রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া চত্বরের ভাস্কর্য এখন শুধুই স্মৃতি

আপলোড সময় : ০৯-১১-২০২৫ ১২:১৩:১২ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৯-১১-২০২৫ ১২:১৩:১২ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম পরিচিতি ও ঐতিহ্যের ধারক ‘ঘোড়া চত্বর’-এর বিখ্যাত ভাস্কর্যটি এখন শুধুই স্মৃতি। একদা নগরীর পুরনো জনপদের প্রতিচ্ছবি বহনকারী এই ভাস্কর্যটি এখন আর তার স্বস্থানে নেই, যা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা দীর্ঘশ্বাস। সময়ের পরিক্রমায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক স্মৃতিচিহ্ন হারিয়ে গেলেও, শহরের পরিচিত এই ভাস্কর্যটির অন্তর্ধান অনেককেই ব্যথিত করেছে।

রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর মোড়ে ‘ঐতিহ্য চত্বর’ নামে পরিচিত এই স্থানটিতে ঘোড়ার গাড়ির একটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। একটা সময় ছিল যখন রাজশাহীর মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল ঘোড়ায় টানা ‘টমটম’ গাড়ি। তাই ‘টমটমের শহর’ নামেই পরিচিতি পেয়েছিল পদ্মাপাড়ের এই রাজশাহী। কালের আবর্তে সেই টমটম এখন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্যকে স্মরণীয় করে রাখতেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করেছিল।

শিল্পী ফয়সাল মাহমুদের তৈরি ঢালাই ও ফাইবার সিটের এই ভাস্কর্যটি নির্মাণে সময় লেগেছিল দুই বছর এবং ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৭ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে চত্বরটি রাজশাহীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান ও আড্ডার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

সম্প্রতি ভাস্কর্যটি তার স্থান থেকে অপসারিত হওয়ায় চত্বরটি এখন ফাঁকা। কেন বা কীভাবে এটি সরানো হলো, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এর চোখে দৃষ্টিকটূ হওয়ায় নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ঐতিহ্যবাহি ঘোড়া চত্বরটি অপসারন করা হয়। নগরীর রেলগেটের একটি ভাস্কর্য উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। একই কায়দায় সেই ভাস্কর্যটি ভেঙ্গে একই স্থানে নতুন ভাস্কর্য নির্মাণ করেন সাবে মেয়র লিটন। গত সাড়ে ১৫ বছরে এই রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে রাজশাহী মহানগরীতে। 

তবে ‘ঘোড়া চত্বর’-এর বিখ্যাত ভাস্কর্যটি ছিল রাজশাহীর পুরনো দিনের প্রতিচ্ছবি, যা নতুন প্রজন্মের কাছে শহরের ইতিহাস তুলে ধরত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ নাগরিক বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি এই রাস্তা দিয়ে কেমন করে টমটম চলত। ভাস্কর্যটি দেখে সেই স্মৃতি মনে পড়ত। এখন এটি না থাকায় মনে হচ্ছে, আমাদের ইতিহাস থেকে একটি পাতা ছিঁড়ে ফেলা হলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণও জরুরি। একটি শহরের পরিচিতি তার ঐতিহাসিক স্থাপনা ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে অনেকাংশে ফুটে ওঠে। ঘোড়া চত্বরের ভাস্কর্যটি তেমনই একটি স্মারক ছিল, যা রাজশাহীর ঐতিহ্যকে ধারণ করত।

ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন কমে গেলেও, বিভিন্ন উৎসব বা শোভাযাত্রায় এখনও রাজশাহীতে টমটমের দেখা মেলে। এই ভাস্কর্যটি সেই ঐতিহ্যকেই প্রতিদিন মানুষের সামনে তুলে ধরত। এর অনুপস্থিতি নগরীর সংস্কৃতি ও ইতিহাসের একটি শূন্যতা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

ভাস্কর্যটির ভবিষ্যৎ কী বা এর বদলে নতুন কিছু স্থাপন করা হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে রাজশাহীবাসীর হৃদয়ে ঘোড়া চত্বরের সেই স্মৃতি অমলিন থাকবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]