কান থেকে প্রথম জুরি পুরস্কার বাংলাদেশে!

আপলোড সময় : ২৯-০৫-২০২৫ ০৮:১৬:২২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৯-০৫-২০২৫ ০৮:১৬:২২ অপরাহ্ন
বয়স ৩৮। আদ্যন্ত বাঙালি। পাতে ভর্তা, মাছ-ভাত চাই-ই চাই। ইনস্টাগ্রামে বাস করেন ‘প্রিয় আদনান ভাই’ নামে। ছবি বানান নোয়াখালির গায়ককে নিয়ে। পুরস্কার পান কান চলচ্চিত্র উৎসবে। আদনান আল রাজীব এ বছর বাংলাদেশের জন্য এই প্রথম কান থেকে নিয়ে এলেন বিশেষ জুরি পুরস্কার। কান-এ প্রদর্শিত হল তাঁর ছোট ছবি ‘আলি’। মাত্র ১৫ মিনিটের ছবি। আর তাতেই বাংলাদেশের জল-মাটি, সবুজ ঘাস আর শালুকফুলে রঙিন হয়ে উঠেছিল এ বারের কান-এর বাজ়াঁ থিয়েটার।

এই ছোট ছবি ঘিরে শুধুই গান। যে গান উঠবে গলা বেয়ে, মনের খেয়ালে। গান কোনও কাঁটাতার, কোনও দেশ মানে না। গানের কথাই বলতে থাকে ‘আলি’র গল্প।

নিজেকে বাঙালি হিসাবে পরিচয় দিতেই সব থেকে বেশি ভালবাসেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক রাজীব। গত ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে হয়েছে জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজ়াবিন চৌধুরীর সঙ্গে। আর চলতি মে মাসে কান চলচ্চিত্রোৎসব থেকে তিনি প্রথম বার বাংলাদেশের জন্য নিয়ে এসেছেন বিশেষ জুরি পুরস্কার।

পুরস্কার জেতার পর রাজীবের সঙ্গে প্রথম কথা বলে আনন্দবাজার ডট কম। ফ্রান্স থেকেই রাজীব জানালেন, দেশের মানুষ, দেশের প্রকৃতি, জীবন তাঁর ছবির বিষয়। কথা বলার সময় নিজেকে বার বার ‘বাঙালি’ বলে চিহ্নিত করতে থাকেন তিনি। আক্ষেপ করে বললেন, “আমরা এখন ছবিতে আর বাঙালির গল্প বলি না। আমার চারপাশ এবং বিদেশের দিকে তাকিয়ে, তাদের মতো করে গল্প বলার চেষ্টা করি। বিদেশিরা কী ভাবে ছবি বানাচ্ছেন, সেটাকেই যেন নকল করতে চাই।”

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবিও দেখেন রাজীব। ফলে তাঁর উপলব্ধিতে উঠে আসে দুই বাংলার কথা। হয়তো তার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে রাজীব ভাবেন দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিজস্ব সংস্কৃতির কথা। তিনি বলেন, “আমাদের শিকড় রয়েছে। একসময় সেই শিকড়ের গল্প বলত আমাদের ছবি। এখন আমরা যে নকলনবিশি করছি, সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। শিকড় ভুলে গেলে আমাদের অস্তিত্বও তো ভুলতে বসব, আমাদের পরিচিতিও নষ্ট হয়ে যাবে।”

৭৮তম কান চলচ্চিত্রোৎসবে ১১টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল প্রদর্শনের জন্য। তার মধ্যেই বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছে ‘আলি’। কী ভাবে তৈরি হল ১৫ মিনিটের এই ছবি?

সে গল্প বলতে গিয়ে রাজীব ফিরে যান ৭৭তম কান-এর ইতিহাসে। সে বার তিনি ছোট ছবি ‘র‌্যাডিক্যাল্‌স’ নিয়ে গিয়েছিলেন ফরাসি চলচ্চিত্রোৎসবে। এক বন্ধুর মধ্যস্থতায় ফিলিপিন্সের পরিচালক আরভিন বেলারমিনোর ছবিতে সহ-প্রযোজক হিসাবে কাজ করেন। আর তখনই তাঁর মনে হয় বাংলাদেশের কথা। মনে হয়, বাংলাদেশের মৌলিক গল্পকেও তো তিনি তুলে ধরতে পারেন আন্তর্জাতিক পর্দায়!

বেশি সময় নেননি। ২০২৪-এর অক্টোবরেই শুরু হয়ে যায় ‘আলি’র কাজ। কিশোর নায়কের চরিত্রে আল আমিনকে খুঁজে বের করা হয় সমাজমাধ্যম ঘেঁটে। কিন্তু শুটিংয়ের কাজ সহজ ছিল না। আল আমিনের মুখ আর কণ্ঠস্বর দিয়ে তিনি তাঁর দেশের কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু সিলেটের প্রত্যন্ত গ্রামের চরিত্র হয়ে উঠতে তাঁকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। রাজীব বলেন, “আমিনকে আমরা তিন-চার দিন রোদে বসিয়ে গায়ের রঙে একটা কালচে পরত এনেছি। যাতে গ্রাম্য চেহারাটি আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। আমরা রাত ২টোয় ঘুম থেকে উঠে প্রায় ঘণ্টা তিন সফর করে যেতাম শাপলা বিলে। সেখানে ভোর ৪টে থেকে সকাল ৬টার মধ্যে সেরে ফেলতে হত শুটিং। না হলে রোদের ছোঁয়া লেগে শাপলা মুড়ে যাবে।”

সিলেটের রাস্তাঘাট এখনও তেমন ভাল নয়, উন্নত নয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই মোটরবাইকে চড়েই যাতায়াত করতে হত গোটা দলকে, জানিয়েছেন রাজীব। প্রথম বারেই পুরস্কার বাঙালি পরিচালকের হাতে। তাঁর কথায়, “বিদেশি ছবি দেখলে মনে হয়, এ ভাবেই তো তৈরি করতে হয়! আমিও তো এ ভাবে পারি। কিন্তু দিনের শেষে নিজের ঘরে ফিরে এলেই মনে হয়, আমি বাঙালি। আমার ছবিতে আমি বলব বাঙালির গল্প।”

তাঁর কথায়, তিনি এমন গল্প বলতে চেয়েছেন, যা দেখলে মনে হবে, এ ঘটনা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে ঘটতে পারে। কিন্তু দৃশ্যায়ন, চরিত্র বা তার পোশাক বলে দেবে, এ গল্প বাঙালির গল্প।

‘আলি’ ছবিটি নিয়ে আরও বেশ কিছু উৎসবে যোগ দেবেন এই বাঙালি পরিচালক। তাই তার গল্পের আড় ভাঙতে চান না খুব বেশি। স্বল্প দৈর্ঘ্য বা তথ্যচিত্রের পাশাপাশি তিনি হাত দিতে চলেছেন পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবির কাজে। কানের সাফল্যের পর সেই সুযোগ যে বেশ খানিকটা বাড়বে তা মনে করছেন রাজীব। তিনি জানিয়েছেন, অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। গল্প লেখার কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে কথাবার্তা চলছে প্রযোজনার জন্য।

স্ত্রী মেহজ়াবিনের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও, উপযুক্ত চরিত্র ছাড়া কোনও কাজ তাঁকে দিতে চান না রাজীব। বলেন, “আমাদের রাস্তা আলাদা। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে অবশ্যই এক সঙ্গে কাজ করব। এটা আমার স্বপ্ন।”

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]