মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির উদ্যোগে রচনা লিখন, চিত্রাংকন ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহীর নবাই বটতলা, মুরশইল, কলিমনগর, বাগানপাড়া, বাবুল ডাং ও মিঞাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত আদিবাসী শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির মিলনায়তনে প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন একাডেমির নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত। তিনি বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বিজয়ের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করতে হলে শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তোলার বিকল্প নেই। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের লেখনী, তুলির আঁচড় ও কণ্ঠের উচ্চারণে যে দেশপ্রেম ফুটে উঠেছে, তা আমাদের আশাবাদী করে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক হরেন্দ্র নাথ সিং। তিনি বলেন, “এই ধরনের প্রতিযোগিতা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও ইতিহাস চর্চার পথ সুগম করে। বিজয় দিবস আমাদের স্বাধীনতার চূড়ান্ত অর্জনের স্মারক—এই চেতনাকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে একাডেমি ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা বেঞ্জামিন টুডু। তিনি বলেন, সৃজনশীল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মি. সামসন হাঁসদা, একাডেমির নির্বাহী সদস্য শেলী প্রিসিল্লা বিশ্বাস, একাডেমির সংগীত প্রশিক্ষক মানুয়েল সরেন ও লুবনা রশিদ সিদ্দিকা। প্রতিযোগিতাগুলোর বিচারকার্যে দায়িত্ব পালন করেন সবিতা টুডু, শেলী বিশ্বাস, জোষ্টিনা মুর্মু, কলেসতিনে হাঁসদা, পৌল টুডু ও মমতা মার্ডি। তাঁরা জানান, শিক্ষার্থীদের রচনায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শহীদদের ত্যাগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ও বিজয়ের আনন্দ স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। চিত্রাংকনে লাল-সবুজের পতাকা, শহীদ মিনার, গ্রামবাংলা ও মুক্তিযোদ্ধাদের দৃশ্য ফুটে ওঠে। কবিতা আবৃত্তিতে ছিল আবেগ, দৃঢ়তা ও দেশপ্রেমের গভীর প্রকাশ।
উল্লেখ্য, রচনা লিখন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রানী এলিজাবেথ সরেন। দ্বিতীয় হন সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অনামিকা বেসরা এবং তৃতীয় হন ম্যাথিউ উৎস মারডী। চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় প্রথম হন ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী অনিক সরেন, দ্বিতীয় হন ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাথী টুডু এবং তৃতীয় হন চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তৃষ্ণা সরেন। কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী চম্পা বিশ্বাস, দ্বিতীয় হন সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রিসিলা প্রিয় হেমব্রম এবং তৃতীয় হন সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বৈশাখী হাঁসদা।