তানোরে নাবিল গ্রুপের দুষণ সন্ত্রাস, খামার বন্ধের দাবি

আপলোড সময় : ১০-০৭-২০২৫ ০৮:১২:২৫ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১০-০৭-২০২৫ ০৮:১২:২৫ অপরাহ্ন
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী কাঁকনহাট  পৌর এলাকার গড়গড়ায় নাবিল গ্রুপের মুরগি খামারের মুরগির বিষ্ঠার (বর্জ্য) দুর্গন্ধে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। রাঁতের আঁধারে তারা তানোরের বিভিন্ন এলাকায় মুরগীর বিষ্ঠা (বর্জ) ফেলে পরিবেশ দুষণ করছে।

মুরগি খামারের বিষ্ঠা ও পরিবেশ দুষনকারী বর্জ্য প্রতিনিয়ত খোলা স্থানে  ফেলায় ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা খামার বন্ধ অথবা অন্যত্র সরিয়ে নেবার দাবি করেছেন। তারা বলেন,পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ব্যতিত নাবিল গ্রুপ অবৈধভাবে লোকালয়ে মুরগি খামার গড়ে তুলেছেন। ইতমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ বিপর্যয় বন্ধে নাবিল গ্রুপকে চিঠি দিয়েছেন।

স্থানীয় সুত্র জানায়, প্রতিদিন খামার থেকে বিপুল পরিমাণ মুরগির বিষ্ঠা ও বর্জ্য কোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াই বিভিন্ন খাল-বিলের ফেলা হচ্ছে।

তানোর উপজেলার বুরুজ, লব্যাতলা, ধামধুমসহ বিভিন্ন খাড়িতে ফেলা হচ্ছে। এতে খাড়ির পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এবং চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে প্রচন্ড দুর্গন্ধ। ফলে আশপাশের পরিবেশ হয়ে উঠেছে দূষিত ও মানুষের বসবাসের অনুপযোগী।দিনের পর দিন দুষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্থানীয় অধিবাসীরা জানান খামার কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলার পরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ করার পর বর্জ্য ফেলার পরিমাণ আরো বেড়েছে। অথচ আগে এসব বর্জ্য ট্রাকে করে বাইরে সরিয়ে নেওয়া হতো। কিন্তু এখন পরিবহন খরচ বাঁচাতে কিছু অসাধু ব্যক্তি গভীর রাতে  (১টা থেকে ৩টা) তানোর উপজেলার  বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে খাড়ির পানিতে এসব বর্জ্য ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় কিছু গাড়ি চালক নাবিল গ্রুপের কাছে থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মালিকের কথা মতো এ ধরনের পরিবেশ দুষণ ও বিপর্যয়ে লিপ্ত রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান,প্রায় এক সপ্তাহ আগে তানোর-চৌবাড়িয়া রাস্তার মাদারিপুর রাস্তার ধারে গভীর রাতে নাবিলের বর্জ্য ফেলে পালিয়ে যায় একটি ড্রাম ট্রাক।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বিষাক্ত এসব বর্জ্য রাতারাতি কৃষিজমিতে ফেলে আবাদি ফসলের ক্ষতি করছে।। মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার পরিবেশে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও মুক্তি মিলছে না। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকেই শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যা ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা গত ৯ জুলাই বুধবার গভীর রাতে তানোরের বুরুজ গ্রামে মুরগীর বিষ্ঠা ফেলার সময় গ্রামবাসি দুটি ড্রাম ট্রাক আটক করে পুলিশে খবর দেন।পরদিন ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে নাবিল গ্রুপের লোক এসে মুচলেকা দিয়ে ট্রাক দুটি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সরনজাই ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এর আগে খালের পানিতে বর্জ্য ফেলায় গ্রামের অনেক মানুষের হাঁস-মুরগি ও পুকুরের মাছ মরার পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিন রাতে দুটি ড্রাম ট্রাকে করে খাড়িতে আবারো বর্জ্য ফেলার সময় গ্রামবাসি ট্রাক দুটি আটক করে পুলিশে খবর দেন।

পরদিন বৃহস্পতিবার নাবিল গ্রুপের পক্ষে শাহজাহান ও মতিউর রহমান মুচলেকা দিয়ে ট্রাক দুটি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) মুখপাত্র ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, “এই ধরনের বর্জ্য যখন পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে, তখন তা বায়ু দূষণের মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায়। এসব জীবাণু পশু-পাখি ও মানুষের নানা ধরনের রোগের কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।

এবিষয়ে নাবিল গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার (অ্যাকাউন্টস) বেলাল হোসেন বলেন, “এটা ঠিক যে আমরা নিজেরা বর্জ্য ফেলি না, বরং থার্ড পার্টির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। তাদের পরিষ্কারভাবে বলা আছে, আশপাশে কিংবা খোলা স্থানে ফেলা যাবে না। তারা চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরও করেছে। যদি তারা এসব শর্ত ভঙ্গ করে, তবে আমাদেরকে হয়তো চুক্তি বাতিল করতে হতে পারে যাতে করে ভবিষ্যতে এমন কাজ না করা হয়। আমরা চাই না পরিবেশ বা এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক।

এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি এবং কাজ শুরু হয়েছে। আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দিয়েছি। তারা জানিয়েছে, কাজ প্রক্রিয়াধীন। যদি তারা সমাধান না করে, তাহলে সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবিষয়ে শাহজাহানের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কল গ্রহণ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, এলাকাবাসির কাছে তারা লিখিতভাবে  মুচলেকা দিয়ে ট্রাক ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]