আলোচনায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি, কঠোর আন্দোলন করার ঘোষণা কারিগরি শিক্ষার্থীদের

আপলোড সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০৩:৫৫:৩০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০৩:৫৫:৩০ অপরাহ্ন

ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত কারিগরির শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠকের পর কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয়ে কারিগরি ও মাদরাসার শিক্ষা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। যা চলে প্রায় ৩ ঘণ্টা মতো। বৈঠকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ১৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন।

পরে মাশফিক ইসলাম বলেছেন, আজকের বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। এই বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট নই। ফলে আমরা কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবো। দাবি আদায়ের জন্য আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

জোবায়ের পাটোয়ারী নামে আরেক ছাত্র প্রতিনিধি বলেন, আমাদের আন্দোলন ৮ মাস ধরে চলছে। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে জনদুর্ভোগ তৈরি করছি না। আমাদের বাধ্য করা হয়েছে। আমরা সচিবালয়ে যাওয়ার পরেও এর সমাধান করা হয়নি। আমাদের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা করা হয়েছে। আজকের যে অতিরিক্ত সচিব আমাদের সঙ্গে বসেছেন, তিনি নিজেও জানতেন না যে শিক্ষা উপদেষ্টা থাকার কথা ছিল। তারা অযৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে সময় নষ্ট করেছেন। আমরা দীর্ঘমেয়াদে যেতে চাই না। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হোক। ফলে জনদুর্ভোগ যতটা সম্ভব কমিয়ে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

কারিগরির শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো— জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।

তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

পঞ্চম দাবি, দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।

আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

এসব দাবি আদায়ে গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ঢাকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সারাদেশে জেলায় জেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিন বিকেলে সাতরাস্তা মোড়ে গিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) শোয়াইব আহমাদ খান শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে পদোন্নতিতে ‘ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের’ কোনো কোটা রাখা হবে না বলেও জানান।

তবে, সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেন, প্রত্যেকটি দাবি পূরণে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

পরে ছয় দফা দাবি আদায়ে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে রেলপথ ব্লকেডের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তবে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের আশ্বাসে কর্মসূচি শিথিল করে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]