যেভাবে ফেরাউনের করুণ পরিণতি ঘটে আশুরায়

আপলোড সময় : ০৭-০৭-২০২৫ ০৪:২৮:৩৭ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৭-০৭-২০২৫ ০৪:২৮:৩৭ অপরাহ্ন
চূড়ান্ত জালেম বুঝাতে ফেরাউনের নাম ব্যবহার করা হয়। এর নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ফেরাউন কোনো ব্যক্তির নাম নয়। যুগ যুগ ধরে প্রাচীন গণপ্রজাতন্ত্রী মিসরকে রাজত্ব করা শাসকদের নাম। ‘ফারাও’ হিসেবেও তারা পরিচিত।

মহান আল্লাহ হজরত মুসা (আ.) কে নবুয়ত দিয়ে তার সমকালীন ফেরাউনকে তাওহিদ বা একত্ববাদের দাওয়াত দিতে পাঠিয়েছিলেন। সে ছিল অত্যন্ত দাম্ভিক ও অহংকারী। নিজেকে মিশরীয়দের প্রভু বা খোদা মনে করতো। কোরআনে বহু জায়গায় হজরত মুসা (আ.) কে ফেরাউনের কাছে প্রেরণ, ফেরাউনের ঔদ্ধত্য ও জুলুম, মুসার (আ.) দাওয়াত ও সংগ্রামের ঘটনার বর্ণনা এসেছে।
 
হজরত মুসার (আ.) সমকালীন ফেরাউনের প্রকৃত নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকের মতে এই ফেরাউনের নাম ছিল ‘রামেসিস’, অনেকে বলেন, নবুয়্যত লাভের পর মুসা (আ.) যে ফেরাউনের মুখোমুখি হয়েছিলেন তার নাম ছিল ‘মারনেপতাহ’। অনেকে আবার বলেছেন তার নাম ছিল ‘ওয়ালিদ ইবনে মাসআব ইবনে রাইয়ান’; যে প্রায় চারশ বছর হায়াত পেয়েছিল। 

পবিত্র তুয়া উপত্যকায় মুসা (আ.)-এর ওপর ওহি নজিল হয়। তাকে নবুয়্যত ও মুজিজা দান করা হয় এবং তাকে নির্দেশ দেয়া হয় আল্লাহর দাওয়াত নিয়ে ফেরাউনের কাছে যেতে এবং তাকে দীনের দাওয়াত দিতে। তিনি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ফেরাউনের কাছে যান, তাকে দীনের দাওয়াত দেন। কিন্তু ফেরাউন ঔদ্ধত্য দেখায়, নিজেকেই খোদা দাবি করে।
 
সময় দেয়ার পরও সে তার ঔদ্ধত্য ও জুলুম থেকে নিবৃত্ত হয়নি। মুসা (আ.) যখন বনি ইসরাইল জাতিকে নিয়ে মিশর ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছিলেন, তখনও ফেরাউন তাদের পেছনে ধাওয়া করে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য। মহান আল্লাহ তার এই বেপরোয়া ঔদ্ধত্য ও জুলুম পছন্দ করেননি। তিনি ফেরাউনের তাড়া খেয়ে ছুটতে থাকা বনি ইসরাইল জাতিকে লোহিত সাগর দুই ভাগ করে ফিলিস্তিনের দিকে চলে যাওয়ার রাস্তা করে দেন এবং ফেরাউনকে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে মারেন।
 
পবিত্র কোরআনের সুরা নাজিয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, 
هَلۡ اَتٰىكَ حَدِیۡثُ مُوۡسٰی - اِذۡ نَادٰىهُ رَبُّهٗ بِالۡوَادِ الۡمُقَدَّسِ طُوًی - اِذۡهَبۡ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ اِنَّهٗ طَغٰی - فَقُلۡ هَلۡ لَّكَ اِلٰۤی اَنۡ تَزَكّٰی - وَ اَهۡدِیَكَ اِلٰی رَبِّكَ فَتَخۡشٰی- فَاَرٰىهُ الۡاٰیَۃَ الۡكُبۡرٰی - فَكَذَّبَ وَ عَصٰی - ثُمَّ اَدۡبَرَ یَسۡعٰی - فَحَشَرَ فَنَادٰی - فَقَالَ اَنَا رَبُّكُمُ الۡاَعۡلٰی - فَاَخَذَهُ اللّٰهُ نَكَالَ الۡاٰخِرَۃِ وَ الۡاُوۡلٰی  اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَعِبۡرَۃً لِّمَنۡ یَّخۡشٰی   

অর্থ: মুসার বৃত্তান্ত আপনার কাছে পৌঁছেছে কি? যখন তার রব তাকে পবিত্র তুয়া উপ্যকায় ডেকে বলেছিলেন, ফেরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। তাকে বল, তুমি পবিত্র হতে আগ্রহী কি না? আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাকে ভয় কর। সে (মুসা) তাকে মহা-নিদর্শন দেখাল। কিন্তু সে মিথ্যারোপ করল এবং অমান্য করল এবং আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণে সচেষ্ট হলো। সে সকলকে সমবেত করল এবং সজোরে চিৎকার করে বলল, আমিই তোমাদের সেরা রব। ফলে আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের শাস্তি দিলেন। যে ভয় করে তার জন্যে অবশ্যই এতে শিক্ষা রয়েছে। (সুরা নাজিয়াত: ১৫-২৬)
 
পবিত্র কোরআনের সুরা ইউনুসে ফেরাউনকে ডুবিয়ে মারার ঘটনা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন, 
وَ جٰوَزۡنَا بِبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتۡبَعَهُمۡ فِرۡعَوۡنُ وَ جُنُوۡدُهٗ بَغۡیًا وَّ عَدۡوًا ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَدۡرَكَهُ الۡغَرَقُ ۙ قَالَ اٰمَنۡتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِیۡۤ اٰمَنَتۡ بِهٖ بَنُوۡۤا اِسۡرَآءِیۡلَ وَ اَنَا مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ - آٰلۡـٰٔنَ وَ قَدۡ عَصَیۡتَ قَبۡلُ وَ كُنۡتَ مِنَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ - فَالۡیَوۡمَ نُنَجِّیۡكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوۡنَ لِمَنۡ خَلۡفَكَ اٰیَۃً ؕ وَ اِنَّ كَثِیۡرًا مِّنَ النَّاسِ عَنۡ اٰیٰتِنَا لَغٰفِلُوۡنَ  

অর্থ: আমি বনি ইসরাইল বংশকে সাগর পার করে দিলাম আর ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলো। যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন (ফেরাউন) বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই যার ওপর ঈমান এনেছে বনি ইসরাইল; আমিও তারই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (আল্লাহ বললেন) এখন একথা বলছ! অথচ তুমি (ডুবতে শুরু করার) পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত নাফরমানি করছিলে এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে। আজকের দিনে আমি শুধু তোমার দেহ রক্ষা করবো যেন তা পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। নিঃসন্দেহে বহু মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে উদাসীন। (সুরা ইউনুস: ৮৮-৯২)
 
এ ঘটনা ঘটেছিল ১০ মহররম পবিত্র আশুরার দিন। ইমাম বুখারি (রহ.) সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদিনায় পৌঁছে মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা পালন করতে দেখেন।
 
নবীজি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, এ দিনে কী ঘটেছে যে তোমরা এতে রোজা পালন কর? তারা বলে, এ দিনটি মহান দিন, এ দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আ.) ও তার সঙ্গীদের ফেরাউন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা (আ.) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করি।
 
ইহুদিদের জবাব শুনে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,তাদের তুলনায় আমি হলাম মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। কাজেই তিনি নিজেও এদিন সওম পালন করেছেন এবং এদিন সওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি: ৩৩৯৭)। আশুরার রোজা দুটি রাখতে হয়। 

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]