স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের সঙ্গে তর্কে 'টক অফ দ্য কান্ট্রি' ডা. ধনদেব: কে এই চিকিৎসক?

আপলোড সময় : ০৯-১২-২০২৫ ০৬:০০:০৮ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৯-১২-২০২৫ ০৬:০০:০৮ অপরাহ্ন
 

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও): সম্প্রতি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে উঠে আসা চিকিৎসক ডা. ধনদেব বর্মনের ঘটনাটি এখন 'টক অফ দ্য কান্ট্রি'। ঘটনাটির জেরে তিনি সাময়িক অব্যাহতির সম্মুখীন হলেও নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে তিনি বরাবরই শিক্ষিত, ন্যায়পরায়ণ ও আদর্শবাদী মানুষ হিসেবে সমাদৃত। স্থানীয় জনমত এবং তাঁর শিক্ষাজীবনের সাক্ষ্য অনুযায়ী, এই চিকিৎসক অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার নীতিতে অটল— যা তাঁর বর্তমান আচরণের প্রেক্ষাপট বুঝতে সাহায্য করছে।

আলোচনার সূত্রপাত: বিতর্কের নেপথ্যে জনবল সংকট

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৬ ডিসেম্বর, যখন স্বাস্থ্য মহাপরিচালক আবু জাফর ময়মনসিংহে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে তিনি জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার (ওটি) এবং রোগীসেবা বিষয়ক কয়েকটি ত্রুটি উল্লেখ করেন।

এ সময় ওটি বিভাগের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ডা. ধনদেব বর্মন সরাসরি জনবল-সংকট, অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তাঁর এই স্পষ্টবাদী মন্তব্যের জেরে মহাপরিচালকের সঙ্গে তাঁর তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়, যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

  • ফলাফল: ঘটনার জেরে তাঁকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শোকজ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।

  • পরবর্তী পদক্ষেপ: পরদিন তিনি লিখিতভাবে তাঁর আচরণের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

নিজ এলাকায় আদর্শ ও মেধার প্রতীক

ডা. ধনদেব বর্মন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা গ্রামের মৃত বানেশ্বর বর্মনের সন্তান। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা বানেশ্বর বর্মনের ছয় সন্তানের সবাই সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

ডা. ধনদেবকে নিয়ে নিজ এলাকায় ও শিক্ষাজীবনে যে তথ্যগুলো উঠে এসেছে:

  • শিক্ষায় মেধা: তিনি পূর্ব বলদানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং রাজশাহী ওল্ডগর্মেন্ট কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

  • ধর্মীয় ব্যতিক্রম: তিনি ব্যতিক্রম হিসেবে স্কুল জীবনে হিন্দু ধর্মের পরিবর্তে ইসলাম ধর্মের বই পড়তেন এবং এসএসসি পরীক্ষায় ইসলাম ধর্মে লেটার মার্কস পেয়েছিলেন, যা সে সময় এলাকায় আলোচনার বিষয় ছিল।

  • শিক্ষকের দৃষ্টিতে: রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ জানান, "ধনদেব ছিল মেধাবী। সে কখনো রাজনীতি করত না, অন্যায়ও করত না। খুব প্রিন্সিপলড ছাত্র ছিল।”

  • পরিবারের মন্তব্য: তাঁর বড় ভাই, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক বিনোদ বর্মন জানান, "ছাত্রজীবনে সে যেমন ভালো পড়াশোনা করতো, তেমনি ছিল ভালো ফুটবলার। মেডিকেল কলেজসহ কোথাও সে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি। ধনদেব যে ন্যায়পরায়ন এটা আমাদের এলাকায় সকলেই জানে।”

ডা. ধনদেব রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৭ সালে এমবিবিএস পাশ করেন এবং স্বাস্থ্য বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হন।

জনমত: আদর্শের পক্ষে অবস্থান

ঘটনার পর তাঁর গ্রামের মানুষ, সহপাঠী ও শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সামাজিক মাধ্যমে তাঁর পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছেন। তাদের মতে, "ডা. ধনদেব কোনোদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না। তিনি ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও মানবিক একজন চিকিৎসক।” স্থানীয় জনমতে, "যে ছেলে ছাত্রজীবন থেকেই ন্যায় ও আদর্শে অটল, সে অন্যায় করার মানুষ নয়"– এমন কথাই শোনা যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ডা. ধনদেব বর্মনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বারণ থাকার কথা উল্লেখ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, "আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নই। দল করি না, আমি স্বাধীন চিন্তা ভাবনা করি।"

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]