ইসলামে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

আপলোড সময় : ১২-০৬-২০২৫ ০২:৫১:৫০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১২-০৬-২০২৫ ০২:৫১:৫০ অপরাহ্ন
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষকে শুধু ইবাদত শেখায় না; বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র ব্যক্তিগত, সামাজিক, পরিবেশগত সবকিছুর সুস্থতা ও ভারসাম্য রক্ষা করতে শেখায়।

পরিচ্ছন্নতা ইসলামের মৌলিক নীতিগুলোর একটি, যা কুরআন ও হাদিসে ব্যাপক গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। বিশেষত কোরবানির সময় যখন প্রচুর পশু জবাই হয়, তখন এই পরিচ্ছন্নতার দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
 
ইসলামে পরিচ্ছন্নতার মর্যাদা 
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ  নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা২২২)  আর তোমার পোশাককে পবিত্র রেখো। (সুরা মুদ্দাসসির:৪)
 
এই আয়াতগুলোতে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়, শারীরিক, বস্ত্রগত ও পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ  পবিত্রতা হলো ইমানের অর্ধেক। (সহিহ মুসলিম:২২৩) إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ يُحِبُّ الطَّيِّبَ، نَظِيفٌ يُحِبُّ النَّظَافَةَ নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে ভালোবাসেন; তিনি পরিচ্ছন্ন, পরিচ্ছন্নতাকেও ভালোবাসেন। (সুনানুত তিরমিজি: ২৭৯৯)

কোরবানির সময় পরিচ্ছন্নতা রক্ষার ইসলামি নির্দেশনা
কোরবানির মূল লক্ষ্য তাকওয়া অর্জন। لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُم আল্লাহর কাছে এসব (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত পৌঁছে না, বরং তোমাদের পক্ষ থেকে পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া। (সুরা হজ২২:৩৭)
 
তাই কোরবানিকে শুধু পশু জবাই মনে না করে তাকওয়ার প্রকাশ হিসেবে দেখতে হবে, যার অন্তর্ভুক্ত হলো পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও মানুষকে কষ্ট না দেওয়া।

পরিবেশদূষণ ও মানুষের কষ্ট
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 
اتَّقُوا اللَّاعِنَيْنِ، قالوا: وما اللَّاعِنَانِ يا رسول الله؟ قال: الَّذي يَتَخَلَّى في طَريقِ النَّاسِ أو في ظِلِّهِمْ দুটি অভিশপ্ত কাজ থেকে বাঁচো। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহুর রসুল কী সেই দুটি কাজ? তিনি বললেন; এমন জায়গায় পায়খানা করা যেখানে মানুষ চলাচল করে বা ছায়া গ্রহণ করে। (সহিহ মুসলিম: ২৬৯) 

যে কাজ মানুষের জন্য কষ্টদায়ক, ইসলাম তা নিষিদ্ধ করেছে। কোরবানির রক্ত, গোশতের আবর্জনা ও হাড়গোড় যত্রতত্র ফেলা মানুষের চলাফেরা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই এগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা একটি ইসলামি কর্তব্য।

কোরবানির সময় পরিচ্ছন্নতা বাস্তবায়নের করণীয়
১. নির্ধারিত স্থান বা স্লটার হাউজ ব্যবহার করা, যেন রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি ও খোলা জায়গায় রক্ত বা বর্জ্য ছড়িয়ে না পড়ে।
২. আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা ও মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া, নজীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে যুগে অনেক সময় রক্ত মাটিচাপা দেওয়া হতো। এই সুন্নাহ  অনুসরণযোগ্য।
৩. পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা রাখা, কোরবানির স্থান ও চারপাশ পরিষ্কার করে ফেলা, জীবাণুনাশক ব্যবহার ইত্যাদি। ৪. পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার খেয়াল রাখা। যেন রক্ত বা আবর্জনা পানির উৎসে না মেশে।

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 
كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ  তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করবে। (সহিহ বুখারি:৮৯৩) 

তাই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, প্রশাসন, সবাইকে কোরবানির সময় পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে পরিচ্ছন্নতা কোনো গৌণ বিষয় নয়; বরং ইমান ও তাকওয়ারই একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। 
 
কোরবানির সময় আমরা শুধু পশু জবাইয়ের আনুষ্ঠানিকতায় না মেতে উঠে এর পরিবেশগত, সামাজিক এবং আত্মিক শিক্ষাও অনুধাবন করি। পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে কোরবানিকে একটি সৌন্দর্যমণ্ডিত, সুস্থ ও বরকতময় ইবাদতে পরিণত করি।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]