মুমিনের মর্যাদা ও মানব হত্যার ভয়াবহ পরিণতি

আপলোড সময় : ২১-০৭-২০২৫ ০৩:০৭:৪২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২১-০৭-২০২৫ ০৩:০৭:৪২ অপরাহ্ন
জুলুম আরবি শব্দ। জুলুমের অর্থ ব্যাপক। অনেক বিস্তৃত। সাধারনত জুলুম অর্থ নির্যাতন, নিপীড়ন। শরীয়তের পরিভাষায় জুলুম বলা হয়, কোন উপযুক্ত জিনিসকে উপযুক্ত স্থানে না রেখে অনুপযুক্ত স্থানে রাখা। যে জুলুম করে তাকে জালিম বলা হয়। মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে একজন অন্যজনের উপর জুলুম করে। কেউ নিজেই নিজের নফসের উপর জুলুম করে। আবার কেউ পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়ভাবে জুলুম করে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়।

নিজের নফসের উপর জুলুম করা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তাদের প্রতি জুলুম করি নি; বরং তারা নিজেরাই ছিল জালেম। (সুরা যুখরুফ: ৭৬)
 
জুলুমের বিভিন্ন প্রকার ও পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, অন্যায়ভাবে কাউকে মারধর করা, হত্যা করা। যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট কাজ। যারা এ ধরনের কাজ করে। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। কেননা আল্লাহ তায়ালা একজন মুমিনের রক্ত, ইজ্জত-আবরু অন্য মুমিনের উপর হারাম করে দিয়েছেন। কেউ চাইলেই বিনষ্ট করতে পারবে না, শরীয়ত সেই অনুমোদন কাউকে দেয় নি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 
একজন মানুষ মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করবে। একজন মুসলিমের উপর প্রতিটি মুসলমানের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরু হারাম। (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৪)
 
শরিয়ত যাকে হত্যা করা বৈধতা দেয় নি, অর্থাৎ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
 
যে ব্যক্তি নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার দন্ডদান উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণরক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। তাদের নিকট তো আমার রসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণ এনেছিল, কিন্তু এর পরও অনেকে পৃথিবীতে সীমালংঘনকারীই রয়ে গেল। (সুরা মায়িদা: ৩২) 

উক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই মুমিনের যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জান-মাল, ইজ্জত- আবরুর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেছেন‌। তারপরও যারা মুমিনদের উপর জুলুম করে। অন্যায় ভাবে হত্যা করে। তাদেরকে মুমিনের মর্যাদা বোঝাতে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 
রাবী বলেন, ইবনে উমর (রা.) একবার বায়তুল্লাহ বা কাবার দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ কত মর্যাদা তোমার, কত বিরাট তোমার সম্মান! কিন্তু আল্লাহর নিকট মু'মিনের মর্যাদা তোমার চেয়েও বড়। (তিরমিজি: ২০৩২) 

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে নবী (স্ত্রী) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পৃথিবী ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়া আল্লাহর নিকট কোন মুসলমান ব্যক্তির অন্যায়ভাবে নিহত হওয়া অপেক্ষা তুচ্ছতর। (সুনানে নাসায়ি: ৩৯৮৭)
 
এমন একাধিক হাদীস রয়েছে, যেখানে মুমিনের দুনিয়া ও আখেরাতের মর্যাদা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। যারা অন্যায়ভাবে মুমিনের ইজ্জত-আবরু বিনষ্ট করবে। অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, তাদের পরিণতি সম্পর্কে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 
আবু ইদরীস (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়া (রা.) কে খুতবা দিতে শুনেছি, আর তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অতি অল্পই হাদীস বর্ণনা করেছেন। খুতবায় তিনি বলেন,  আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক গুনাহ আশা করা যায় আল্লাহ্ তা ক্ষমা করবেন, তবে ঐ ব্যক্তির গুনাহ ব্যতীত, যে ইচ্ছা করে কোন মুসলমানকে হত্যা করে অথবা কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করে।  সুনাম নাসায়ী: ৩৯৮৪ 

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমানকে গালি দেওয়া গুনাহের কাজ এবং তার সাথে মারামারিতে প্রবৃত্ত হওয়া কুফুরি। (মুসলিম: ১২৫)
 
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জালিমের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরো বলেন, জাবির (রা.) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুলুম করা হতে নিজেকে বাঁচাও, কেননা, কিয়ামতের কঠিন দিনে জুলুম কঠিন অন্ধকাররূপে আত্মপ্রকাশ করবে। মুসলিম: ২৫৭৮ 

জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। যা মর্মান্তিক ও অত্যান্ত যন্ত্রণাদায়। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]