‘ক্ষুধার রাজ্য’ গাজ়ায় দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারেন আড়াই কোটি মানুষ

আপলোড সময় : ০১-০৬-২০২৫ ১২:১৫:২৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০১-০৬-২০২৫ ১২:১৫:২৪ অপরাহ্ন
এই মুহূর্তে পৃথিবীর ‘ক্ষুধার্ততম স্থান’ গাজ়া। পরিস্থিতি এমনই যে, শীঘ্রই তা দুর্ভিক্ষের আকার নিতে পারে। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারেন আড়াই কোটি মানুষ। এ বার এমনই আশঙ্কার কথা জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ। শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, বর্তমানে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে গাজ়ায় প্যালেস্টাইনিদের সাহায্য অভিযান সাম্প্রতিক ইতিহাসে সব থেকে বেশি বাধার মুখে পড়েছে। এ জন্য ইজ়রায়েলকে ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’ ত্রাণ প্রবেশে বাধা না দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছে তারা।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবিক বিষয়াবলী সমন্বয় দফতরের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র জেন্স লারকের কথায়, ‘‘আমরা যে সাহায্য অভিযান পরিচালনা করার চেষ্টা করছি, তা গত কয়েক দিনে সব চেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন নজির আর নেই।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ইজ়রায়েলের কারেম আবু সালেম কিংবা ‘কেরেম শালোম’ এলাকা দিয়ে প্রাথমিক ভাবে ৯০০টি ত্রাণবোঝাই ট্রাককে গাজ়ায় প্রবেশের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদতে তার মধ্যে ৬০০টিরও কম ট্রাককে গাজ়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণও নেই। ফলে খাদ্যের জন্য কার্যত হাহাকার পড়ে গিয়েছে গাজ়ায়।

এমনই এক বাস্তুচ্যুত প্যালেস্টাইনি সংবাদমাধ্যম ‘আল জ়াজ়িরা’কে বলেন, “আমাদের কাছে আটা নেই, তেল নেই, চিনি নেই, খাবার নেই। রোজ বাসি রুটি জোগাড় করে সন্তানদের খাওয়াতে হচ্ছে। আমি আর কিচ্ছু চাই না, শুধু আমার সন্তানদের জন্য একটু আটা চাই। নিজেও খেতে চাই। আমি ক্ষুধার্ত।” আর এক বাস্তুচ্যুত প্যালেস্টাইনি আবদুল কাদের রাবির কথায়, ‘‘আটা, রুটি, খাবার— কিচ্ছু নেই আমাদের বাড়িতে। যখনই আমি ত্রাণ নিতে যাই, শত শত মানুষ ভিড় করেন। কেউ কেউ ধাক্কাধাক্কি করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বেশির ভাগেরই কিছুই জোটে না। যদি তুমি শক্তিশালী হও, তাহলেই তুমি ত্রাণ পাবে। আর যদি তা না পারো, তা হলে খালি হাতেই ফিরতে হবে।’’ ‘আল জ়াজ়িরা’ সূত্রে খবর, গাজ়া শহর-সহ উপত্যকার সমগ্র উত্তরাঞ্চলে গত কয়েক দিনে ‘এক ফোঁটাও সাহায্য পৌঁছয়নি’। দক্ষিণ গাজ়ার খান ইউনিস এবং রাফার বাসিন্দাদেরও রোজ খাদ্যের সংস্থান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রসঙ্গত, প্রায় তিন মাস অবরোধের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ‘সীমিত পরিমাণে’ ত্রাণ গাজ়ায় প্রবেশে অনুমতি দিয়েছে ইজ়রায়েল। তবুও, রাষ্ট্রপুঞ্জের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকের মতে, চাহিদার তুলনায় এই ত্রাণ খুবই সামান্য। তিনি বলেন, ‘‘গাজ়ার বর্তমান পরিস্থিতি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে খারাপ।’’

এরই মাঝে গত ২৪ ঘণ্টায় গাজ়ায় নতুন করে আরও ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। খান ইউনিসে একটি অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে ইজ়রায়েলি ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, গাজ়ার বিভিন্ন হাসপাতালে দিনভর অন্তত ৬০টি দেহ এসে পৌঁছেছে। পাশাপাশি, অন্তত ২৮৪ জন আহতকেও নিয়ে আসা হয়েছে হাসপাতালে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আল কাশিম ব্রিগেড ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালানোর পরে নেতানিয়াহুর ফৌজ ধারাবাহিক ভাবে গাজ়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এর পর কাতারের মধ্যস্থতায় এবং আমেরিকা ও মিশরের প্রচেষ্টায় গত ১৫ জানুয়ারি রাতে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল ইজ়রায়েল সরকার এবং হামাস। ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরও হয়েছিল। কিন্তু পণবন্দি মুক্তি ঘিরে টানাপড়েনের জেরে মার্চের গোড়ায় একতরফা ভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজ়ায় আবার হামলা শুরু করেছে ইজ়রায়েলি সেনা। তার পর থেকে প্রায় প্রতি দিনই গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলা চলছে। এমনকি, গাজ়া ভূখণ্ড পুরোপুরি দখলের কথাও ঘোষণা করেছেন নেতানিয়াহু। তবে প্রায় তিন মাস পরে সপ্তাহখানেক আগে অবরুদ্ধ গাজ়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের ত্রাণবাহী ট্রাক ঢোকার অনুমতি দেয় নেতানিয়াহু সরকার। তবুও, শুধু জল খেয়েই দিন কাটছে গাজ়ার শিশুদের! খুদে শিশুদের পেট ভরানোর জন্য বার বার জল খাওয়াচ্ছেন বাবা-মা। গাজ়াবাসীরা বলছেন, একটু আটার জন্য তাঁরা সব কিছু করতে রাজি।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]