেও তা প্রকাশ্যে আসে দিন কয়েক আগে, যখন ছাত্রীর মাকে তারই এক প্রতিবেশী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ঘটনার ভিডিও দেখান। এরপর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রীর পরিবার।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ঘটনার দিন ওই ছাত্রী বাড়ির কাছের মাঠে খেলছিল। তাকে মাদকমিশ্রিত কোল্ড ড্রিংক খাওয়ানোর পর কাছের এক স্কুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের পরিবারের সদস্য ওই স্কুলে কর্মরত। সেই কর্মীর কাছ থেকে কোনোভাবে চাবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে,অভিযুক্তরা ঘটনার ভিডিও করে এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় ওই ছাত্রীকে।
প্রসঙ্গত, এমন ঘটনা নতুন নয়, গত কয়েক মাসে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে অল্পবয়সীদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের অভিযোগ উঠেছে।
সাম্প্রতিক আরও কিছু ঘটনা
চলতি মাসে উত্তর প্রদেশেরই সুলতানপুরে ১৪ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ, ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে তিনজন। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে রয়েছে।
জাতীয় মহিলা কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে এই মামলায় রিপোর্ট তলব করেছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকার উত্তর প্রদেশের ডিজিপি'র কাছ থেকে পুরো ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছেন।
কর্ণাটকের বেলাগাভিতে ১৪ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তিনজনের বিরুদ্ধে যার মধ্যে দুজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক। লাগাভির পুলিশ কমিশনার ইয়াদা মার্টিন মারবনইয়াং সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তও অপ্রাপ্তবয়স্ক।
চলতি মাসে চেন্নাইয়ে ১৩ বছরের কন্যাকে নিয়ে কাছের হাসপাতালে গিয়েছিলেন তার মা। মেয়েটির পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল। চিকিৎসক পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন ওই নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল থেকে পাল্লাভরম থানায় যোগাযোগ করা হয়।
পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় ১২জনের নাম উঠে আসে যাদের মধ্যে ছয়জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে।
ভারতে এক বছরে ২০ হাজার কন্যাশিশুকে ধর্ষণ
এবার মোদীর রাজ্যে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা
ভারতে আদালতের রায়/ বুকে স্পর্শ করা ধর্ষণচেষ্টা নয়, গুরুতর যৌন নিপীড়ন
ভারতে এবার ব্রিটিশ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার ১
শিশু অধিকার কর্মী প্রশান্ত কুমার দুবে বলেন, অল্পবয়সীদের মধ্যে যৌন অপরাধের প্রবণতা কিন্তু চিন্তা বাড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নাবালকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মধ্যে একটা বড় অংশ হলো যৌন অপরাধ। এর মধ্যে যৌন হেনস্তা এমনকি ধর্ষণও রয়েছে।
‘সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো একাধিক ঘটনায় অভিযুক্তদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বা তারও নিচে। এই বিষয়টা নিয়ে কিন্তু আমাদের ভাবতেই হবে।’
অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৫ হাজার ৩৫২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে অভিযুক্তরা অপ্রাপ্তবয়স্ক।
এনসিআরবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে নথিভুক্ত হওয়া মামলার মধ্যে যৌন হয়রানিসহ আইপিসির সেকশন ৩৫৪ ধারায় নথিভুক্ত মামলার সংখ্যা ৮৭৪ এবং ধর্ষণের মামলা ১১৩০টি।
নাবালকদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে তাতে ৭৯ দশমিক ৩ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছর।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত হওয়া মোট মামলার সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮২৮টি।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এনসিআরবির সবশেষ তথ্য ২০২২ সালের। আমার ধারণা, সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য প্রকাশ পেলে ওই সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
‘তাছাড়া রিপোর্টে উল্লেখ করা মোট মামলার সংখ্যা দেখে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা কমেছে এমন ভাবার কারণ নেই। ওই সামান্য সংখ্যার তারতম্য নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কোনও কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি না। আর যে সংখ্যক ঘটনা ঘটে, তার চেয়ে অনেক কম মামলা দায়ের হয়।’
যে কারণে উদ্বেগ বাড়ছে
তিনি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অল্পবয়সীদের মধ্যে যৌন অপরাধের প্রবণতা সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ।
জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের ওই সদস্য বলেন, একদিকে যেমন যৌন হেনস্তার ঘটনায় ১২ থেকে ১৪ বছরের অভিযুক্তরা চিন্তা বাড়াচ্ছে, তেমন অপরাধের ধরনও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, অপ্রাপ্তবয়স্কদের অপরাধের মধ্যে গণধর্ষণ যেমন রয়েছে, তেমনই ঘটনার সময় হেনস্তার শিকারদের তীব্র আঘাত, পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করে তা প্রকাশ করার হুমকি, এমনকি খুনের অভিযোগ রয়েছে। নিগ্রহের শিকারদের মধ্যে নাবালক ও নাবালিকা দুইই রয়েছে, যদিও মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।
মধ্য প্রদেশের শিশু অধিকার কর্মী প্রশান্ত কুমার দুবে ‘প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সচুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট’-এর অন্তর্গত একাধিক মামলা কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং ভুক্তভোগীদের জন্য কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে অপরাধের ধরন দেখলে শিউরে উঠতে হয়। ভাবতে অবাক লাগে এত অল্প বয়সে তারা এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এমন ঘটনাও রয়েছে যেখানে একজন নাবালক প্রথমে নিজে মেয়েটিকে নিগ্রহ করেছে এবং পরে তার বন্ধুদের গিয়ে একই কাজ করতে বলেছে।
‘অন্যদিকে, নিগ্রহের শিকারদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ঘটনার পর থানায় মামলা দায়ের করা থেকে শুরু করে, শারীরিক পরীক্ষা করানো, তার জন্য হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা, মামলার তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট আইন মেনে তার বিচারের সময় মিলিয়ে পর্যন্ত নির্যাতনের শিকারদের একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যেটা ভীষণ কষ্টদায়ক।’
কেন এই অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে?
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এই জাতীয় অপরাধের প্রবণতার কারণ হিসেবে একাধিক বিষয় উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুবে বলেছেন, অবাধ ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, সেখানে যৌনতায় পরিপূর্ণ কন্টেন্ট, যা তাদের বয়সের জন্য উপযোগী নয়, ওই কন্টেন্ট নিয়ে কী করবে তা বুঝতে না পারা, অল্প বয়সে মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের আসক্তি- এমন একাধিক বিষয় জড়িত রয়েছে।
‘কোভিডের সময় থেকে এই সমস্যা বেড়েছে কারণ অনলাইন ক্লাসের জন্য বাচ্চাদের হাতে ইন্টারনেট কানেকশনসহ মোবাইল বা কম্পিউটার দিতে হয়েছে। কিন্তু তার এই অপব্যবহার নতুনভাবে সমস্যার জন্ম দিয়েছে।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, অনেক অভিভাবকই মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভিতে ‘প্যারেন্টাল লক’ (যাতে বাচ্চারা তাদের জন্য অনুপযোগী কন্টেন্ট না দেখতে পারে)-এর বিষয়ে জানেন না।
অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মা দুজনেই কর্মরত। তাদের পক্ষে ছেলে-মেয়েদের ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখা সম্ভব নয়। গ্রামাঞ্চলে অনেক অভিভাবকেরই প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা কম। অনেক সময় দাদু-দিদিমার কাছে বাচ্চারা থাকে, যারা প্রযুক্তির বিষয়ে সব কিছু না-ও জানতে পারেন।
‘সমস্যা হলো, ইন্টারনেটে থাকা ভিডিওতে যা দেখছে, বাস্তবেও সেটা প্রয়োগ করতে চায় এবং সহপাঠী বা অন্য মেয়েদের নিশানা করে,’ বলেন দুবে।
এই প্রসঙ্গে তিনি চিন্তাধারা বদলের প্রসঙ্গও এনেছেন। তার কথায়, আরও একটা সমস্যা হলো আমাদের সমাজে মেয়েদের নিয়ে যে প্রচলিত চিন্তা-ভাবনা, যা এই ধারণাকে উসকে দেয় যে মেয়েদের নিয়ে যা কিছু করা যায়। তাই প্রতিবেশী মেয়ে, সহপাঠী বা অন্যান্যদের নিশানা হতে হয়। এই চিন্তা বদলাতে হবে।
                           উত্তর প্রদেশ পুলিশের পরিদর্শক মনীশ সাক্সেনা সাংবাদিকদের জানান, ওই ছাত্রী দলিত সম্প্রদায়ের। তার মেডিক্যাল টেস্ট করা হয়েছে। পাঁচজন অভিযুক্তই নাবালক। তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তারাও দলিত সম্প্রদায়ের এবং প্রত্যেকেই হেনস্তার শিকার ছাত্রীর বাড়ির কাছেই থাকে। তাদের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে পেশ করা হবে।
ভারতে স্কুলে যাওয়ার পথে দলিত কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেফতার ২
ভারতে ৩ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, স্কুলভ্যান চালক গ্রেফতার
আন্দোলনে উত্তাল ভারতে বাসের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ
ভারতে ৬ দিনে ২৩ জনের ধর্ষণের শিকার নারী
ঘটনাটি গত ৮ মে ঘটলেও তা প্রকাশ্যে আসে দিন কয়েক আগে, যখন ছাত্রীর মাকে তারই এক প্রতিবেশী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ঘটনার ভিডিও দেখান। এরপর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রীর পরিবার।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ঘটনার দিন ওই ছাত্রী বাড়ির কাছের মাঠে খেলছিল। তাকে মাদকমিশ্রিত কোল্ড ড্রিংক খাওয়ানোর পর কাছের এক স্কুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের পরিবারের সদস্য ওই স্কুলে কর্মরত। সেই কর্মীর কাছ থেকে কোনোভাবে চাবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে,অভিযুক্তরা ঘটনার ভিডিও করে এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় ওই ছাত্রীকে।
প্রসঙ্গত, এমন ঘটনা নতুন নয়, গত কয়েক মাসে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে অল্পবয়সীদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের অভিযোগ উঠেছে।
সাম্প্রতিক আরও কিছু ঘটনা
চলতি মাসে উত্তর প্রদেশেরই সুলতানপুরে ১৪ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ, ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে তিনজন। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে রয়েছে।
জাতীয় মহিলা কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে এই মামলায় রিপোর্ট তলব করেছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকার উত্তর প্রদেশের ডিজিপি'র কাছ থেকে পুরো ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছেন।
কর্ণাটকের বেলাগাভিতে ১৪ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তিনজনের বিরুদ্ধে যার মধ্যে দুজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক। লাগাভির পুলিশ কমিশনার ইয়াদা মার্টিন মারবনইয়াং সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তও অপ্রাপ্তবয়স্ক।
চলতি মাসে চেন্নাইয়ে ১৩ বছরের কন্যাকে নিয়ে কাছের হাসপাতালে গিয়েছিলেন তার মা। মেয়েটির পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল। চিকিৎসক পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন ওই নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল থেকে পাল্লাভরম থানায় যোগাযোগ করা হয়।
পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় ১২জনের নাম উঠে আসে যাদের মধ্যে ছয়জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে।
ভারতে এক বছরে ২০ হাজার কন্যাশিশুকে ধর্ষণ
এবার মোদীর রাজ্যে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা
ভারতে আদালতের রায়/ বুকে স্পর্শ করা ধর্ষণচেষ্টা নয়, গুরুতর যৌন নিপীড়ন
ভারতে এবার ব্রিটিশ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার ১
শিশু অধিকার কর্মী প্রশান্ত কুমার দুবে বলেন, অল্পবয়সীদের মধ্যে যৌন অপরাধের প্রবণতা কিন্তু চিন্তা বাড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নাবালকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মধ্যে একটা বড় অংশ হলো যৌন অপরাধ। এর মধ্যে যৌন হেনস্তা এমনকি ধর্ষণও রয়েছে।
‘সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো একাধিক ঘটনায় অভিযুক্তদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বা তারও নিচে। এই বিষয়টা নিয়ে কিন্তু আমাদের ভাবতেই হবে।’
অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৫ হাজার ৩৫২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে অভিযুক্তরা অপ্রাপ্তবয়স্ক।
এনসিআরবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে নথিভুক্ত হওয়া মামলার মধ্যে যৌন হয়রানিসহ আইপিসির সেকশন ৩৫৪ ধারায় নথিভুক্ত মামলার সংখ্যা ৮৭৪ এবং ধর্ষণের মামলা ১১৩০টি।
নাবালকদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে তাতে ৭৯ দশমিক ৩ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছর।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত হওয়া মোট মামলার সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮২৮টি।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এনসিআরবির সবশেষ তথ্য ২০২২ সালের। আমার ধারণা, সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য প্রকাশ পেলে ওই সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
‘তাছাড়া রিপোর্টে উল্লেখ করা মোট মামলার সংখ্যা দেখে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা কমেছে এমন ভাবার কারণ নেই। ওই সামান্য সংখ্যার তারতম্য নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কোনও কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি না। আর যে সংখ্যক ঘটনা ঘটে, তার চেয়ে অনেক কম মামলা দায়ের হয়।’
যে কারণে উদ্বেগ বাড়ছে
তিনি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অল্পবয়সীদের মধ্যে যৌন অপরাধের প্রবণতা সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ।
জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের ওই সদস্য বলেন, একদিকে যেমন যৌন হেনস্তার ঘটনায় ১২ থেকে ১৪ বছরের অভিযুক্তরা চিন্তা বাড়াচ্ছে, তেমন অপরাধের ধরনও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, অপ্রাপ্তবয়স্কদের অপরাধের মধ্যে গণধর্ষণ যেমন রয়েছে, তেমনই ঘটনার সময় হেনস্তার শিকারদের তীব্র আঘাত, পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করে তা প্রকাশ করার হুমকি, এমনকি খুনের অভিযোগ রয়েছে। নিগ্রহের শিকারদের মধ্যে নাবালক ও নাবালিকা দুইই রয়েছে, যদিও মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।
মধ্য প্রদেশের শিশু অধিকার কর্মী প্রশান্ত কুমার দুবে ‘প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সচুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট’-এর অন্তর্গত একাধিক মামলা কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং ভুক্তভোগীদের জন্য কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে অপরাধের ধরন দেখলে শিউরে উঠতে হয়। ভাবতে অবাক লাগে এত অল্প বয়সে তারা এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এমন ঘটনাও রয়েছে যেখানে একজন নাবালক প্রথমে নিজে মেয়েটিকে নিগ্রহ করেছে এবং পরে তার বন্ধুদের গিয়ে একই কাজ করতে বলেছে।
‘অন্যদিকে, নিগ্রহের শিকারদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ঘটনার পর থানায় মামলা দায়ের করা থেকে শুরু করে, শারীরিক পরীক্ষা করানো, তার জন্য হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা, মামলার তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট আইন মেনে তার বিচারের সময় মিলিয়ে পর্যন্ত নির্যাতনের শিকারদের একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যেটা ভীষণ কষ্টদায়ক।’
কেন এই অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে?
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এই জাতীয় অপরাধের প্রবণতার কারণ হিসেবে একাধিক বিষয় উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুবে বলেছেন, অবাধ ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, সেখানে যৌনতায় পরিপূর্ণ কন্টেন্ট, যা তাদের বয়সের জন্য উপযোগী নয়, ওই কন্টেন্ট নিয়ে কী করবে তা বুঝতে না পারা, অল্প বয়সে মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের আসক্তি- এমন একাধিক বিষয় জড়িত রয়েছে।
‘কোভিডের সময় থেকে এই সমস্যা বেড়েছে কারণ অনলাইন ক্লাসের জন্য বাচ্চাদের হাতে ইন্টারনেট কানেকশনসহ মোবাইল বা কম্পিউটার দিতে হয়েছে। কিন্তু তার এই অপব্যবহার নতুনভাবে সমস্যার জন্ম দিয়েছে।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, অনেক অভিভাবকই মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভিতে ‘প্যারেন্টাল লক’ (যাতে বাচ্চারা তাদের জন্য অনুপযোগী কন্টেন্ট না দেখতে পারে)-এর বিষয়ে জানেন না।
অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মা দুজনেই কর্মরত। তাদের পক্ষে ছেলে-মেয়েদের ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখা সম্ভব নয়। গ্রামাঞ্চলে অনেক অভিভাবকেরই প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা কম। অনেক সময় দাদু-দিদিমার কাছে বাচ্চারা থাকে, যারা প্রযুক্তির বিষয়ে সব কিছু না-ও জানতে পারেন।
‘সমস্যা হলো, ইন্টারনেটে থাকা ভিডিওতে যা দেখছে, বাস্তবেও সেটা প্রয়োগ করতে চায় এবং সহপাঠী বা অন্য মেয়েদের নিশানা করে,’ বলেন দুবে।
এই প্রসঙ্গে তিনি চিন্তাধারা বদলের প্রসঙ্গও এনেছেন। তার কথায়, আরও একটা সমস্যা হলো আমাদের সমাজে মেয়েদের নিয়ে যে প্রচলিত চিন্তা-ভাবনা, যা এই ধারণাকে উসকে দেয় যে মেয়েদের নিয়ে যা কিছু করা যায়। তাই প্রতিবেশী মেয়ে, সহপাঠী বা অন্যান্যদের নিশানা হতে হয়। এই চিন্তা বদলাতে হবে।
 
  আন্তজার্তিক ডেস্ক
 আন্তজার্তিক ডেস্ক  
                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                     
                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                