রাজশাহীতে বৃষ্টিতে সাড়ে ১০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট

আপলোড সময় : ০৯-১১-২০২৫ ০৩:৩৪:৫৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৯-১১-২০২৫ ০৩:৩৪:৫৪ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে অসময়ে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিতে অকাল বন্যায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার ফসলহানি হয়েছে। হেমন্ত ঋতুর আগে এমন বৃষ্টি এই এলাকার কৃষক চার দশকের মধ্যে দেখেননি।

ধান কাটার আগ মুহূর্তে সব শেষ, জমির ধানগাছ নুয়ে পড়েছে একই সঙ্গে জলাবদ্ধতায় ধানগাছ পানির নিচে। জমির সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন তানোরের কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) ছাঐড় গ্রামের কৃষক আব্দুল। ‘বাজারে মুলা তোলার আগেই সব শেষ হইয়া গেল- এই যে জমি, এখন শুধু পানি আর পানি।’ জমির সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক রাব্বানী মন্ডল। রাব্বানীর চোখের কোণে পানি, পায়ের নিচেও হাঁটুসমান পানি। একসময় যে জমিতে ভরে উঠেছিল মুলার গাছ, সেই জমি এখন ডুবে আছে বৃষ্টির পানিতে।

নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এখনও এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা, তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে।টানা দুই দিনের ওই বৃষ্টিতে জেলার হাজারো কৃষক এখন বড় ক্ষতির মুখে। শাকসবজি, ঢেঁড়স, মুলা, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে আমন ধান- সব ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানা গেছে, কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ৪ হাজার ২০০ জন। দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েকগুন বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, ১৯৮৬ সালের পর এমন বৃষ্টি আর কখনো দেখেননি তারা।

সরেজমিন তানোর উপজেলার সরনজাই ইউপির তাতিহাটি, নবনবী, কলমা ইউপির আজিজপুর,নড়িয়াল, ঘৃতকাঞ্চন,চন্দনকৌঠা,কামারগাঁ ইউপির মালশিরা, হাতিশাইল, নেজামপুর,পাঁচন্দর ইউপির কৃষ্ণপুর, বনকেশর, চককাজিজিয়া,তানোর পৌরসভার গোকুল ,কুটিপাড়া, শীতলীপাড়া। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ও মোহনপুর ইউনিয়নের (ইউপি) বিভিন্ন এলাকা। মোহনপুর উপজেলার ঘাষিগ্রাম,ধুরইল,রায়ঘাটি ও মৌগাছি ইউনিয়নের (ইউপি) বিভিন্ন এলাকা।

পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক রাব্বানী মন্ডলের সঙ্গে। মুখে বিষণ্ণতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি এবার হইছে। এখনো পানি নামেনি। পাঁচ বিঘা জমি পানির নিচে। চারপাশে পুকুর, পানি নামারও পথ নাই।’ রাব্বানী আরও বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব কৃষকের জন্য এই প্রণোদনাই এখন একমাত্র ভরসা। সরকার যদি পাশে থাকে, তাহলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব। তা না হলে কঠিন হবে।

পবা উপজেলার শিয়ালবেড়, পাইকপাড়া, দাদপুর ও মুরারীপুর গ্রামের মাঠজুড়ে একই চিত্র। যেদিকে চোখ যায়, এখনও চোখে পড়ে কেবল পানি। কোথাও ধান হেলে পড়েছে, কোথাও শাকসবজি ডুবে আছে পানির নিচে। পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১২ কাঠা জমিতে শাক-সবজি করেছিলাম, বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এমন সময় তো বৃষ্টি হয় না।’

একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক এক বিঘা জমিতে বি-৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটার আগেই নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে পানি উঠেছে, বাতাসে ধানের গাছ হেলে পড়েছে। মাঠে দেখা গেল, কৃষকরা কাদামাটি মাড়িয়ে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন। সেখানে তাঁর ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, ‘এই বৃষ্টিতে অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পরে বৃষ্টি হইলে এই সর্বনাশ হতো না।’

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমএ মান্নান বলেন, ‘নভেম্বরের শুরুতেই যে বৃষ্টি হয়েছে, সেটি মূলত নিম্নচাপজনিত। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।’তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন জমি শুকিয়ে দ্রুত নতুন ফসল লাগাতে পারেন। ইতিমধ্যে সরিষা, গম, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রণোদনা এলে তা বিতরণ করা হবে।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]