বিশ্ব মৌমাছি দিবস আজ ৯০ শতাংশ উদ্ভিদে পরাগায়ন ঘটায় মৌমাছি

আপলোড সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০১:৫২:২৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০১:৫২:২৩ অপরাহ্ন
প্রকৃতির ছোট্ট প্রাণী মৌমাছি। এরা সামাজিক পতঙ্গ, কারণ তারা দলবদ্ধভাবে বাস করে। মৌমাছির আরেকটা পরিচয়—সে অত্যন্ত কর্মঠ। ‘মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই, ঐ ফুল ফোটে বনে যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় যে নাই’—নবকৃষ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’ ছড়ার লাইন দুটির সঙ্গে কম-বেশি অনেকেই পরিচিত। তবে তিনি যত উপকারীই হোক না কেনো, তার সাধারণ গ্রামীণ পরিচয় বিষাক্ত হুল ফোটানোর জন্য। ছোট্ট উড়ন্ত এই পতঙ্গ কাছাকাছি এলেই আতঙ্কে ছোট-বড় সকলে নিজেকে রক্ষার্থে মৌমাছিকে তাড়িয়ে দেয়, নয়তো আত্মরক্ষায় নিজেকে আড়াল করে।

প্রকৃতিতে যেখানেই ফুল ফোটার মতো উদ্ভিদ আছে, সেখানেই দেখা মিলবে এই পতঙ্গের। মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের পরাগায়ণের ফলে গাছে ফুল ফোটে, ফল ধরে। গবেষকরা বলছেন, প্রায় ৯০ ভাগ বন্য উদ্ভিদে পরাগায়ণ ঘটায় মৌমাছি। প্রকৃতিতে রয়েছে তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অর্থাৎ বনজ, ফলজ এবং কৃষিজ ফসলের উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম। তাই মৌমাছিকে প্রকৃতির বন্ধু বলা হয়। দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কৃষিজমি ও বনভূমি হ্রাস, কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত সার ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হচ্ছে মৌমাছির প্রাকৃতিক আবাসস্থল, স্বাভাবিক বিচরণ ফলে ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে তাদের প্রজননে। ফলে প্রকৃতির জন্য মৌমাছি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

সময়ের সঙ্গে বেড়েছে মধুর প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা। ফলে সমাজে হুল ফোটানো মৌমাছির কদরও বেড়েছে বহুগুণে। মৌমাছির আসল পরিচয় এখন তার মধুর জন্য। কিন্তু এই মধু সে আমাদের জন্য তৈরি করে না, শীতকালে নিজে খাওয়ার জন্য তারা মধু সংরক্ষণ করে। আর সুযোগ বুঝে সেই সংরক্ষিত মধুই মৌয়ালরা সংগ্রহ করেন।

দেশে সচরাচর চার ধরনের মৌমাছি দেখা যায়। রকি বা পাহাড়ি মৌমাছি, লিটল বি বা খুদে মৌমাছি, ইন্ডিয়ান বি বা ভারতীয় মৌমাছি ও ইউরোপিয়ান বি বা ইউরোপীয় মৌমাছি। পৃথিবীতে মোট ৯টি স্বীকৃত গোত্রের অধীনে প্রায় ২০ হাজার মৌমাছি প্রজাতি আছে, যদিও এর বেশির ভাগেরই কোনো বর্ণনা নেই এবং এর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশে যেখানেই পতঙ্গ-পরাগায়িত সপুষ্পক উদ্ভিদ আছে, সেখানেই মৌমাছি আছে।

জানা যায়, মৌমাছি প্রায় ৩ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে আছে। প্রতিটি মৌমাছির চাকে গড়ে ৫০ হাজার মৌমাছি থাকে। ১ কেজি মধু সংগ্রহ করতে প্রায় ৪০ লাখ ফুলে ঘুরতে হয় মৌমাছিদের। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছিরা তাদের পা এবং বুকের লোমের ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়লে পরাগায়ন ঘটে, যার ফলে উৎপন্ন হয় ফল। এভাবে মৌমাছিরা পরাগায়নের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ফল ও ফসলের উৎপাদন বাড়ায়।

মৌমাছির সংগৃহীত পুষ্পরসই মধু তৈরির প্রধান উপকরণ। এই পুষ্পরস থেকে পাওয়া মধু সংগ্রহ করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মৌমাছির চাষ এবং মধু সংগ্রহ একটি পেশা হয়ে উঠছে, যাদের মৌয়াল হিসেবে সবাই চিনে। এরা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে বার্ষিক ৩০ হাজার টন মধুর চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১০ হাজার টন। আমাদের দেশে উৎপাদিত মধুর শতকরা ৭৫ ভাগ আসে সুন্দরবন থেকে।

এই মৌমাছি দিবস আজ। ২০১৮ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ২০ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মৌমাছি দিবস। পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে, পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে মৌমাছি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে, সেই সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দিনটি পালিত হয়। ২০ মে মৌমাছি পালনের প্রবর্তক অ্যান্টন জনসার জন্মদিন। তার স্মরণেই ২০ মে দিনটিকে মৌমাছি দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]