বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার জনমনে ক্ষোভ

আপলোড সময় : ২৩-০৮-২০২৫ ১০:২৪:৪৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৩-০৮-২০২৫ ১০:২৪:৪৪ অপরাহ্ন
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার একটি দেবোত্তর সম্পত্তির পুকুরের মাছ ধরা নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এনিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

কারণ বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল। সারাদেশে তাদের কোটি কোটি কর্মী-সমর্থক রয়েছে। কখানো কোনো কর্মী+সমর্থক ব্যক্তিগতভাবে যদি কোনো বেআইনি কাজ করে সেই দায় তার। বিএনপির ওপর তার দায় পড়ে না। অথচ বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান,নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের (ইউপি) কন্যাপাড়া পাঁচপুকুরিয়া গ্রামে দেবোত্তর সম্পত্তির একটি পুকুর রয়েছে।পুকুরটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন মোশারফ হোসেন। এদিকে দেবোত্তর সম্পত্তির পুকুর হওয়ায় শর্ত দেয়া হয়েছে, পুকুরের মাছ ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।তবে তাদের মন্দির বা ধর্মীয় উপাসনালয় উন্নয়নে কিছু মাছ বিক্রি করা যাবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১৮ আগস্ট সোমবার মোশারফ হোসেন গ্রামবাসিদের নিয়ে পুকুরের মাছ ধরেন। পরবর্তীতে কিছু মাছ গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বিতরণ করেন এবং কিছু মাছ বিক্রি করে টাকা দেন। যাতে ধর্মীয় উপাসানালয় এর উন্নয়ন করতে পারেন তারা।

অথচ এ ঘটনায় নিয়ামতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন গ্রামবাসীর পক্ষে মোজাম্মেল হোসেন।অভিযোগে মোশারফ হোসেন,  কুশমইল গ্রামের দবির উদ্দিন কাইয়্যার পুত্র রেজাউল করিম ও মহিদুল ইসলামসহ আরো বেশ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি সংঘবদ্ধ হয়ে ওই পুকুর দখলে নিতে নানা অপতৎপরতা করে আসছে। কিন্ত্ত পুকুর দখলে ব্যর্থ হয়ে তারা মাছ লুটের কথিত অভিযোগ করেছেন।এমনকি উক্ত মৌজায় এখানো তারা দুটি পুকুর জবরদখল করে রেখেছেন। এসব পুকুর উদ্ধারে তারা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে 'বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে পুকুরের দুই লাখ টাকার মাছ লুটের অভিযোগ'শিরোনামে খবর প্রকাশ করে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। কারণ উনি যদি বিএনপির কোনো পদে না থাকেন তাহলে তিনি নেতা হন কি বিবেচনায় ? যদি কোনো পদে থাকেন তাহলে পদ উল্লেখ করা হোক ? কিন্ত্ত এসব না করে মনগড়াভাবে, বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে এমন খবর প্রকাশ করা হয়েছে। 

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, এই পুকুর দুটি ঠাকুর মান্দার রাজখাড়া জয় জয় কালিমাতা ষ্টেট এর দেবত্তর সম্পত্তি। এর সেবায় দেবাশীষ রায় এবং অশোক রায় বাপ্পি সেবায়েত হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।পাঁচ পুকুরিয়ার এই দুটি পুকুরে স্থানীয় লক্ষি মন্দিরের উন্নয়নকল্পে প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরের উন্নয়নের জন্য পুকুর দুটিতে মাছ চাষ করে আসছেন। তারাই মুলত মাছগুলো মারে। রাজখাড়া জয় জয় কালি মাতা দেবত্তর ষ্টেটের সেবায়েতদের প্রতিনিধি হিসাবে স্থানীয় মন্দির কর্তৃপক্ষের অনুরোধে মোশারফ হোসেন ও রেজাউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে পাঁচপুকুরিয়া লক্ষি মন্দিরের সভাপতি নিতাই বলেন, পুকুর দুটিতে দীর্ঘদিন যাবত আমরাই মাছ চাষ করে আসছি। গত ১৮ আগষ্ট সোমবার মন্দিরের উন্নয়নের জন্য সবাই মিলে পুকুর দুটিতে মাছ মারা হয়। কুশমইলের মোশারফ ও রেজাউলকে দেবত্তর ষ্টেটের সেবায়েতদের প্রতিনিধি হিসাবে আমরাই ডেকেছিলাম। বরং ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পতনের পরে ওই মোজাম্মেল হকসহ কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী জোরপূর্বক আমাদের পুকুরে আমাদের ছাড়া মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। আমরা দেশের পরিস্থিতির কারণে তখন কিছু বলতে পারি নাই।

লক্ষি মন্দিরের সদস্য মানিক চন্দ্র বলেন, বিগত ২০০৯ সাল থেকে পুকুরদুটিতে আমরা মাছ চাষ করে লক্ষি মন্দিরের এবং বিভিন্ন ধর্মীয় কাজ করে থাকি। মসজিদ কমিটি থেকে কোন মাছ ছাড়া হয় নাই। কয়েকজন স্বার্থনেষী ব্যক্তি  মোশারফ ও রেজাউলকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানী এবং আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সামাজিকভাবে হেয়ওপ্রতিপন্ন  করার জন্যই এমন মিথ্যে অভিযোগ তুলেছে। পুকুরদুটি গত জুন মাসে রাজখাড়া শ্রী শ্রী জয় কালিমাতার দেবোত্তর ষ্টেটের সেবায়েতদের কাছ থেকে মন্দিরের উন্নয়নের জন্য লিখিতভাবে লিজ নিয়েছি। স্থানীয় সাবেক  নারী ইউপি সদস্য নারায়নী বলেন, পুকুরে আমরা হিন্দু সম্প্রদায় মন্দিরের কাজের জন্য মাছ ছাড়ছি।

স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের পুকুরে মাছ মারা নিয়ে যে দ্বন্দ্ব, যারা মসজিদের দোহাই দিয়ে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। মসজিদ কমিটি থেকে কোন মাছ ছাড়া হয় নাই। মাছ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওরাই ছেড়েছে।

এবিষয়ে মোশারফ হোসেন বলেন, আমি কোন পুকুরের মাছ মারি নাই। পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে আমার অনেকদিন যাবত রাজনৈতিক কারণে স্বক্ষতা রয়েছে। লক্ষিমন্দিরের সভাপতিসহ অন্যান্য গ্রামবাসী দুটি পুকুর দেবত্তর সম্পত্তির বলে রাজখাড়া শ্রী শ্রী জয় কালিমাতা দেবোত্তর ষ্টেটের সেবায়তদের কাছ থেকে মন্দিরের উন্নয়নকল্পে ভোগদখর করে খাচ্ছে। তারা দীর্ঘ ২০০৯ সাল থেকে মাছ চাষ করে আসছে। সম্প্রতি ২০২৪ সালের শেখ হাসিনার পতনের কয়েকদিন পর পাঁচপুকুরিয়ার মোজাম্মলসহ সহ কয়েকজন ব্যক্তি ওই পুকুরের মাছ জোরপূর্বক লুট করে নিয়ে যায়। দেশের পরিস্থিত এবং তারা সংখ্যালঘু বলে ভয়ে কিছু বলতে পারে নাই। গত ১৩ আগষ্ট আবারও তারা ওই পুকুরের মাছ লুট করতে গিয়েছিল। পুলিশের সহযোগিতায় তা রোধ করা গেছে। তাই তারা গত ১৮ আগষ্ট পুকুরের মাছগুলি মারার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। আমাকে তারা দেবত্তর ষ্টেটের সেবায়েতের প্রতিনিধি হিসাবে ডেকেছিল। তাই আমি ও রেজাউল সেখানে যাই। যারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা আমাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হয়রানী করার জন্য করেছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যো, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, মনগড়া ও মানহানিকর। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

দেবোত্তর ষ্টেটের সেবায়েত অশোক রায় বাপ্পি বলেন, রাজখাড়া শ্রী শ্রী জয় কালিমাতার দেবোত্তর ষ্টেটের নিয়ামতপুর ও মান্দায় ৩৮০টি পুকুর আছে। সবগুলোই জয়কালি মাতার দেবোত্তর ষ্টেটের। পাঁচপুকুরিয়ায় দেবোত্তর ষ্টেটের ৪টি পুকুর রয়েছে। যে দুটি পুকুর নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলিও আমাদের দেবোত্তর ষ্টেটের, সুতরাং মোশারফকে নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা বিছিন্ন ঘটনা। ওই পুকুরদুটি পাঁচপুকুরিয়া লক্ষিমন্দিরের উন্নয়নকল্পে মাছ চাষের জন্য প্রদান করা হয়। যেন এই আয় দিয়ে মন্দিরের সংস্কার ও অন্যান্য ধর্মীয় কাজগুলো হবে। মোশারফ দীর্ঘ ২০ বছর যাবত দেবোত্তর ষ্টেটের সাথে কর্মরত আছে। তাই সে সেখানে আমাদের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিল। সুতরাং যারা মোশারফ এর বিরুদ্ধে মাছ লুটের অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যে বনোয়াট। পুকুরদুটি দেবোত্তর ষ্টেটের, সেবায়েতের সম্পত্তি। আমরা সবকিছু দেখাশুনা করতে পারি না। তাই মোশারফ আমাদের প্রতিনিধি হিসাবে সবকিছু দেখাশুনা করে। সেই কাজই সে সেখানে করতে গেছে। তাকে রাজনৈতিকভাবে ও সামাজিকভাবে হয়রানী করার জন্য এই মিথ্যে অভিযোগ করেছে।

এবিষয়ে নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)  হাবিবুর রহমান বলেন, পুকুর থেকে মাছ লুটের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]