খুলনা জেলা কারাগার উদ্বোধনের আগেই বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল

আপলোড সময় : ২৩-০৯-২০২৫ ০৭:৪৬:২৯ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৩-০৯-২০২৫ ০৭:৪৬:২৯ অপরাহ্ন
ভেঙে পড়ছে জানালা, সিঁড়ি ২৮৮ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ এক যুগেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ ব্যয় তিন গুণ বাড়লেও কাজের মান নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন..

 উদ্বোধনের আগেই খুলনা জেলা কারাগারের নতুন ভবনে দেখা দিয়েছে একের পর এক ত্রুটি। ফাটল ধরা দেয়াল, ভেঙে পড়া জানালা-সিঁড়ি, বেজমেন্টে পানি প্রবেশ সব মিলিয়ে কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্প নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। ২০১১ সালে একনেকের সভায় অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৪৪ কোটি টাকা। পরে ২০১৭ সালে তা বাড়িয়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি, আর সর্বশেষ ২০২৩ সালের মে মাসে সংশোধিত বাজেটে ব্যয় দাঁড়ায় ২৮৮ কোটিতে। তবে তিন দফায় ব্যয় বাড়লেও এক যুগ পেরিয়ে গেছে, শেষ হয়নি কাজ। চলতি বছরের জুনে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

ঠিকাদারদের ভাগ-বাটোয়ারা ঃ এই প্রকল্পে মোট ৩৮টি প্যাকেজে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে এস এন বিল্ডার্স ১৩টি, মধু ট্রেডার্স ৭টি, রাফিদ ট্রেডার্স ৪টি এবং বাকি কাজগুলো পায় মাহবুব ব্রাদার্স লিমিটেড, জহিরুল লিমিটেড, ওশান ট্রেডার্স, নিয়াজ ট্রেডার্স, মোহাম্মদ নূর হোসেন, তুহিন এন্টারপ্রাইজ, নাজ ট্রেডার্স, ইব্রাহিম অ্যান্ড ব্রাদার্স, সৌরভ এন্টারপ্রাইজ ও মো: মিজানুর রহমান।

অভিযোগ রয়েছে পুরনো লোহার ওপর রং করে নতুন বলে চালানো হয়েছে, নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এবং কাজ শেষ করার আগেই ঠিকাদাররা টাকা তুলেছেন। এ বিষয়ে এস এম বিল্ডার্স এর প্রোপাইটার মো: দাউদ হায়দার বলেন, আমার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি গণপূর্ত কে কাজ বুঝিয়েও দিয়েছি, আমি টাকাও তুলে নিয়েছি, এখন কি হয় সেটা তো দেখার বিষয় আমার না। মধু ট্রেডার্স এর প্রোপাইটার জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলাম মধু বলেন আমি তো অল্প কয়েকটা কাজ করেছি অধিকাংশ কাজ করেছে এস এম বিল্ডার্সের দাউদ, আমার বিল্ডিং এর কোন সমস্যা হওয়ার কথা না আমি কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই বরং আমার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ঃ কারাগার কর্তৃপক্ষের দাবি, গণপূর্ত থেকে বুঝে নেওয়ার আগেই ভবনের একাধিক স্থাপনায় ত্রুটি ধরা পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে মসজিদের ভেতরে পানি প্রবেশ, মহিলা সেলের ছাদ থেকে পানি পড়া, আবাসিক ভবনের কাজ অসম্পূর্ণ থাকা, ওয়ার্কওয়ে দেবে যাওয়া এবং পেরিমিটার ওয়াল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া। জেল সুপার মো: নাসির উদ্দিন বলেন “মোট ৩৮টি প্যাকেজের মধ্যে মাত্র একটি প্যাকেজ বুঝে নেওয়া গেছে। বাকিগুলোতে ১১৬টি ত্রুটি চিহ্নিত করে আমরা গণপূর্ত বিভাগকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।” তবে এখনো পর্যন্ত আমরা সকল বিল্ডিং বুঝে নেই নি দুই একটি ভবন বুঝে নিয়েছি তাতে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

নাগরিক সমাজের ক্ষোভ ঃ সচেতন নাগরিক সমাজ খুলনার সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন “জেলখানার মতো সংবেদনশীল স্থাপনায় উদ্বোধনের আগেই নানা ফাটল ও ত্রুটি ধরা পড়া প্রমাণ করে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে। শুধু অনিয়ম নয়, ঠিকাদাররা টাকা তুলেও নিয়েছেন।” আর এখন ফাটল দেখা দিয়েছে সিঁড়ি ভেঙ্গে পড়েছে, জানলাগুলোতে বোঝা যাচ্ছে পুরাতন এবং ঝালাই নাই রং করা হয়েছে, এগুলো হয়তো তারা মেরামত করে দিবে কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সুতরাং এর দায়ভার কে নেবে ?

গণপূর্তের বক্তব্য ঃ তবে নির্বাহী প্রকৌশলী গণপূর্ত-২ মো: আসাদুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন “ঠিকাদারদের টাকা না দিলে প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হতো না। তাই টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগগুলো আমলে নেওয়ার মতো নয়।”এগুলো মেরামত করলে ঠিক হয়ে যাবে।

ঠিকাদারের প্রতিক্রিয়া : এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে মুঠোফোনে তারা বলেন “সব কাজ নিয়ম মেনেই হয়েছে। ছোটখাটো কিছু ত্রুটি থাকলেও তা সংশোধন করা সম্ভব।”

সমাপ্তি :
এক যুগেও শেষ হয়নি খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প। ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। অথচ উদ্বোধনের আগেই একের পর এক ত্রুটি ধরা পড়ায় ক্ষোভ বাড়ছে খুলনাবাসীর মধ্যে। কবে এই প্রকল্প পুরোপুরি শেষ হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]