বোতল বা কন্টেনারে থাকা ত্রিভুজ বলে দেবে রোজ কতটা বিষ ঢুকছে আপনার শরীরে

আপলোড সময় : ২৬-১০-২০২৫ ০৪:০৯:২৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৬-১০-২০২৫ ০৪:০৯:২৩ অপরাহ্ন
ঘরে-বাইরে এখন প্লাস্টিকের দাপট। রান্নাঘর থেকে অফিস, সব জায়গাতেই প্লাস্টিকের বোতল, পাত্র, প্যাকেটের রাজত্ব। খাবার রাখা, জল রাখা, এমনকি চা বা কফি খাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকেই অবলীলায় ব্যবহার করেন প্লাস্টিকের বোতল বা কাপ। অথচ এই প্রতিদিনকার অভ্যাসই যে শরীরের ভিতরে ধীরে ধীরে বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে, তা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না।

প্রতিটি প্লাস্টিকের বোতল বা পাত্রের গায়ে নীচের দিকে একটি ত্রিভুজ আকৃতির চিহ্ন থাকে, যা অনেকেই খেয়ালই করেন না বা এটা কেন আছে তা জানেন না। এই ত্রিভুজ আসলে পুনর্ব্যবহারযোগ্যতার প্রতীক, আর তার ভেতরে থাকা সংখ্যা জানিয়ে দেয়, বোতলটি কতটা নিরাপদ এবং সেটি কতবার ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই সংখ্যা সাধারণত ১ থেকে ৭ পর্যন্ত হয়। প্রতিটি সংখ্যার মানে আলাদা, আর সেই মানেই নির্ধারণ করে দেয় কোন বোতলে রাখা জল আপনার শরীরের পক্ষে বিষের সমান হয়ে উঠতে পারে।

নম্বরের ফাঁদে লুকিয়ে আছে প্লাস্টিকের মান
যদি ত্রিভুজের মধ্যে ‘১’ লেখা থাকে, তাহলে বোতলটি পলিথাইলিন টেরেপথ্যালেট (PET)-এর তৈরি। এই প্লাস্টিকের বোতল কেবল একবার ব্যবহারযোগ্য। বারবার ব্যবহার করলে এর ভিতর থেকে এক ধরনের বিষাক্ত উপাদান জল বা খাবারের সঙ্গে মিশে শরীরে ঢোকে। গরম বা রোদে থাকলে এই ক্ষতিকর রাসায়নিক আরও দ্রুত বেরিয়ে আসে।

ত্রিভুজের মধ্যে লেখা ‘২’  বোঝাতে চায়, সেটি ঘন বা অস্বচ্ছ এইচডিপিই (HDPE) পলিথিন। এই জাতীয় প্লাস্টিক সাধারণত ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু বা টয়লেট ক্লিনারের বোতলে ব্যবহৃত হয়। ফলে এতে খাবার বা জল রাখা একেবারেই নিরাপদ নয়।

‘৩’ লেখা থাকলে বুঝতে হবে সেটি পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি (PVC)। রান্নার তেলের বোতল, খাবারের মোড়ক প্রায়শই এই ধরনের প্লাস্টিকের হয়। একবারের বেশি ব্যবহার একেবারেই নয়।

‘৪’ নম্বরের বোতল তৈরি হয় এলডিপিই (LDPE) দিয়ে। এতে বারবার জল রাখা যায়, তবে সপ্তাহখানেকের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়।

‘৫’ লেখা মানেই পলিপ্রোপিলিন (PP)। এই ধরনের বোতল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। জল, সিরাপ, সসের বোতল- এগুলো এই প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়।

‘৬’ ও ‘৭’ নম্বর প্লাস্টিক সবচেয়ে ক্ষতিকর। ‘৬’ মানে পলিস্টিরিন (PS), যা দিয়ে বানানো হয় ডিসপোজেবল কাপ, প্লেট, টেকঅ্যাওয়ে খাবারের বাক্স ইত্যাদি। গরম খাবার বা চা এই পাত্রে রাখলে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা থাকে। ঘুমের ব্যাঘাত, বমি ভাব, ক্লান্তি, এই সব লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

আর ‘৭’ লেখা মানে পলিকার্বোনেট, যা কম্পিউটার, চশমা, এমনকি বড় জলের ক্যান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের প্লাস্টিক শরীরে ঢুকলে ক্যানসার, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।

তাই মনে রাখবেন, ২, ৪ ও ৫ নম্বর বোতল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, ১ নম্বরটিও একবার ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু ৬ ও ৭ নম্বর বোতল একেবারে এড়িয়ে চলুন।

প্লাস্টিকের বোতলের জল আসলে কতটা বিষাক্ত?
গরমে বা রোদে রেখে দেওয়া প্লাস্টিক বোতলে থাকা জল গরম হয়ে যায়, আর সেই সময় প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক উপাদানগুলো জলে মিশে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এতে থাকা Biphenyl-A (BPA) নামের রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করলে ডায়াবেটিস, মেদ, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি মানসিক জটিলতা পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়া, প্লাস্টিকের জল বোতল থেকে থ্যালেট নামের আরেকটি রাসায়নিক বেরিয়ে আসে, যা লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা কমায়।

এই জলে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ধীরে ধীরে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে ঘন ঘন অসুখ, ত্বকের সমস্যা, ক্লান্তি ইত্যাদি দেখা দেয়। তাই রোদে রাখা বোতলের জল আরাম করে খাওয়া মানে নিজের শরীরে প্রতিদিন বিষ ঢোকানো।

জলের বোতলের মেয়াদ কেন থাকে জানেন?
অনেকে ভাবেন, জলের তো মেয়াদ হয় না! কিন্তু বোতলের গায়ে মেয়াদ থাকে বোতলের জন্য, জলের জন্য নয়। সময়ের সঙ্গে প্লাস্টিকের গুণাগুণ নষ্ট হয়, ক্ষতিকর রাসায়নিক বেরিয়ে আসে, যা জলের সঙ্গে মিশে শরীরে যায়। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ বোতলের জল খাওয়া বিপজ্জনক।

তাহলে কোন বোতল নিরাপদ?
প্লাস্টিকের বদলে স্টিল, তামা বা এই ধরনের বোতল ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। স্টিলের বোতল হালকা, টেকসই এবং জলের গন্ধ বা স্বাদ বদলায় না। অ্যালুমিনিয়ামের বোতলও ব্যবহার করা যায়, তবে গরম বা ঠান্ডা তরলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে শরীরে ক্ষতি করতে পারে।

তামার বোতল অনেকেই ব্যবহার করেন। তামায় থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজম ভাল করে। তবে অ্যাসিডযুক্ত পানীয় (যেমন লেবুজল) রাখলে তামা প্রতিক্রিয়া করে ক্ষতি করতে পারে।

সবচেয়ে ভাল হয় যদি ফুড-গ্রেড, ডাবল ওয়াল্ড স্টিলের ইনসুলেটেড বোতল ব্যবহার করা হয়। তাতে গরম বা ঠান্ডা জল দু’ভাবেই রাখা নিরাপদ।

আরও বিপদ কাগজের বা প্লাস্টিকের কাপেও
চায়ের দোকানে আজকাল কাচের গ্লাসের জায়গা নিয়েছে প্লাস্টিক বা কাগজের কাপ। এগুলি সুবিধাজনক ঠিকই, কিন্তু শরীরের জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, এই কাপের ভেতরে থাকে এক ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক ফিল্ম- হাইড্রোফোবিক কোটিং। গরম চা ঢাললেই সেটি দ্রবীভূত হয়ে চায়ে মিশে যায়। এর মধ্যে থাকা বিসফেনল নামের টক্সিন লিভার ক্যানসারের কারণ হতে পারে এবং মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।

তাই, মাটির ভাঁড় বা কাচের গ্লাসই সব দিক থেকে নিরাপদ বিকল্প।

মোদ্দা কথা প্লাস্টিক আমাদের জীবন থেকে মুছে ফেলা এখন প্রায় অসম্ভব, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ তো আমাদের হাতেই। যে জিনিসটি আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করছি, তা দিয়ে নিজেদের শরীরে বিষ জমাচ্ছি কি না, সে প্রশ্নটাই আজ আমাদের ভাবতে হবে। বোতলের তলায় ছোট্ট একটি ত্রিভুজ চিহ্নই হয়তো জানিয়ে দিচ্ছে- আপনি নিরাপদ জল বা খাবার খাচ্ছেন, না কি বিষ।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]