কৃত্রিম উপগ্রহ ‘ঢেকে দিচ্ছে’ সূর্যকে! পৃথিবীর বুকে অকাল গ্রহণ! নকল পূর্ণগ্রাস তৈরি করে ফেললেন বিজ্ঞানীরা, কী ভাবে?

আপলোড সময় : ২০-০৬-২০২৫ ০৮:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২০-০৬-২০২৫ ০৮:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন
সূর্যকে ‘ঢেকে ফেলছে’ মানুষের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট)। পৃথিবীর বুকে অকালেই দৃশ্যমান হল পূর্ণগ্রাস গ্রহণ! সেই অসাধ্যই সাধন করে দেখিয়েছেন ইউরোপের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। সৌজন্যে তাঁদের নতুন মহাকাশ অভিযান ‘প্রোবা-৩’। এই অভিযানে দু’টি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম ভাবে সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ তৈরি করেছেন। সূর্যের বাইরের স্তর করোনা-র আরও নিকট এবং আরও স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ সম্ভব এই নকল গ্রহণের মাধ্যমে। নিয়মিত এই নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে তাই মুখিয়ে আছেন বিজ্ঞানীরা। মনে করা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে বার বার কৃত্রিম গ্রহণ তৈরি করা গেলে সূর্য সংক্রান্ত গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে। অচিরেই উন্মোচিত হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রের অনেক অজানা রহস্য।

সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর এবং পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের নিরন্তর প্রদক্ষিণের ফলে গ্রহণ হয়। সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে কখনও একই সরলরেখায় চলে আসে। তখন চাঁদের ছায়া পড়ে পৃথিবীর উপর। যে হেতু চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে থাকে, তার ছায়ায় সূর্যের কোনও অংশই আর দেখতে পাওয়া যায় না। তখন হয় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।

কী ভাবে কৃত্রিম পূর্ণগ্রাস হল?

ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) গত ১৬ জুন কৃত্রিম পূর্ণগ্রাস গ্রহণের ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, সূর্যের মাঝের অংশ কালো ছায়ায় সম্পূর্ণ ঢাকা। তার চারপাশ থেকে বেরোচ্ছে সবুজ আভা। সাধারণ পূর্ণগ্রাস গ্রহণের সময়েও একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। কেবল ছায়ার চারপাশে সূর্যের আভার রং সে ক্ষেত্রে সবুজ থাকে না। ইএসএ-র ‘প্রোবা-৩’ অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছে দু’টি স্যাটেলাইট— করোনাগ্রাফ এবং অকালটার। পৃথিবীর বাইরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরস্পরের থেকে ১৫০ মিটার দূরত্বে এদের অবস্থান। কৃত্রিম গ্রহণ তৈরি করতে অকালটারের মধ্যে থাকা চাকতি সূর্যের মাঝের অংশকে ঢেকে দেয়। তার ছায়া গিয়ে পড়ে করোনাগ্রাফে রাখা যন্ত্রের উপর। তার মাধ্যমেই কৃত্রিম ভাবে সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ চাক্ষুষ করেছেন বিজ্ঞানীরা। বেলজিয়ামের রয়্যাল অবজ়ারভেটরির প্রধান তদন্তকারী অ্যান্ড্রেই জ়ুকোভ বলেছেন, ‘‘ছবিগুলি দেখে আমি রোমাঞ্চিত হয়েছি। এটাই ছিল আমাদের প্রথম চেষ্টা। প্রথমেই এতটা সাফল্য পাব, ভাবতে পারিনি।’’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ‘প্রোবা-৩’ অভিযান শুরু করেছিল ইএসএ। করোনাগ্রাফ এবং অকালটার স্যাটেলাইটকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল নির্দিষ্ট কক্ষপথে। গত মার্চে এই দুই স্যাটেলাইট নিজেদের মধ্যে ১৫০ মিটার দূরত্ব রেখে পৃথক হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা স্যাটেলাইট দু’টি পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যগ্রহণ তৈরির জন্য অকালটার স্যাটেলাইটে যে চাকতিটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা। অকালটারের ঠিক পিছনে ১৫০ মিটার দূরে ছিল করোনাগ্রাফ। সূর্য ঢাকা পড়ে যাওয়ার পর করোনাগ্রাফের অপটিক্যাল যন্ত্রগুলিতে আট সেন্টিমিটারের ছায়া পড়েছিল। তাতেই হয় বাজিমাত! সূর্যের করোনা স্তরের স্পষ্ট চিত্র ধরা পড়ে স্যাটেলাইটের ক্যামেরায়।

প্রাকৃতিক গ্রহণের সঙ্গে তফাৎ

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জ়ুকোভ বলেন, ‘‘সাধারণ প্রাকৃতিক গ্রহণের সময়ে যে ধরনের ছবি ওঠে, আমাদের এই কৃত্রিম গ্রহণের ছবিগুলি তার পাশে রেখে তুলনা করা যায়। তফাৎ একটাই। এই ধরনের গ্রহণ আমরা প্রতি ১৯.৬ ঘণ্টা অন্তর এক বার করে ঘটাতে পারব। প্রাকৃতিক উপায়ে সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ এত ঘন ঘন হয় না। বরং তা বেশ বিরল। সাধারণত পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ এক বছরে বা দেড় বছরে এক বার হয়। তা ছাড়া, প্রাকৃতিক গ্রহণ মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। ফলে দীর্ঘ ক্ষণ সূর্যের গ্রহণকালীন অবস্থার পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয় না। ‘প্রোবা-৩’ অভিযানের মাধ্যমে আমরা অন্তত ছ’ঘণ্টা পূর্ণগ্রাস গ্রহণ ধরে রাখতে পারব।’’

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই কৃত্রিম গ্রহণ

সূর্য নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, ‘প্রোবা-৩’ অভিযানের সাফল্য তাঁদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের করোনা স্তরটি নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর অধরা থেকে গিয়েছে। সবচেয়ে বাইরের দিকের অংশ হলেও করোনার তাপমাত্রা সূর্যের কেন্দ্রের চেয়ে বেশি। সাধারণত করোনা স্তরটিকে দেখা যায় না। সূর্যের আলোয় তা ঢেকে থাকে। একমাত্র পূর্ণগ্রাস গ্রহণের সময়েই এই স্তরটি দেখতে পান বিজ্ঞানীরা। করোনার নিরবচ্ছিন্ন এবং বিপুল তাপমাত্রার রহস্য ভেদ করতে সাহায্য করবে ‘প্রোবা-৩’। কারণ এর ফলে দীর্ঘ ক্ষণ করোনা স্তরটিকে বিজ্ঞানীরা দেখতে পাবেন। তা নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন। এত দিন এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার জন্য পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের অপেক্ষা করতে হত। এ ছাড়া, করোনা স্তর থেকেই সূর্যের যাবতীয় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়ে থাকে। করোনাল মাস ইজেকশন (সিএমই) এবং সৌরঝড়ে সৌরজগতের আবহাওয়া বিঘ্নিত হয়। কখনও কখনও এই ধরনের তেজস্ক্রিয় কণা পৃথিবীর দিকেও ছুটে আসে। এর ফলে পৃথিবীতে বিদ্যুৎ সঙ্কট, নেটওয়ার্ক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে। কৃত্রিম উপগ্রহের কাজও সৌরঝড়ে ব্যাহত হয়। এই সৌরবাতাসের পর্যবেক্ষণে কৃত্রিম গ্রহণ কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]