তানোরে আলুর বস্তার ভাড়া ১২ টাকা!

আপলোড সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ০১:২৩:২৭ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ০১:২৩:২৭ অপরাহ্ন
রাজশাহীর তানোরের হিমাগারগুলোতে ১২ টাকা করে আলুর বস্তার ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে কৃষকদের মাঝে তীব্রক্ষোভ-অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।কিন্ত্ত প্রতিবাদ করার জায়গা নাই। কৃষকেরা বলছে, এটা জুলাই বিপ্লবের পরিপন্থী, এই জন্য কি জুলাই বিপ্লব হয়েছে।তারা বলেন,জুলাই বিপ্লব হয়েছে সকল সিন্ডিকেট,অনিয়ম-দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে।কিন্ত্ত হিমাগার মালিকগণ সিন্ডিকেট করে অনায্যভাবে কৃষকের পকেট কাটছে। 

জানা গেছে, হিমাগারে রাখা বস্তাসহ ৭০ কেজির এক বস্তা আলু সেডে ঢেলে বাছাই করে কৃষক আলু পাচ্ছে ৫৫ কেজি, তবে হিমাগার বস্তাসহ ৭০ কেজিরই ভাড়া নিচ্ছেন। আবার পচাঁ আলুর দায় হিমাগার না নিলেও ভাড়া ঠিকই নিচ্ছেন। হিমাগার কর্তৃপক্ষ শ্রমিক খরচসহ প্রতি কেজি আলুর ভাড়া নিচ্ছেন ৬ টাকা।এছাড়াও প্রতি বস্তায় সেড ভাড়া ৪৫ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।

কৃষকেরা বলছে, বিগত দিনে বস্তার ভাড়া লাগেনি। ওদিকে হিমাগারে (৭০ কেজি) বস্তায় আলু পাচ্ছেন ৫৫ কেজি ১৫ টাকা কেজি দরে এক বস্তা আলুর দাম ৮২৫ টাকা,আর হিমাগার ভাড়া দিতে হচ্ছে ৪০২ টাকা।ফলে এক বস্তা আলু বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছেন মাত্র ৪২৩ টাকা। 

এদিকে তানোরে চলতি মৌসুমে আলু চাষ করে আলু চাষিরা চরম লোকসানের মুখে পড়ে দেউলিয়া হবার পথে। এ বছর প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ (হিমাগার জাত পর্যন্ত)  ২৫ টাকা। কিন্ত্ত হিমাগারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে। এতে স্টোর ভাড়া বাদে কৃষক পাচ্ছেন প্রতি কেজিতে মাত্র ৫ টাকা, প্রতি কেজিতে লোকসান ২০ টাকা। এক বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা এবং ফলন হয়েছে গড় ৫৫ বস্তা (এক বস্তায় ৭০ কেজি)।এবছর অধিকাংশক্ষেত্রে হিমাগারে আলু রাখতে দালালদের বস্তা প্রতি ১০০ টাকা করে আর্থিক সুবিধা দিতে হয়েছে। সবকিছু মিলে এবছর আলুর উৎপাদন খরচও উঠছে না। এতে আলু চাষিদের মাথায় হাত। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকেরা এবছর আলু চাষ করে অনেকটা দেউলিয়া হবার পথে।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জমি ইজারা, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের মজুরিসহ প্রতিক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে খরচ বেড়েছে। তানোরের তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) কালনা গ্রামের মৌসুমি আলু চাষি ইঞ্জিনিয়ার মাহাবুর রহমান মাহাম বলেন, এবছর তিনি সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করে দেউলিয়া হবার পথে। তিনি বলেন, এবছর এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।তিনি বলেন, গত বছর তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করে দ্বিগুণ লাভ হয়েছিল। এবারো লাভের আশায় সবকিছু বাড়তি দামে কিনে সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্ত্ত ১৫ টাকা কেজি দরে একশ' বস্তা আলু বিক্রি করে তিনি মাত্র ৩০ হাজার টাকা পেয়েছেন। তবে নিজের জমি বলে লোকসান কিছুটা কম হয়েছে।

উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) জমসেদপুর মাঠে ৪ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে চাষি ওলিকে। তিনি জানান সবকিছুর বাড়তি দামের কারনে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছিল প্রায় ৮০ হাজার টাকা করে। বিঘায় ফলন হয়েছিল ৩৪ বস্তা করে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হয়েছে ১৪ টাকা কেজি দরে। ৪ বিঘায় লোকসান প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। একই মাঠে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লাভের আসায় দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষক আনোয়ারকে। ফটিক নামের অপর কৃষক ৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রতি বিঘায় ফলন পেয়েছে ৪০ বস্তা করে।এতে তার বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান হয়েছে। অন্যদিকে সাফিউল দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, সাত বছর পর লাভের আশায় আলু চাষ করে খরচের অর্ধেক টাকাও তুলতে পারেননি। 

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, এবারে আলুর লক্ষমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]