গায়ে বইছে রাজরক্ত। রাজার বংশধর হলেও সেই পরিচয়ে পরিচিত হতে পারেন না তিনি। কারণ তাঁর মা একদা রাজানুগ্রহ পেলেও প্রায় তিন দশক আগে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যান। যুবরানি হওয়া সত্ত্বেও প্রেমাষ্পদের হাত ধরে পুত্র-কন্যা সমেত পাড়ি দেন আমেরিকায়।
মায়ের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজরোষ এসে পড়ে তাঁর সন্তানদের উপরেও। সমস্ত কূটনীতিক সুবিধা এবং রাজপরিচয় কেড়ে নেওয়া হয় তাঁদের। যে মেয়েকে রাজা নিজের কাছে আনতে পেরেছিলেন, তাঁকেই একমাত্র তাইল্যান্ডের রাজকন্যার পরিচয় দেওয়া হয়। সেই রাজপরিচয়হীন রাজপুত্র ভাচারাসর্ন বিভাচারাওংসে।
৭২ বছর বয়সি তাইল্যান্ডের রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ ও প্রাক্তন স্ত্রী তথা যুবরানি সুজারিনী ভিভাচারাওয়ংসের দ্বিতীয় পুত্র ভাচারাসর্ন। সম্প্রতি তাইল্যান্ডের জনমানসে নতুন করে ভাচারাসর্নকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। খুব ছোট বয়সেই রাজকীয় বিলাস ও রাজপরিবার ছেড়ে মায়ের হাত ধরে আমেরিকা পাড়ি দেন তিনি। সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে তাই জনতার মধ্যে কৌতূহল তৈরি হওয়ার কারণ হল ব্যাঙ্ককে বাজিরালংকর্ণের ত্যাজ্যপুত্র ভাচারাসর্নের বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে নিযুক্ত হওয়া।
৪৩ বছর বয়সি দশম রামের ত্যাজ্যপুত্রের ভিক্ষু হিসাবে অভিষেক অনুষ্ঠিত হয় ‘ভেসাক’ দিবসে। এই তিথিটি বুদ্ধপূর্ণিমা হিসাবে পরিচিত। এই দিনেই বুদ্ধদেবের জন্ম হয়েছিল। এই দিনেই তিনি নির্বাণলাভ করেছিলেন। বুদ্ধের মৃত্যুও হয়েছিল এই দিনেই। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দিনটি স্বাভাবিক ভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ।
এই অনুষ্ঠানটি ভাচারাসর্নের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হয়েছিল। ফলে তা জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমেরিকা ছেড়ে এত বছর পর ব্যাঙ্ককে তাঁর ফিরে আসা রাজকীয় মহলে সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের জল্পনার আগুন উস্কে দিয়েছে। এক সময় রাজকীয় মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হলেও ভাচারাসর্নের আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ অনেকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। তাঁর এই পদক্ষেপ কি রাজকীয় অনুগ্রহ ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে?
২০২৩ সালে তাইল্যান্ডে তাঁর অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন ঘটে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জনসাধারণের মাঝে এবং বিভিন্ন তাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘন ঘন দেখা গিয়েছে ভাচারাসর্নকে। প্রায়শই ব্যাঙ্কক এবং অন্যান্য স্থানে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ‘যুবরাজ’। ২০২৩ সালে প্রথম বার রাজধানীতে পা দেওয়ার পর থেকেই রাজপরিবারে সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায়।
তাইল্যান্ডের প্রাচীন রীতি ও ঐতিহ্য হল, রাজপরিবারের পুরুষ সদস্যদের সাময়িক সময়ের জন্য সন্ন্যাস জীবন ধারণ করতে হয়। বিশেষত জনসাধারণের প্রতিনিধি বা রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের আগে। তাইল্যান্ডের প্রাচীন রীতি মেনে সন্ন্যাসজীবনও পালন করেছেন ভাচারাসর্নের বাবা মহা বাজিরালংকর্ণ। ১৯৭৮ সালে তিনি দু’সপ্তাহের জন্য এক বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন।
ভাচারেসর্নের অভিষেক অনুষ্ঠানের দিন হিসাবে বুদ্ধপূর্ণিমাকে বেছে নেওয়ার মধ্যে জোরালো সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক বার্তা রয়েছে বলে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের মত। তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠান জনসমক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই অভিষেক অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে। এটি রাজপরিবারের নজর এড়ায়নি। ভাচারাসর্নকে গোপনে রাজকীয় কাজে ফিরিয়ে আনার জন্য এটি একটি পরিকল্পিত ইঙ্গিত হতে পারে বলে মনে করছেন সে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজকীয় পদ থেকে পদচ্যুত হওয়ার পরও কেন এত দিন পর নির্বাসিত পুত্রের প্রতি নজর দিতে শুরু করলেন রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ? চার বিবাহ সত্ত্বেও কি তাঁর উত্তরাধিকারের অভাব পড়ল? জানতে গেলে নজর দিতে হবে রাজার বর্ণাঢ্য জীবনযাত্রার দিকে। রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ পরিচিত ‘রাজা দশম রাম’ নামেও। তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালের ২৮ জুলাই। বাবা রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তিনি।
বাজিরালংকর্ণের পড়াশোনা প্রথম থেকে শেষ অবধি পুরোটাই ইংল্যান্ডে। এর পর তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও ক্যানবেরার নামী প্রতিষ্ঠান থেকে সেনার প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে তিনি প্রথামাফিক সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরতও ছিলেন।
১৯৭৭ সালে বাজিরালংকর্ণ বিয়ে করেন তাঁর আত্মীয়া সোওয়ামসায়ালি কিতিয়াকারাকে। সে বছরেই জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র মেয়ে বজ্রকিতিয়াভার। সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হিসাবে রাজকুমারী বজ্রকিতিয়াভার নাম উঠে আসার কথা। তাইল্যান্ডের আইন অনুযায়ী মহিলা উত্তরাধিকারীদের সিংহাসনে বসার অধিকার নেই। তা ছাড়া ২০২২ সাল থেকে তিনি কোমায় রয়েছেন। তাঁর অবস্থা সম্পর্কে কোনও সঠিক তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি যুবরাজ বাজিরালংকর্ণ লিভ ইন শুরু করেন অভিনেত্রী যুবধিদা পলপ্রাসার্থের সঙ্গে। জন্ম হয় তাঁদের পাঁচ সন্তানের। এই দম্পতির চার ছেলে এবং এক মেয়ে। কিন্তু দীর্ঘ দিন তাঁকে ডিভোর্স দেননি স্ত্রী কিতিয়াকারা। তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৪ সালে যুবধিদা পলপ্রাসার্থকে বিয়ে করেন বাজিরালংকর্ণ। বিয়ের পরে যুবরানির নতুন নাম হয় সুজারিনী ভিভাচারাওয়ংসে।
বিয়ের দু’বছর পরে সন্তানদের নিয়ে সুজারিনী নিজের নতুন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জেরে পালিয়ে যান আমেরিকায়। পরে বাজিরালংকর্ণ তাঁর কন্যাকে তাইল্যান্ডে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলেন। কিন্তু চার ছেলে থেকে যান তাঁদের মায়ের সঙ্গেই। এই চার ছেলের মধ্যেই রাজার দ্বিতীয় পুত্র হলেন ভাচারাসর্ন। বাকি সন্তানদের পরিচয় এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
১৪
২০০১ সালে তৃতীয় বিয়ে করেন বাজিরালংকর্ণ। এ বার তাঁর স্ত্রী শ্রীরশ্মি সুওয়াদি ছিলেন সাধারণ তাই-নাগরিক। বিয়ের চার বছর পর তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তাঁর নাম দীপাঙ্কর্ন রাসমজোতি। কিন্তু রাজপুত্র দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে তাঁকে মনোনীত করা সম্ভব নয় বাজিরালংকর্ণের।
২০১৯-এ রাজ্যাভিষেকের তিন দিন আগে চতুর্থ বিয়ে করেন বাজিরালংকর্ণ। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি পাণিগ্রহণ করেন ব্যক্তিগত রক্ষী দলের উপপ্রধান সুথিদাকে। সুথিদা তিদজাই আগে ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট ছিলেন। ২০১৪ সালে রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ তাঁকে ব্যক্তিগত রক্ষী দলের ডেপুটি কমান্ডার নিযুক্ত করেন।
সুথিদার এখনও পর্যন্ত কোনও সন্তান নেই। যদি শেষ পর্যন্ত যুবরাজ দীপাঙ্কর্ন রাজ্যভার সামলানোর অনুপযুক্ত বলে প্রমাণিত হন এবং সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে কোনও মহিলা উত্তরাধিকারীর ব্যবস্থা না করা হয়, তবে ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভাচারাসর্নের। রাজাদেশ জারি করে তাঁকে আবার রাজপরিবারে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
পৃথিবীতে অসংখ্য ধনী ব্যক্তি আছেন। কিন্তু তাইল্যান্ডের রাজা মহা বাজিরালংকর্ণের মতো রাজকীয় ভাবে খরচ করার মতো বিত্তশালী কমই আছেন। অমিতব্যয়ী হিসাবে পরিচিতি রয়েছে তাঁর। তাইল্যান্ডের রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ বিপুল সম্পত্তির মালিক। তবে বিলাসবহুল এবং রঙিন জীবনযাপনের জন্যই খবরের শিরোনামে বেশি উঠে এসেছেন তিনি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাজিরালংকর্ণের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩.৭ লক্ষ কোটি টাকা।
মায়ের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজরোষ এসে পড়ে তাঁর সন্তানদের উপরেও। সমস্ত কূটনীতিক সুবিধা এবং রাজপরিচয় কেড়ে নেওয়া হয় তাঁদের। যে মেয়েকে রাজা নিজের কাছে আনতে পেরেছিলেন, তাঁকেই একমাত্র তাইল্যান্ডের রাজকন্যার পরিচয় দেওয়া হয়। সেই রাজপরিচয়হীন রাজপুত্র ভাচারাসর্ন বিভাচারাওংসে।
৭২ বছর বয়সি তাইল্যান্ডের রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ ও প্রাক্তন স্ত্রী তথা যুবরানি সুজারিনী ভিভাচারাওয়ংসের দ্বিতীয় পুত্র ভাচারাসর্ন। সম্প্রতি তাইল্যান্ডের জনমানসে নতুন করে ভাচারাসর্নকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। খুব ছোট বয়সেই রাজকীয় বিলাস ও রাজপরিবার ছেড়ে মায়ের হাত ধরে আমেরিকা পাড়ি দেন তিনি। সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে তাই জনতার মধ্যে কৌতূহল তৈরি হওয়ার কারণ হল ব্যাঙ্ককে বাজিরালংকর্ণের ত্যাজ্যপুত্র ভাচারাসর্নের বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে নিযুক্ত হওয়া।
৪৩ বছর বয়সি দশম রামের ত্যাজ্যপুত্রের ভিক্ষু হিসাবে অভিষেক অনুষ্ঠিত হয় ‘ভেসাক’ দিবসে। এই তিথিটি বুদ্ধপূর্ণিমা হিসাবে পরিচিত। এই দিনেই বুদ্ধদেবের জন্ম হয়েছিল। এই দিনেই তিনি নির্বাণলাভ করেছিলেন। বুদ্ধের মৃত্যুও হয়েছিল এই দিনেই। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দিনটি স্বাভাবিক ভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ।
এই অনুষ্ঠানটি ভাচারাসর্নের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হয়েছিল। ফলে তা জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমেরিকা ছেড়ে এত বছর পর ব্যাঙ্ককে তাঁর ফিরে আসা রাজকীয় মহলে সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের জল্পনার আগুন উস্কে দিয়েছে। এক সময় রাজকীয় মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হলেও ভাচারাসর্নের আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ অনেকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। তাঁর এই পদক্ষেপ কি রাজকীয় অনুগ্রহ ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে?
২০২৩ সালে তাইল্যান্ডে তাঁর অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন ঘটে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জনসাধারণের মাঝে এবং বিভিন্ন তাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘন ঘন দেখা গিয়েছে ভাচারাসর্নকে। প্রায়শই ব্যাঙ্কক এবং অন্যান্য স্থানে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ‘যুবরাজ’। ২০২৩ সালে প্রথম বার রাজধানীতে পা দেওয়ার পর থেকেই রাজপরিবারে সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায়।
তাইল্যান্ডের প্রাচীন রীতি ও ঐতিহ্য হল, রাজপরিবারের পুরুষ সদস্যদের সাময়িক সময়ের জন্য সন্ন্যাস জীবন ধারণ করতে হয়। বিশেষত জনসাধারণের প্রতিনিধি বা রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের আগে। তাইল্যান্ডের প্রাচীন রীতি মেনে সন্ন্যাসজীবনও পালন করেছেন ভাচারাসর্নের বাবা মহা বাজিরালংকর্ণ। ১৯৭৮ সালে তিনি দু’সপ্তাহের জন্য এক বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন।
ভাচারেসর্নের অভিষেক অনুষ্ঠানের দিন হিসাবে বুদ্ধপূর্ণিমাকে বেছে নেওয়ার মধ্যে জোরালো সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক বার্তা রয়েছে বলে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের মত। তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠান জনসমক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই অভিষেক অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে। এটি রাজপরিবারের নজর এড়ায়নি। ভাচারাসর্নকে গোপনে রাজকীয় কাজে ফিরিয়ে আনার জন্য এটি একটি পরিকল্পিত ইঙ্গিত হতে পারে বলে মনে করছেন সে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজকীয় পদ থেকে পদচ্যুত হওয়ার পরও কেন এত দিন পর নির্বাসিত পুত্রের প্রতি নজর দিতে শুরু করলেন রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ? চার বিবাহ সত্ত্বেও কি তাঁর উত্তরাধিকারের অভাব পড়ল? জানতে গেলে নজর দিতে হবে রাজার বর্ণাঢ্য জীবনযাত্রার দিকে। রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ পরিচিত ‘রাজা দশম রাম’ নামেও। তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালের ২৮ জুলাই। বাবা রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তিনি।
বাজিরালংকর্ণের পড়াশোনা প্রথম থেকে শেষ অবধি পুরোটাই ইংল্যান্ডে। এর পর তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও ক্যানবেরার নামী প্রতিষ্ঠান থেকে সেনার প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে তিনি প্রথামাফিক সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরতও ছিলেন।
১৯৭৭ সালে বাজিরালংকর্ণ বিয়ে করেন তাঁর আত্মীয়া সোওয়ামসায়ালি কিতিয়াকারাকে। সে বছরেই জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র মেয়ে বজ্রকিতিয়াভার। সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হিসাবে রাজকুমারী বজ্রকিতিয়াভার নাম উঠে আসার কথা। তাইল্যান্ডের আইন অনুযায়ী মহিলা উত্তরাধিকারীদের সিংহাসনে বসার অধিকার নেই। তা ছাড়া ২০২২ সাল থেকে তিনি কোমায় রয়েছেন। তাঁর অবস্থা সম্পর্কে কোনও সঠিক তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি যুবরাজ বাজিরালংকর্ণ লিভ ইন শুরু করেন অভিনেত্রী যুবধিদা পলপ্রাসার্থের সঙ্গে। জন্ম হয় তাঁদের পাঁচ সন্তানের। এই দম্পতির চার ছেলে এবং এক মেয়ে। কিন্তু দীর্ঘ দিন তাঁকে ডিভোর্স দেননি স্ত্রী কিতিয়াকারা। তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৪ সালে যুবধিদা পলপ্রাসার্থকে বিয়ে করেন বাজিরালংকর্ণ। বিয়ের পরে যুবরানির নতুন নাম হয় সুজারিনী ভিভাচারাওয়ংসে।
বিয়ের দু’বছর পরে সন্তানদের নিয়ে সুজারিনী নিজের নতুন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জেরে পালিয়ে যান আমেরিকায়। পরে বাজিরালংকর্ণ তাঁর কন্যাকে তাইল্যান্ডে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলেন। কিন্তু চার ছেলে থেকে যান তাঁদের মায়ের সঙ্গেই। এই চার ছেলের মধ্যেই রাজার দ্বিতীয় পুত্র হলেন ভাচারাসর্ন। বাকি সন্তানদের পরিচয় এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
১৪
২০০১ সালে তৃতীয় বিয়ে করেন বাজিরালংকর্ণ। এ বার তাঁর স্ত্রী শ্রীরশ্মি সুওয়াদি ছিলেন সাধারণ তাই-নাগরিক। বিয়ের চার বছর পর তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তাঁর নাম দীপাঙ্কর্ন রাসমজোতি। কিন্তু রাজপুত্র দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে তাঁকে মনোনীত করা সম্ভব নয় বাজিরালংকর্ণের।
২০১৯-এ রাজ্যাভিষেকের তিন দিন আগে চতুর্থ বিয়ে করেন বাজিরালংকর্ণ। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি পাণিগ্রহণ করেন ব্যক্তিগত রক্ষী দলের উপপ্রধান সুথিদাকে। সুথিদা তিদজাই আগে ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট ছিলেন। ২০১৪ সালে রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ তাঁকে ব্যক্তিগত রক্ষী দলের ডেপুটি কমান্ডার নিযুক্ত করেন।
সুথিদার এখনও পর্যন্ত কোনও সন্তান নেই। যদি শেষ পর্যন্ত যুবরাজ দীপাঙ্কর্ন রাজ্যভার সামলানোর অনুপযুক্ত বলে প্রমাণিত হন এবং সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে কোনও মহিলা উত্তরাধিকারীর ব্যবস্থা না করা হয়, তবে ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভাচারাসর্নের। রাজাদেশ জারি করে তাঁকে আবার রাজপরিবারে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
পৃথিবীতে অসংখ্য ধনী ব্যক্তি আছেন। কিন্তু তাইল্যান্ডের রাজা মহা বাজিরালংকর্ণের মতো রাজকীয় ভাবে খরচ করার মতো বিত্তশালী কমই আছেন। অমিতব্যয়ী হিসাবে পরিচিতি রয়েছে তাঁর। তাইল্যান্ডের রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ বিপুল সম্পত্তির মালিক। তবে বিলাসবহুল এবং রঙিন জীবনযাপনের জন্যই খবরের শিরোনামে বেশি উঠে এসেছেন তিনি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাজিরালংকর্ণের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩.৭ লক্ষ কোটি টাকা।