ডাস্টবিনের দূগন্ধে অতিষ্ট রাজশাহী নগরবাসী; শিক্ষার্থী ও পথচারীদের ক্ষোভ

আপলোড সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৪:৪৭:৪১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৪:৪৭:৪১ অপরাহ্ন
গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি ও শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহী মহানগরীতে ডাস্টবিনের পাগল করা দূগন্ধে অতিষ্ট পথচারী, দোকানী, ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নর্দান ইউনিভার সিটি রাজশাহী আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় ও রাণীনগর নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়, শিমুল মেমোরিয়াল স্কুল ও রুয়েট। এছাড়াও এই সড়ক দিয়েই যেতে হয় রাজশাহী নগরীর ভদ্রা ও শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে। অথচো এরই সড়ক ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রুয়েটের প্রাচি সংলগ্ন বিশাল অকাশের একটি ময়লার ডাস্টবিন তৈরী করা হয়েছে। এই ডাস্টবিনের ভেতরে সড়কের ধারে পঁচা দূর্গন্ধ যুক্ত ময়লার স্তুপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এই ডাস্টবিনের পাগল করা দূর্গন্ধ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়াচ্ছে। ফলে রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়া সাধারণ পথচারী শিক্ষার্থী ও যানবাহনের যাত্রীরা পড়েছে চরম বেকায়দায়। নাকে রুমাল কাপড় দিয়েও দূগন্ধ ঠেকানো যাচ্ছে না। অপরদিকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বাকুল জানায়, আদর্শ স্কুলের পাশেই আমার বাড়ি। এই এলাকার বাসিন্দারা এই পথ ধরেই বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকি। কিন্তু এই ডাস্টবিনের দুগন্ধ এতই প্রকট যে, নাকে কোন কিছু ব্যবহার করেও লাভ হয়না, পাগল করা দূগন্ধে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, স্থানটি দিয়ে এক প্রকার দৌঁড়ে যেতে হয়। তিনি দাবি করে বলেন, যদি সিটি কর্পোরেশন এই ডাস্টবিন ভালো ভাবে ম্যানেজমেন্ট করতে না পারে, তাহলে ডাস্টবিনটি এখান থেকে সরিয়ে যেন অন্য জায়গায় নিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আবির হাসান রয়েল বলেন, এই ডাস্টবিনের সামনেই রয়েছে একটি আদর্শ স্কুল যার নাম করেই এই ডাস্টবিনের নাম করণ করেছে তারা। এত সাহস তারা কোথায় পায়? একটা বিদ্যালয়ের নামে তারা ডাস্টবিনের নামকরণ করে। আমরা সাধারণত জেনে থাকি ডাস্টবিন জনশুণ্য স্থানে নির্মাণ করা হয়ে থাকে, তাহলে কেন এত জনবহুল স্থানে এই ডাস্টবিনটি নির্মাণ করলো সিটি কর্পোরেশন। এই ডাস্টবিনের সামনেই রয়েছে আদশ্য উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর ছুটি হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে বের হতে দেখা যেত। কিন্তু এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। অথ্যাৎ স্কুলের শিক্ষার্থীও কমতে শুরু করেছে এই ডাস্টবিনের জন্য।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ শামিউল বলেন, বিভিন্ন প্রয়োজনে দৈনন্দিক জীবনে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা লাগে কিন্তু এই ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা বাইরে ফেলার কারণে বিকট গন্ধ বের হয়। ফলে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ব্যপক সমস্য হয়। এছাড়া অনন্য পথচারিদেরও একই সমস্যর সম্মুখীন হতে হয়। আমার মনে হয় ডাস্টবিনের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা ফেললে অনন্ত কিছুটা পরিবেশ দূষণ কমানো যাবে।

রুয়েট এর শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ বাশার বলেন, এইখানে একটি ডাস্টবিন আছে, সঠিক ম্যানেজমেন্ট এর অভাবে এই ডাস্টবিন থেকে অনেক দূগন্ধ বের হয়। এছাড়া এইপাশে রুয়েটের একটি পকেট গেট রয়েছে, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী এই গেট দিয়ে বের হয়েই বাজে দুর্গন্ধের সম্মুখিন হয়। এছাড়াও এই পাশের হল গুলোতে ক্লাসের মধ্যে বাজে দূগন্ধেরও শিকার হতে হয় রুয়েট শিক্ষার্থীদের।

রাজশাহী আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান সহকারি শিক্ষক জোবাইদা নাহার বলেন, ডাস্টবিনটি যখন প্রথম নির্মান কারার উদ্দ্যোগ নেয়, তখনি আমরা তাদের বাঁধা দেই ও সমস্যার কথা বলি। কিন্তু তারা বলেন, এই ডাস্টবিনটি এমন ভাবে নির্মাণ করে দিব যাতে আপনাদের কোন সমস্য না হয়। তারপরও আমরা বিদ্যালয়ের সামনে ময়লা ফেল্লে, শিক্ষার্থীদের সমস্য হবে বলে প্রতিবাদ করি। তখন তারা জানায় , অন্য কোথাও জায়গা নেই, স্পট নেই, আপনি জায়গা দেন, এই সকল কথা বলেছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোশনের কর্মকতারা।

তিনি আরও বলেন, একাধিকবার এই বাজে দূগন্ধের সমস্য নিয়ে অত্র বিদ্যালয়ের কমিটি’র সভাপতিসহ আমরা রাসিকের কর্তাব্যক্তিদের অবগত করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা কর্ণপাত করেন নি। তিনি আরও বলেন, ডাস্টবিনের বাইরে ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণ বাড়াছে। সেই সাওথে বিকট বিকট দূগন্ধে চলাফেরা করতে সমস্যায় হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রায় অসুস্থ হয়ে যায়। এমনকি আমরা অফিসের জানালা ও দরজা লাগিয়েও অফিসে বসে থাকতে পারি না। ওপরের ২ ও ৩ তলার ক্লাস রুমে এই পাশের জানালা সব-সময় লাগিয়ে রাখতে হয়। জানালা দরজা লাগিয়ে রাখার পরও ক্লাস রুমে বিকট দূর্গন্ধে সঠিকভাবে পাঠদান দিতে পারি না, বা আমাদের শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে শিখতে পারে না। দিন দিন আমাদের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে, অবিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ডাস্টবিন সংক্রান্ত অভিযোগ কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না।

আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, এই ডাস্টবিনের জন্য আমাদের অনেক সময় বমি বমি ভাব লাগে, আমরা কখনোই পরিপূর্ণভাবে ক্লাস করতে পারি না। অনেক সহপাঠি অসুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যায়।

সপ্তম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী বিল্লা নাদভি বলেন, সকালে আমাদের ক্লাস চলাকালিন সময়ে এই বাজে দুগন্ধে আমাদের খুব কষ্ট হয়, নিশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্য হয়। দরজা-জানালা খুলে ক্লাস করতে পারি না।

শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের স্কুলের সামনে যেই ডাস্টবিন রয়েছে এটাকে রিসাইক্লিং স্টেশন বলছে, আসলে এটি আমাদের কাছে এখন বিষফোড়ার মতো হয়ে উঠেছে। এই ডাস্টবিনের জন্যই দিন দিন আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আমাদের আর্দশ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ দূষণরোধে ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এই ডাস্টবিনটি সরিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরী হয়ে পড়েছে। যাতে কোমলমাতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসতে পারে।

শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুল এন্ড কলেজের সহকারি অধ্যক্ষ ফাতেমা জহুরা দোলন বলেন, ডাস্টবিন সাধারণত জনশূন্য স্থানে নির্মাণ করা হয়ে থাকে, তবে এই ডাস্টবিনটি একটি জনবহুল স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে। যার আশেপাশে ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আমাদের স্কুল রয়েছে, রুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সামনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। এই যে আমাদের টার্নেল পয়েন্টাতে বিভিন্ন অবিভাবকগন তাদের বাচ্চাকে স্কুল-কলেজ থেকে নিতে-যাওয়ার সময় এই ভয়ানক দূগন্ধের শিকার হচ্ছেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের অবিভাবকগন এই ডাস্টবিনের দূগন্ধ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের জানিয়েছেন। যাতে এই ডাস্টবিনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমরা চেষ্টা করেছি সিটি কর্পোরেশনে বিষয়টি জানাতে।

তিনি আরও বলেন, এই নোংরা পরিবেশ যা আমাদের শিক্ষার্থীদের ব্যপক স্বাস্থা ঝুকিতে ফেলছে। এছাড়া বিভিন্ন পশু-পাখি এই ময়লা আবর্জনাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একটা বাজে পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আমি পরিবেশ-বন্ধব যে মহল বা দপ্তরগুলো রয়েছে তাদের সুদৃষ্টি কমনা করছি।

শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবরার রাইয়ান, ফাহমিদা কোরাইশী বলেন, ডাস্টবিনটি আমাদের স্কুলের পাশেই অবস্থিত, ডাস্টবিনে এতই দূগন্ধ যে, শিক্ষার পরিবেশ সহ পুরো এলাকার পরিবেশই নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা চাই, এই ডাস্টবিনটি অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হোক।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা, শেখ মোঃ মামুন বলেন, আদর্শ স্কুলের সামনের ডাস্টবিনটির বাইরে ময়লা ফেলা হচ্ছে এই বিষয়ে আমি অবগত। এটি সাময়িক সময়ের জন্য ফেলা হচ্ছে। বজ্য অপসারণ কাজে ব্যবহৃত ৩টি স্কীট নষ্ট হয়ে আছে। আর ফলে বড় স্কীট রোলার ডাস্টবিনের মধ্যে ঢুকতে পারে না। তাই সাময়িক সময়ের জন্য এই সনমস্য্রা সৃষ্টি হয়েছে। স্কীট রোলার ঠিক হতে কত সময় লাগেবে এবং ডাস্টবিনের মধ্যে ময়লা ফেলা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিদৃষ্ট সময় বলতে পারবো না, তবে যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান হবে  বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ডাস্টবিন জনশূণ্য স্থানে স্থাপন করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজশাহী একটু জনবসতি পূর্ণ এলাকা। আমরা কোন ফাঁকা জায়গা পাইনি বিধায় সেখানে আমাদের নির্মাণ করতে হয়েছে। যদি ভবিষ্যতে কোন ফাঁকা জায়গা পাই তবে সেখানে ডাস্টবিন স্থাপন করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]