নামাজের উপকারিতা ও ফজিলত

আপলোড সময় : ১৭-০৬-২০২৫ ০৪:০১:২০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৭-০৬-২০২৫ ০৪:০১:২০ অপরাহ্ন
নামাজে রয়েছে আত্মিক প্রশান্তি। এটি ইসলামের অন্যতম মূল স্তম্ভ। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অনন্য মাধ্যম। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা গুনাহ থেকে মুক্তির পথ ও ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের সোপান। এটি সঠিকভাবে আদায় করলে একজন মুমিন তার হৃদয়ে শান্তি খুঁজে পান, আর কিয়ামতের দিন তার মুক্তির পাথেয়।

১. নামাজ হিফাজত বা সংরক্ষণকারীর জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হলো যে, তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন: নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 
আল্লাহ বান্দার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন, যে তা হিফাযত করল তার জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হলো যে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, ইবন মাজাহ) 

২. যে ব্যক্তি  নামাজের হিফাজত করল তার জন্য নামাজ জ্যোতি ও প্রমাণ হবে: অর্থাৎ নামাজ তার ঈমানের দলিল হবে এবং কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের কারণ হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
 
যে নামাজের হিফাজত করল নামাজ তার জন্য জ্যোতি, প্রমাণ ও কিয়ামতের দিন মুক্তির কারণ হবে। 

৩.  নামাজ বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার মাধ্যম: আল্লাহ তাআলা বলেন,
 
وَٱسۡجُدۡۤ وَٱقۡتَرِب﴾ [العلق আর সাজদাহ কর ও (আমার) নিকটবর্তী হও। (সুরা আল-আলাক ১৯) 

অর্থাৎ আল্লাহর উদ্দেশ্যে  নামাজ আদায় কর এবং সমস্ত সৎ কাজের মাধ্যমে তার নৈকট্য লাভ কর, আর সৎ কাজের মধ্যে আল্লাহর জন্য সাজদাহ হচ্ছে সবচেয়ে বড়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা স্বীয় রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় সাজদাহ অবস্থায়। অতএব, তোমরা সাজদায় বেশি-বেশি দোয়া কর। (সহিহ মুসলিম ও নাসাঈ)
 
নামাজই হচ্ছে আপনার ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক গড়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। অতএব, আপনি যদি চান তবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে (নামাজের মাধ্যমে) বেশি-বেশি সাজদাহ ও রুকুর মাধ্যমে এ সম্পর্ক বৃদ্ধি করুন। এজন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে বেশি-বেশি দো‘আ করার অসিয়ত করেছেন।
 
নামাজ গুনাহ ও মন্দ কাজের কাফ্ফারা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি নামাজের ওয়াক্ত পেল আর নামাজের জন্য উত্তমরূপে অজু করল যথাযথ খুশু-খুজু নিয়ে নামাজ আদায় করল, ঠিকমতো রুকু করল। এ নামাজ তার বিগত গুনাহের কাফ্ফারা হবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হবে। আর এই ফজিলত সব সময়ের জন্য। (মুসলিম)
 
উক্ত হাদিসের শেষ অংশের দিকে লক্ষ্য করুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হবে কেননা কবিরা গুনাহ খাঁটি ও আন্তরিক তওবা ব্যতীত মাফ হবে না।
 
৫. নামাজ সর্বোত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত: আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন: 
 
সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বলেন, সময়মতো  নামাজ আদায় করা। হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ বলেন, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, পিতামাতার সাথে সৎ ব্যবহার করা”। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেন, আমি বললাম: তারপর কী? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম) 

৬.  নামাজের মধ্যে রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন আত্মিক প্রশান্তি-আরাম এবং চক্ষু শীতলতা: আল্লাহ বলেন, 
 
أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ﴾ [الرعد জেনে রাখ! আল্লাহর যিকিরেই আত্মা প্রশান্ত হয়। (সুরা আর-রাদ ২৮) 

আর সম্পূর্ণ  নামাজই আল্লাহর জিকির বরং নামাজ আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রবর্তন করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكۡرِيٓ আমার জিকিরের (স্মরণের) জন্য নামাজ প্রতিষ্ঠা কর। (সুরা ত্বাহা ১৪)

এ জন্যই মুসলিমগণ নামাজের মধ্যে অর্জন করে সুখ-শান্তি ও আরাম। আর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, ‘উঠো বিলাল এবং আমাদেরকে নামাজের মাধ্যমে আরাম পৌঁছাও। (মুসনাদে আহমদ) এবং নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার চক্ষু প্রশান্তি নামাজের মধ্যে নিহিত রয়েছে। (সুনান নাসাঈ)
 
পক্ষান্তরে নামাজ পরিত্যাগকারী হলো আল্লাহর জিকির (নামাজ) বিমুখ, আর আল্লাহ তাআলা তার জিকির থেকে বিমুখদের জন্য তার জীবন-যাপন সংকুচিত করার ওয়াদা করেছেন। তিনি বলেন, 
 
وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্য তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। (সুরা ত্বাহা, আয়াত: ১২৪) 

এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, আমরা সাধারণত নামাজে অলসতাকারীদেরকে দেখতে পাবো যে, তারা আত্মিক অস্থিরতা, স্নায়ুর চাপ ও নানা ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে।
 
নামাজ শুধু একটি ফরজ ইবাদতই নয়, বরং এটি মুমিনের জীবনের প্রতিটি ধাপে সাফল্য ও প্রশান্তির একমাত্র সোপান। নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানা আমাদের দায়িত্ব। নামাজ যথাযথভাবে আদায় করা আমাদের পরকালীন মুক্তির মাধ্যম। ইহকালে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা, আত্মিক শান্তি লাভ করা আর আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য নামাজের কোনো বিকল্প নেই। তাই, সময়মতো খুশু-খুযু সহকারে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালের সফলতার চেষ্টা করা উচিত।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]