তানোরে মাদরাসার ভবন নির্মাণে বাধা উত্তেজনা

আপলোড সময় : ২৩-০৬-২০২৫ ০৯:০৭:১২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৩-০৬-২০২৫ ০৯:০৭:১২ অপরাহ্ন
রাজশাহীর তানোরের গোকুল মথুরা দাখিল মাদরাসার ভবন নির্মাণে গ্রামবাসীর বাধা দিয়েছে। গত ২৩ জুন সোমবার মাদরাসা চত্বরে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গ্রামবাসীর মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানা গেছে,গত ২৩ জুন সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পুলিশ নিয়ে মাদরাসার নতুন একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যায়। এ সময় গ্রামবাসি বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে বাধাদেন। এনিয়ে সেখানে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য কোদাল দিয়ে মাটি কেটে মিস্টি বিতরণ করা হয়। কিন্ত্ত ভেঁকু মেমিন দিয়ে মাটি কাটতে গেলে গ্রামবাসি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা ভেকুর সামনে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ করেন। এনিয়ে মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে গ্রামবাসি বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে সেখানে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এতে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু না করেই কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দগণ ফিরে এসেছেন।

এদিকে গ্র্রামবাসির অভিযোগ, শতবর্ষী খেলার মাঠ দখল করে মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মাঠ কর্তৃপক্ষ রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) কাছে অভিযোগ দাখিল করেছে, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ ছাড়াও রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আগামী ১০ জুলাই এ বিষয়ে একটি শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সোমবার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের আরএস ও এসএ—দুটি খতিয়ানেই মাঠটি গোকুল–মথুরা ফুটবল ক্লাবের সম্পাদকের নামে রয়েছে।

মাঠ কর্তৃপক্ষের দাবি, এই মাঠের প্রায় ৪০ শতাংশ দখল করে স্থানীয় গোকুল-মথুরা দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে মাধ্যমে চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে ঠিকাদার ওই মাঠে নির্মাণসামগ্রী ফেলেছেন।

প্রসঙ্গত,গত ১৪ এপ্রিল এলাকাবাসী ওই মাঠে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন তানোর থেকে রাজশাহী জেলা পরিষদ কার্যালয় অভিমুখে লংমার্চ করেন। একই দিন ঘণ্টাব্যাপী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয় এবং জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। একই দাবিতে ২৫ মে রাজশাহীতে গোকুল-মথুরা ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন ‘স্বপ্নচারী যুব উন্নয়ন সংস্থা’ ও উন্নয়ন গবেষণাধর্মী যুব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ–ইয়্যাস’ রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে।

এদিকে গত ২ জুন মাঠের পক্ষ থেকে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মথুরা ফুটবল ক্লাবের সভাপতি  রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় একটি মামলা করেন। আদালত প্রতিপক্ষের জবাব দাখিল পর্যন্ত অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ১৮ জুন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আদালতে জবাব দাখিল করেন। আদালতে দাখিল করা জবাবে মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল হামিদ ৭ নম্বর কলামে খেলার মাঠের পরিমাণ ‘১ একর ০৬ শতাংশ’ বলে উল্লেখ করেছেন। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ১০ জুলাই। কিন্তু এর আগেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের চেস্টা করেছে।অন্যদিকে গত ৪ জুন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের উন্নয়ন শাখা থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার কল রিসিভ করেননি।

তবে মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট  আবদুল হামিদ গত রোববার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন, তাঁদের ভবন নির্মাণ করলে মাঠের খানিকটা অংশ ভবনের ভেতরে পড়বে। তাহলে কেন ভবন নির্মাণ করছেন, জানতে চাইলে তিনি সাক্ষাতে কথা বলতে চান বলে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।

এবিষয়ে গোকুল মথুরা ফুটবল ক্লাবের সেক্রেটারি হারুন-অর-রশিদ  বলেন, এটি শতবর্ষী খেলার মাঠ। বাংলাদেশ সরকারের এসএ এবং আরএস—দুটি খতিয়ানেই জমিটি খেলার মাঠ হিসেবে উল্লেখ করা আছে। মালিকানা গোকুল-মথুরা ফুটবল ক্লাবের সেক্রেটারির অনুকূলে রয়েছে। এই মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০–এর অধিক টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছে। এ ছাড়া এ মাঠে জানাজা, ঈদের জামাত, ইসলামি মাহফিল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্‌যাপন, ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলা, বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, নবীন-প্রবীণেরা শরীরচর্চা করেন। পাশের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিচরণের জায়গাও এই মাঠ। মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ করা হলে মাঠের প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গা বেদখল হয়ে যাবে। খেলাধুলার জায়গা সংকুচিত হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার রোববার সন্ধ্যায়  বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কাছে একটা অভিযোগ এসেছে। তিনি কাগজপত্র দেখেছেন। জায়গাটি খেলার মাঠের বলে খতিয়ানে উল্লেখ রয়েছে। তিনি তদন্ত করবেন। আপাতত ইউএনওর সঙ্গে কথা বলবেন।

এ বিষয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, জমি মাদ্রাসার হলে সেখানে ভবন নির্মাণ করা উচিত, আর না হলে হলে উচিত নয়।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]