চলতি বছর অবৈধ পথে ইতালি প্রবেশ করেছে ১৮ হাজার বাংলাদেশি: রাষ্ট্রদূত

আপলোড সময় : ১০-১১-২০২৫ ০৪:০৩:১১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১০-১১-২০২৫ ০৪:০৩:১১ অপরাহ্ন
চলতি বছরে ১৮ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ পথে লিবিয়া হয়ে ইতালি প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো। একই সঙ্গে চলতি বছরে ৯ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে ভিসা দেওয়ার তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ‘সম্পর্ক জোরদার: বাংলাদেশ-ইতালির ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি’- শীর্ষক একটি কান্ট্রি লেকচার সিরিজে দেওয়া বক্তব্যে এ তথ্য জানান রাষ্ট্রদূত।

রাষ্ট্রদূত জানান, ২০২৫ সালে ১৭ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ পথে লিবিয়া হয়ে ইতালি প্রবেশ করেছে। প্রতিদিনই অবৈধ পথে বাংলাদেশিরা ইতালি প্রবেশ করছে। আজকের দিন সহ হিসাব করলে এ বছর অবৈধ পথে ইতালি প্রবেশ করেছে ১৮ হাজার বাংলাদেশি। বাংলাদেশিদের অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করে থাকে, যাদের অনেকের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিধিমোতাবেক যথাযথ কারণ বা কাগজপত্র নেই। অনেকে বাংলাদেশে কোনো বৈষম্যের স্বীকার না হয়েও রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করছে।

আন্তোনিও আলেসান্দ্রো বলেন, বাংলাদেশের পাবলিক ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এমন ডকুমেন্টও আমাদের কাছে আসে যেটা সরকারি অফিসের ইস্যু করা; কিন্তু আদতে দেখা যায় সেটা ভুল তথ্যের ডকুমেন্ট। এ কারণে কনস্যুলার সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় যারা অবৈধ পথে যাচ্ছে তাদের ভুক্তভোগী বলা হয়, কিন্তু আসলে তারা ভুক্তভোগী না। যারা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া হয়ে ইতালি প্রবেশ করতে দালালকে ৫০ হাজার ইউরো দিয়ে যায়, তারা সব জেনেই যায়।  

তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্কের মূল জায়গা কিন্তু অভিবাসন। আমরা অভিবাসন ইস্যুতে গুরত্বপূর্ণ সহযোগী। কিন্তু অভিবাসন হতে হবে বৈধ পথে। অবৈধভাবে ইতালিতে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলে বাংলাদেশের পাসপোর্ট প্রভাব পড়ে। অনেক বাংলাদেশি বৈধ পথে অভিবাসন করছে না, যেটা আমাদের দুপক্ষের জন্য ভালো না। আমরা স্বল্প পরিমাণে অবৈধ অভিবাসীকে প্রত্যাবাসন করছি। কিন্তু এখন আমরা এই সংখ্যাটা বাড়াবো।

রাষ্ট্রদূত জানান, চলতি বছর ইতালি ৯ হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে। আগে ইতালি বছরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গড়ে শ’খানেক ভিসা দিলেও এ বছর সেটি ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর ৫৩০ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ইতালি।

রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলেও প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আমাদের সমর্থন থাকবে। আমরা মনে করি, সংস্কারের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরবে। এর ফলে, কাউকে ভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে না। আমাদের চাওয়া বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা এবং সাফল্য আসুক।

এ সময় বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরনে রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পাবলিক ডকুমেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা খুব জরুরি। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ইতালির মাঝারি এবং ছোট কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু এখানে শুল্কের হার অনেক বেশি। সেজন্য আমি মনে করি, বিনিয়োগের শুল্কের হার কমিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ইতালিতে যায়, আবার ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতালি থেকে কিছু যন্ত্র বাংলাদেশ আমদানি করে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আন্তোনিও আলেসান্দ্রো বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালির প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রয়েছে। আমাদের মধ্যে যে অংশীদারিত্ব রয়েছে বা ভূরাজনীতির কারণে ইতালি কোনো দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে না। যদি বাংলাদেশ প্রয়োজন বোধ করে, তখনই ইতালি থেকে অস্ত্র কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। 

চলতি বছরের আগস্টের শেষের দিকে বাংলাদেশসহ এশিয়ার পাঁচটি দেশ সফর করার কথা ছিল ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্য়িা মেলোনি। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চলমান আলোচনা সংক্রান্ত ব্যস্ততার কারণে ওই সময়ে এশিয়ার সফর বাতিল করেছিল মেলোনি। খুব দ্রুতই ইতালির প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, আগস্টে ঢাকা থেকে এশিয়া সফর শুরু করার কথা ছিল ইতালির প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু সেই সফর স্থগিত করা হয়। উনি আসবেন। যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা সফর করবেন। তবে এ বছর হয়তো সফরটি হবে না।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দা রোজানা রশিদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ইউরোপ ও সিআইএস এবং পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউর মহাপরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]