ইরানের সুরক্ষিত পাতালঘর ধ্বংসে ১৪০০০ কেজির মার্কিন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ চাইছে ইজরায়েল!

আপলোড সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ১২:৫৪:০৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ১২:৫৪:০৪ অপরাহ্ন
ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ এখনও চলছে। বুধবার তা পা দিয়েছে ষষ্ঠ দিনে। দু’পক্ষই একে অন্যকে আক্রমণ করছে। গত শুক্রবার থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ ভেঙে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইরানের বিরুদ্ধে। আর সেই কারণেই এই হামলা বলে জানিয়েছে ইজরায়েল।

ইরান দ্রুত পরমাণু বোমা তৈরি করার জায়গায় চলে আসবে বলে আশঙ্কা করছে ইজরায়েল। যদিও ইরানের দাবি, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্যই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি চলছে।

এই আশঙ্কা থেকেই ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে গত শুক্রবার হামলা চালায় ইজরায়েল। প্রত্যাঘাত করে ইরানও। দু’পক্ষই একে অন্যের উপর লাগাতার হামলা চালাতে শুরু করে। শুরু হয় সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষ এখনও চলছে। সংঘর্ষের আবহে পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এই সংঘাতের পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে এসেছে চাঞ্চল্যকর অন্য এক তথ্য। তেহরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পরমাণুকেন্দ্র উড়িয়ে দিতে নাকি বন্ধু আমেরিকার দ্বারস্থ হতে পারে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার।

খবর, তেহরানের ওই সুরক্ষিত পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বাঙ্কার ধ্বংসকারী বোমা ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) খুঁজছে ইজরায়েল। আর সে কারণেই নাকি আমেরিকার দ্বারস্থ হতে পারে দেশটি। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বা এমওপি হল একটি ৩০ হাজার পাউন্ডের (প্রায় ১৩,৬০৯ কেজি) বোমা, যা রয়েছে মার্কিন বিমান বাহিনীর হাতে। মনে করা হয়, নির্ভুল ভাবে শত্রুপক্ষের ঘাঁটি বা বড় কোনও ব্যবস্থাপনা বা বাঙ্কার ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে সেই বোমার। তাই এর অপর নাম ‘বাঙ্কার বাস্টার’।

সামরিক পরিকাঠামোয় ইজরায়েলি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে মঙ্গলবার মধ্য ইজরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। অন্য দিকে, ইরানের একাধিক পরমাণুকেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে ইজরায়েলও।

তবে ইরানের ‘ফোর্ডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’কে এখনও বাগে আনতে পারেনি ইজরায়েল। কারণ, ইরানের ওই পরমাণু কার্যকলাপের কেন্দ্র রয়েছে মাটির নীচে। পাহাড় দিয়ে সুরক্ষিত সেই জায়গা এমন ভাবেই তৈরি যে সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা অনায়াসে সহ্য করে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের ওই সুরক্ষিত পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করতে পারবে শুধুমাত্র ১৪ টন ওজনের এমওপি-ই। কারণ, ২০০ ফুট শক্তিশালী পাথর ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত হানতে সক্ষম আমেরিকার ‘বাঙ্কার বাস্টার’।

ইজরায়েলের কাছে মহাশক্তিশালী সেই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নেই। রয়েছে আমেরিকার হাতে। আর তাই এমওপি পেতে নেতানিয়াহুর সরকার আমেরিকার কাছে ধর্না দিতে পারে বলে খবর।

কিন্তু কী এই এমওপি বা বাঙ্কার বাস্টার? আমেরিকার সেই মহাস্ত্রের পোশাকি নাম ‘জিবিইউ-৫৭এ/বি’। এটি মার্কিন সেনার হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী অপারমাণবিক বোমা। প্রায় ১৪,০০০ কেজি ওজনের বোমাটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার এবং পরমাণুকেন্দ্রের মতো শক্ত বুনিয়াদ অনায়াসে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। মাটির অনেক গভীরে থাকা বাঙ্কারকেও ধ্বংস করতে পারে নিমেষে।

বোয়িংয়ের নকশায় তৈরি এমওপি-র বাইরে রয়েছে একটি শক্তিশালী এবং অতি-সহনশীল ইস্পাতের আবরণ, যা পাথর এবং কংক্রিটের গভীরে প্রবেশ করার সময়ও বোমাটিকে অক্ষত রাখতে সাহায্য করে।

প্রায় ২,৪০০ কেজি বিস্ফোরকে ঠাসা পেলোড বহন করতে সক্ষম ‘বাঙ্কার বাস্টার’। ফলে মাটির গভীরে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে অনায়াসে ধ্বংস করতে পারে বোমাটি। চমকপ্রদ তথ্য হল, মাটির গভীরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পরেই বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। ফলে, ক্ষতি হয় সর্বাধিক।

কী ভাবে কাজ করে এমওপি? ‘বাঙ্কার বাস্টারে’ জিপিএস এবং ‘ইনর্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম’ থাকায় লক্ষ্যবস্তুকে খুঁজে বার করে নির্ভুল ভাবে আঘাত হানতে পারে বোমাটি। কঠিন যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও লক্ষ্যবস্তুর কয়েক মিটারের মধ্যেই আঘাত করে বোমাটি।

জানা গিয়েছে, ২০০ ফুট বা প্রায় ৬০ মিটার পর্যন্ত শক্তিশালী মাটি বা কংক্রিটের দেওয়াল ভেদ করে হামলা চালাতে পারে ‘বাঙ্কার বাস্টার’।

কিন্তু এত ভারী বোমা লক্ষ্যবস্তু পর্যন্ত উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া মুখের কথা নয়! ‘বি-২ স্পিরিট’ স্টেল্‌থ বোমারু বিমানই বর্তমানে মার্কিন বহরে থাকা একমাত্র বিমান যা এমওপি বহন করতে এবং নিক্ষেপ করতে সক্ষম। প্রতিটি বি-২ সর্বোচ্চ দু’টি এমওপি বহন করতে পারে।

২০০০ সালের গোড়ার দিকে নর্থরপ গ্রুম্যান এবং লকহিড মার্টিন প্রথম এমওপি তৈরি করার কাজে হাত লাগিয়েছিল। কিন্তু পরে সেটি তৈরিতে বাদ সাধে প্রযুক্তি এবং অর্থ। সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয় ‘বাঙ্কার বাস্টার’ তৈরির কাজ।

২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের সময় মাটির গভীরে থাকা বাঙ্কার ধ্বংস করার জন্য তাবড় কোনও অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আমেরিকা। আবার এমওপি তৈরিতে হাত লাগায় ওয়াশিংটন।

এমওপি তৈরির পর বোমাটিকে নিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বি-৫২ এবং বি-২ থেকে সফল ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল ‘বাঙ্কার বাস্টারের’। ২০১১ সালে মার্কিন বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয় এই অস্ত্র।

২০১২ সালে হলোম্যান বিমানঘাঁটি এবং হোয়াইট স্যান্ডসে আরও কয়েকটি পরীক্ষা করা হয় এমওপি নিয়ে। সেই বোমাগুলিও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল। সে বছর পেন্টাগনের একটি গোপন রিপোর্টে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারগুলি ধ্বংস করার ক্ষেত্রে এমওপি-র কার্যকারিতাও নাকি নিশ্চিত করা হয়েছিল।

‘বাঙ্কার বাস্টারের’ উপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আমেরিকার। আর কোনও দেশের হাতে সেই অস্ত্র নেই। মাটির নীচে থাকা ইরানের সুরক্ষিত পরমাণুকেন্দ্রকে গুঁড়িয়ে দিতে সেই অস্ত্রই নাকি হাতে চাইছে ইজরায়েল। আর সেই কারণেই তারা আমেরিকার দ্বারস্থ হতে পারে বলে খবর।

মঙ্গলবারও ইরান এবং ইজরায়েল দুই দেশই একে অন্যের উপর হামলা চালিয়েছে। দু’পক্ষই অভিযোগ করছে, তাদের সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ইরানে ২২৪ জন এবং ইজ়রায়েলে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

এরই মধ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সতর্কবার্তা ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সকলকে ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে দ্রুত অন্যত্র সরে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই তেহরান থেকে পালাতে শুরু করেছেন।

সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, অনেক তেহরানবাসী রাজধানী শহর ছেড়ে ইরানের উত্তর প্রান্তে আশ্রয় নিয়েছেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির চেয়েও বড় কিছু ঘটতে চলেছে। তবে তিনি কিসের কথা বলেছেন, তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]