ভ্রমণ শুধু স্থান বদল নয়, বরং আত্মার মুক্তি: নিহা

আপলোড সময় : ০৭-০৮-২০২৫ ০৩:৫৪:৫২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৭-০৮-২০২৫ ০৩:৫৪:৫২ অপরাহ্ন
যখনই একটু অবসর পাই, তখন আমার মন ছুটে যেতে চায় দূরে কোথাও। প্রকৃতির কোলে, সমুদ্রের ঢেউয়ের পাশে, পাহাড়ের নির্জনতায় অথবা অচেনা কোনো শহরের আলো-আঁধারিতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। ভ্রমণ আমার কাছে শুধু স্থান বদল নয়, বরং আত্মার মুক্তি। আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি, মানুষ যত ভ্রমণ করে, তত জানে, তত বড় হয়। জীবনের গণ্ডি কেবল চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। শহরের ক্লান্তিকর জীবন, একনাগাড়ে কাজ, সামাজিক মাধ্যমে কৃত্রিমতা থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতির মাঝে নিজের আসল ‘আমি’কে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি। সম্প্রতি আমি পরিবারের সঙ্গে ঘুরে এসেছি থাইল্যান্ড। মালয়েশিয়ারও অনেক জায়গায় ঘেরা হয়েছে। দুই সপ্তাহের ট্যুর ছিল এটি। 

কাছের মানুষেরা সঙ্গে থাকলে ভ্রমণের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যায়। মালয়েশিয়ার অনেক লাংক উইএর সৌন্দর্য আমার মন ভালো করে দিয়েছিল। তবে যে জায়গা আমার মনে সবচেয়ে গভীরভাবে দাগ কেটেছে, সেটি হচ্ছে চিংমাই। ব্যাংকক বা ফুকেটের মতো শহুরে নয়, বরং অনেকটাই ধীরস্থির। চার পাশে পাহাড়, গাছগাছালি, আর ঐতিহ্যবাহী থাই সংস্কৃতির ছোঁয়া। চিংমাইতে বৌদ্ধমন্দিরে যাওয়া হয়েছে। মন্দিরে পা দিয়েই একটা অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করি। ধূপের গন্ধ, সাদা পোশাকে ভিক্ষুদের মৃদু পদচারণা, আর ঘণ্টার মৃদু আওয়াজ... মনে হচ্ছিল সময় এখানে আটকে গেছে।

একদিন ভোরে উঠে পাহাড়ি পথে হাইকিংয়ে গিয়েছিলাম। পাখির ডাক, আর মাঝে মাঝে স্থানীয়দের গাওয়া গান ভেসে আসছিল দূর থেকে। পথের মাঝে এক জায়গা থেকে পুরো চিংমাই শহর দেখা যায়। আমি দাঁড়িয়ে শুধু চেয়ে থেকেছি। এত শান্তি, এত ভারমুক্তি এই অনুভূতির সঙ্গে কোনো দামি হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা বিলাসিতা তুলনা হতে পারে না। চিংমাইয়ের লোকাল মার্কেটেও সময় কেটেছে খুব আনন্দে। হাতে তৈরি জিনিস, সুতি কাপড়, কাঠের হস্তশিল্প, আর ভিন্নধর্মী খাবার... প্রতিটি মুহূর্ত ছিল নতুন শেখার। 

থাইল্যান্ডের আরেকটি স্থান আমাকে অন্যরকম অভিজ্ঞতা দিয়েছে। কোসেমো ঘুরতে ভালো লেগেছে। এটি স্বর্গের মতো এক দ্বীপ। ছোট ছোট পাহাড় আর নীল সমুদ্রের মাঝে একটি দ্বীপ, যেখানে সময় যেন থেমে থাকে। চারপাশে কাচের মতো স্বচ্ছ পানি, সাদা বালুর সৈকত, আর দিগন্ত বিস্তৃত নীলাকাশ। আমি সেখানে প্রথম যেদিন পৌঁছাই, মনে হয়েছিল স্বপ্নে এসেছি। সেই ছোট দ্বীপের মধ্যে যে কত বৈচিত্র্য, কত বিস্ময়, তা ভাষায় বোঝানো কঠিন। স্বচ্ছ পানির নিচে রঙিন প্রবাল আর মাছের খেলা, আর দূরে সবুজ পাহাড়... যেন কোনো পেইন্টিংয়ের ভেতরে ঢুকে গেছি। আমি জীবনে অনেক সৈকতে গেছি, কিন্তু কোসেমোতে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা আলাদা। সেখানে সূর্যটা ধীরে ধীরে ডুবে যায় সাগরের কোলঘেঁষে, আর চারদিক লালচে সোনালি আলোয় ভরে যায়। আমি অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে সেই দৃশ্য দেখেছি। কোনো শব্দ করিনি। শুধু চেয়েছি এবং অনুভব করেছি এই মুহূর্তটিকে আমি এক জীবনে বারবার বাঁচতে চাই। কোনো জায়গায় ঘুরতে গেলে সেখানকার ছবি তুলি। এবারও তুলেছি। আবার সেসব ছবি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুল করিনি। 

খাবারের দিক থেকেও কোসেমো ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা। আমি সাধারণত লোকাল খাবার ট্রাই করি সবসময়। কোসেমোর স্থানীয় সি-ফুড আর ফলমূলের স্বাদ এখনও জিভে লেগে আছে। আর মানুষগুলো? ওরা এত হাসিখুশি, অতিথিপরায়ণ, যেন আপনজন। একদিন আমি এক ছোট রেস্তোরাঁয় থাই নারিকেল দুধে রান্না করা সি-ফুড খেয়েছিলাম। এমন স্বাদ আগে কখনও পাইনি। শপিং করতে করতে স্থানীয় লোকদের সঙ্গে গল্প করলাম ওরা কত সহজ, কত খোলামেলা! মনে হচ্ছিল, আমি কোনো বিদেশি নই, এই জায়গারই কেউ। তবে আমার ভ্রমণের প্রেম শুধু বিদেশের প্রতি নয়। দেশের ভেতরেও অনেক জায়গা আছে, যেগুলো আমাকে বারবার ডাকে। বান্দরবান তার মধ্যে অন্যতম। পাহাড়, মেঘ, ঝরনা এই তিনের একত্র সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। বছরে একাধিকবার বান্দরবানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। কখনও পরিবার নিয়ে, কখনও একা। 

প্রকৃতির সঙ্গে কাটানো এই সময়গুলো আমাকে চাঙ্গা করে। আমি যখন পাহাড়ে থাকি, তখন জীবনকে অন্যভাবে দেখি। সেখানকার মানুষ, তাদের সরলতা, তাদের সঙ্গে কথা বললে মনে হয়, জীবন আসলে কত সহজ হওয়া উচিত। ভ্রমণ আমার কাছে শুধু বিনোদন নয়। এটি আমাকে ভালো মানুষ হতে শেখায়, পৃথিবীকে বড় করে দেখতে শেখায়। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতি থেকে শিখে, মানুষ থেকে শিখে জীবনকে পূর্ণতা দেওয়া যায়। থাইল্যান্ডে আবারও যেতে মন চায়। সময় সুযোগ পেলে আবারও যাব। বিশেষ করে সেখানকার চিংমাই যেন আমার মনকে আটকে রেখেছে। সেখানে গিয়ে প্রকৃতির মায়ায় হারিয়ে যাব... সেই অপেক্ষায় আছি।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]