শুক্রবারের ১০ আমল

আপলোড সময় : ০৩-১০-২০২৫ ০২:৩২:১২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৩-১০-২০২৫ ০২:৩২:১২ অপরাহ্ন
ইসলামে শুক্রবার বা জুমার দিন দিনসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। মহানবী (সা.) বলেন, দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিন আল্লাহ তাআলা আদমকে (আ.) সৃষ্টি করেছেন। তাকে দুনিয়াতে নামানো হয়েছে এই দিন। তার মৃত্যুও হয়েছে এই দিন। তার তাওবা কবুল হয়েছে এই দিন। এই দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। মানুষ ও জিন ছাড়া এমন কোনো প্রাণী নেই, যা কেয়ামত কায়েম হওয়ার ভয়ে জুমার দিন ভোর থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত চিৎকার করতে থাকে না। জুমার দিন একটা সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি সে সময় নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১০৪৬, সুনানে নাসাঈ: ১৪৩০)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা: ৮৩)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৯১০)

এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় ‍শুক্রবার বা জুমার মর্যাদাপূর্ণ দিনটি আল্লাহ তাআলার স্মরণ, দোয়া, নামাজ ও অন্যান্য নেক আমলের বিশেষ দিন। অন্যান্য হাদিসে শুক্রবারের আরও কিছু বিশেষ আমলের নির্দেশনা ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। 

এখানে আমরা কোরআন-হাদিসের আলোকে শুক্রবারের বিশেষ ১০টি আমলের কথা তুলে ধরছি:

১. শুক্রবারের আমল: পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হোন: জুমার নামাজের প্রস্তুতি হিসেবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ভালোভাবে গোসল করুন। নখ ও গোঁফ কাটুন যদি বড় হয়ে গিয়ে থাকে। বগল ও নাভির নিচের অবাঞ্চিত লোম পরিস্কার করুন। দাঁত ব্রাশ বা মিসওয়াক করুন। পরিস্কার ও উত্তম পোশাক পরিধান করুন। সুগন্ধী ব্যবহার করুন। এ নির্দেশনাগুলো আমরা উল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে পাই।

২. শুক্রবারের আমল: জুমার জন্য দ্রুত মসজিদে যান: জুমার নামাজের জন্য দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করুন। জুমার আজান হয়ে যাওয়ার পর দুনিয়াবি কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। ইমাম খুতবা শুরু করার আগে অবশ্যই মসজিদে উপস্থিত হয়ে যান।

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। (সুরা জুমা: ৯)

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগমণকারীদের নামে সওয়াব লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যাক্তির মতো যে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে আসে সে ওই ব্যাক্তির মতো যে একটি গাভী কোরবানি করে। পরের পর্যায়ে যে আসে সে মেষ কোরবানিদাতার মতো। তারপরের পর্যায়ে আগমণকারী মুরগি দানকারীর মতো। তারপরের পর্যায়ে আগমণকারী একটি ডিম দানকারীর মতো। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতারা তাদের খাতা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগের সাথে খুতবা শুনতে থাকেন। (সহিহ বুখারি: ৯২৯)

৪. শুক্রবারের আমল: মসজিদের আদব রক্ষা করুন: জুমার দিন মসজিদে দ্রুত উপস্থিত হয়ে যথাসম্ভব সামনের কাতারে ইমামের কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। কিন্তু মসজিদে পৌছতে দেরি হলে অন্যদের কষ্ট দিয়ে কাতার ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবেন না; যেখানে জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই বসে পড়ুন। মসজিদে পরে উপস্থিত হয়ে অন্য মুসল্লিদের ডিঙিয়ে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করা অন্যায় ও গুনাহের কাজ।

খুতবা চলা অবস্থায় কেউ যদি কাতার ডিঙিয়ে সামনে যেতে চায়, তাহলে অন্য মুসল্লিদের উচিত তাকে এ কাজ করতে নিষেধ করা ও বসিয়ে দেওয়া। খতিব সাহেবের চোখে পড়লে তিনি নিজেই তাকে বসে যাওয়ার নির্দেষ দিতে পারেন। একবার রাসুল সা. জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। তার চোখে পড়লো এক ব্যক্তি মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি তাকে বললেন, বসে পড়, তুমি দেরি করে এসেছ, মানুষকে কষ্টও দিচ্ছ। (সুনান আবু দাউদ: ১১১৮)

এ ছাড়া কথাবার্তা বলে বা অন্য যে কোনোভাবে অন্যদের নামাজে বিঘ্ন ঘটানো থেকে বিরত থাকুন। মসজিদের সম্মান ও আদব রক্ষা করুন।

৫. শুক্রবারের আমল: নফল ও সুন্নত নামাজ আদায় করুন: ইমাম খুতবা শুরু করার আগে মসজিদে পৌঁছতে পারলে তাহিয়্যতুল মসজিদ বা দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করুন। জুমার আগে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করুন। জুমার আগের চার রাকাত সুন্নত নামাজ সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে প্রমাণিত রয়েছে। আবু উবাইদ থেকে বর্ণিত রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমার আগে চার রাকাত নামাজ পড়তেন। (ইবনে আবী শায়বা: ৫৪০২২) প্রখ্যাত তাবেঈ ইবরাহিম নাখঈ (রহ.) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম জুমার আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা: ৫৪০৫)

৬. শুক্রবারের আমল: মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনুন: জুমার খুতবা শোনা ওয়াজিব। খুতবার সময় অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকুন। রাসুল (সা.) খুতবার সময় চুপ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে কেউ কথা বললে তাকে ‘চুপ কর’ বলতেও নিষেধ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো, চুপ কর, তাহলেও তুমি অনর্থক কথা বললে। (সহিহ বুখারি: ৯৩৪)

ফকিহগণ বলেন, যেসব কাজ নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়।

৭.  ‍শুক্রবারের আমল: উত্তরূপে জুমার নামাজ আদায় করুন: শুক্রবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল জুমার নামাজ। মনোযোগ ও একাগ্রতার সঙ্গে উত্তরূপে জুমার নামাজ আদায় করুন।

৮. শুক্রবারের আমল: দরুদ পাঠ করুন: জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করুন। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমার দিন। সুতরাং এই দিন তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পড়। তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৩)

৯. শুক্রবারের আমল: আল্লাহর কাছে দোয়া করুন: শুক্রবারে বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করুন। এ দিনের কিছু সময় এমন আছে, যখন দোয়া করলে তা সাথে সাথে কুবল হয়ে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোনো মুসলমান বান্দা যদি এ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্‌র কাছে কিছু চায়, তা হলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দান করে থাকেন। এ কথা বলে রাসুল (সা.) হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (সহিহ বুখারি: ৯৩৫)

এ বিশেষ সময় কখন এ নিয়ে আলেদের দুটি মত পাওয়া যায়:

১. অনেকের মতে জুমার দিন দোয়া কবুলের সময় হলো, জুমার নামাযের সময় ইমামের বের হওয়া অর্থাৎ খুতবা শুরু করা থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত। এই মতের পক্ষে দলিল সহিহ মুসলিমের একটি বর্ণনা, আবু বুরদা ইবনে আবু মূসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার পিতাকে জুমুআর দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন সেই বিশেষ মুহূর্তটি হলো ইমামের বসা থেকে সালাত শেষ করার মধ্যবর্তী সময়টুকু। (সহিহ মুসলিম: ১৮৪৮)

২. হযরত আবু হোরায়রা রা. আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা., ইমাম আহমদ (রহ.) সহ বেশিরভাগ সাহাবি ও আলেমের মত হলো জুমার দিন দোয়া কবুলের বিশেষ সময় আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। দলিল রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত এই হাদিস, জুমার দিনে এমন বারোটি মুহূর্ত রয়েছে, এমন কোন মুসলিম বান্দা পাওয়া যাবে না, যে ঐ মূহূর্তগুলোতে আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে, কিন্তু তাকে তা দেওয়া হবে না। তোমরা ওই মূহূর্তগুলো আসরের পর শেষ সময়ে অনুসন্ধান কর। (সুনানে নাসাঈ: ১৩৯২)

যেহেতু সেই বিশেষ সময় সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে আমরা কিছু জানি না, তাই আমাদের উচিত জুমার সারা দিনই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে থাকা। বিশেষ করে জুমার সময় ও আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টুকুতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেহেতু এই দু’টি সময়ের কথা কিছু হাদিসে বিশেষভাবে উল্লিখিত হয়েছে।

১০. শুক্রবারের আমল: সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করুন: জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে, তা তার জন্য পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নুর হবে। (সহিহুল জামে: ৬৪৭০)

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]