ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামি স্কুল ধসে বাকি ৫৯ লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা

আপলোড সময় : ০৩-১০-২০২৫ ০৩:০০:০৯ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৩-১০-২০২৫ ০৩:০০:০৯ অপরাহ্ন
ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভার সিদোয়ারজো এলাকায় বোর্ডিং স্কুল ধসের ঘটনায় হতাশা নেমে এসেছে পরিবারগুলোর মধ্যে। সোমবার (২৯ অক্টোবর) থেকে নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের খুঁজে পাওয়ার যে আশা ছিল, বৃহস্পতিবার সেটি রূপ নিয়েছে হতাশায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন উদ্ধার নয়, বরং মৃতদেহ শনাক্ত ও উদ্ধারের কাজেই মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার প্রধান সুহারিয়ান্তো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, থার্মাল ড্রোনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও ‘কোনো নতুন প্রাণের অস্তিত্ব’ খুঁজে পাওয়া যায়নি আল-খোজিনি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলে।

সংবাদটি শোনার পর নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের স্বজনরা ধ্বংসস্তূপ ঘেরা এলাকায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেকেই রাস্তার পাশে অচেতন হয়ে পড়েন।

প্রথম দিকে আশঙ্কা ছিল, ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে ধ্বংসস্তূপের নিচে বেঁচে থাকা শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়তে পারে। তাই খালি হাতে ইট-পাথর সরানো হচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে উদ্ধারকাজে এক্সকাভেটর আনা হচ্ছে। এখনো ৫৯ জন নিখোঁজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে কয়েকশ মিটার দূর থেকেও পচা দেহের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সবাই মারা গেছে। প্রথম থেকেই মনে করা হচ্ছিল, ধসে পড়া ভবনের ভেতরে আটকে পড়াদের বেশির ভাগই বেঁচে নেই।’

পরিবারগুলো ঘটনাস্থলের পাশে তাঁবুতে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার নিখোঁজদের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা দেওয়া শুরু হয়। এতে মিলিয়ে শনাক্ত করা হবে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ।

১৪ বছর বয়সী ছেলে আরিফ আফান্দিকে হারানো বাবা আহমাদ ইচসান কান্না থামাতে না পেরে প্রার্থনা করতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘দুই বছর চার মাস ধরে ওকে এখানে রেখেছি, যেন ভালো মানুষ হয়, মা-বাবার প্রতি অনুগত হয়, দেশের প্রতি অনুগত হয়।’ সোমবার ধসের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন, তারপর থেকেই এখানেই আছেন। ‘এখনো ওকে পাওয়া যায়নি। তবুও আমার আশা ও এখনো বেঁচে আছে।’

বুধবার রাতে ধ্বংসস্তূপ থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থী জীবিত উদ্ধার হওয়ায় একসময় আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই আশার জানালা বন্ধ হয়ে আসে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় দুর্ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময়টিই ‘গোল্ডেন উইন্ডো’, যেখানে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। সে সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই পাঁচজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে এবং আহত হয়েছেন শতাধিক।

১৩ বছর বয়সী ছেলে নুরদিনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানালেন বাবা মুহাম্মদ সোবির। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ চাইলে ও বেঁচে আছে। ওকে না পাওয়া পর্যন্ত আমি এখানেই থাকব।’ নুরদিন মাত্র চার মাস হলো স্কুলটিতে ভর্তি হয়েছিল।

সোবির আরও বলেন, ‘আমরা এই স্কুল বেছে নিয়েছিলাম কারণ এখানে ভালো শিক্ষা দেওয়া হয়। নুরদিন ভীষণ ভালো ছেলে, পড়াশোনায়ও মনোযোগী। কীভাবে ধস ঘটল আমি জানি না, এখন এ নিয়ে ভাবতেও পারছি না। শুধু চাই, আমার ছেলেকে যেন খুঁজে পাই।’

মা নূর ফাত্রিয়া ডিএনএ নমুনা দেওয়ার পর বলেন, ‘কী অনুভব করছি আমি তা বলার মতো ভাষা নেই। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। চার দিন ধরে এখানে আছি, আমি কী অনুভব করছি বুঝতেই পারছি না।’

পুলিশের ফরেনসিক টিম জানায়, মা-বাবা দুজনের ডিএনএ নমুনা নিয়ে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।

এদিকে সাবেক শিক্ষার্থী হাইয়ি নিজের ভাইকে খুঁজছেন। ১৫ বছর বয়সী আহমাদ সুহাভি ধসে পড়া স্কুলের ভেতরে আটকে আছেন বলে ধারণা। হাইয়ি বলেন, ‘গ্রীষ্মের ছুটির পর ও বলেছিল স্কুলে ফিরে যাচ্ছে। আমরা শুধু চাই, ওকে যেন খুঁজে পাওয়া যায়। মা-বাবা ওকে এখানে পাঠিয়েছিলেন যেন ভালো শিক্ষা পায়, ভালো মানুষ হয়।’

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]