বরেন্দ্র অঞ্চলে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে বিষাক্ত উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম

আপলোড সময় : ০২-০৬-২০২৫ ০১:৪১:০৯ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০২-০৬-২০২৫ ০১:৪১:০৯ অপরাহ্ন
রাজশাহীর তানোরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের রাস্তার দু'পাশে ফসলেরখেত কিংবা বাড়ির আশপাশে ধনে পাতার মতো সবুজ গাছের ঝোঁপ শোভা পাচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে এটা নয়নাভিরাম দৃশ্য।

কিন্তু এই শোভা বাড়িয়েছে ভিনদেশি উদ্ভিদ(আগাছা)বিষাক্ত পার্থেনিয়াম। কয়েক বছর আগেও এর খুব একটা দেখা না মিললেও এখন সবত্র ছড়িয়ে পড়েছে পার্থেনিয়াম। বিষাক্ত এ আগাছায় ছেয়ে গেছে পুরো বরেন্দ্র অঞ্চল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক বলেন, গাছটির ফুলের রেণুতে রয়েছে রাসায়নিক পদার্থ। যা নিশ্বাসের সঙ্গে নাকে প্রবেশ করলে জ্বর, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। ক্ষতস্থানের মাধ্যমে রক্তে মিশে চর্মরোগও সৃষ্টি করে। যাদের অ্যালার্জি রয়েছে, এর রস তাদের চামড়ায় লাগলে ভয়াবহ রোগও হতে পারে।

এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, তানোর-সইপাড়া,তানোর-চৌবাড়িয়া, তানোর-আমনুরা রাস্তাসহ প্রায় প্রতিটি গ্রামীণ রাস্তার দু পাশে সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছের মত পার্থেনিয়াম জন্মেছে। দেখা মনে হয়, নিয়মিত পরিচর্যা করে এ গাছগুলো বড় করা হয়েছে। স্কুলগামী শিশুরা রাস্তার পাশের এই আগাছাকে ফুল ভেবে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা এ আগাছা ছাগল গরু চরণ করছেন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজশাহীর তানোর, দুর্গাপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পার্থেনিয়ামের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। পার্থেনিয়ামের সবচেয়ে পুকুর পাড়, অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক, আম বাগান, কৃষি জমি ও আঙিনায় ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত এ আগাছা।

জানা যায়, পার্থেনিয়ামের তথ্য অনুসন্ধানে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে আসেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ অ্যাডকিনস। তার সঙ্গে ছিলেন দেশের একদল কৃষি বিজ্ঞানী। তারা ওই সময় যশোর অঞ্চলে আগাছাটির উপস্থিতি প্রথম শনাক্ত করেন। প্রথম দিকে রাস্তার দুই পাশেই কেবল এ উদ্ভিদের উপস্থিতি চোখে পড়ত। পরে তা পতিত জমি ও ফসলের খেতে ছড়িয়ে পড়ে।

কৃষিবিজ্ঞানী ডা. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে পার্থেনিয়াম নিয়ে কাজ করছি। ২০১১ সালে যখন কাজ শুরু করি তখন অনেকের কাছেই বিষয়টি হাস্যকর মনে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। পার্থেনিয়াম এতটাই বিষাক্ত আগাছা মানুষের শরীরের স্পর্শে আসলে চর্ম রোগ হয়। ছাগল, গরু, ভেড়ার মত গবাদিপশুরা এ আগাছা খেলে মুখে ঘা ও ডায়রিয়া হয়। তিনি আরও বলেন, পার্থেনিয়াম ফসলের খেতে জন্মালে সে ফসলের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। একটি পার্থেনিয়াম গাছ থেকে ৬০ হাজার নতুন গাছের জন্ম হতে পারে। রাজশাহী ও যশোর এলাকায় এ আগাছার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
উপজেলার কামারগাঁ ইউপি এলাকার হালিমা বেগম জানান, পার্থেনিয়াম সর্ম্পকে আমাদের কোন ধারণাই নেই। আমরা এটার নামও আগে জানতাম না। ফুল ফুটে দেখতে সুন্দর লাগে। তাই পাশে বসেই গরু ও ছাগল চরণ করি। শিশু বাচ্চারাও এ গাছের ফুল নিয়ে খেলা করে।

উপজেলা কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, এ অঞ্চলে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম ছিল না। গত কয়েক বছর থেকে এটা ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই জানা না এটা বিষাক্ত বা স্বাস্থ্যর ক্ষতির কারণ। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নিদের্শ দিয়েছি।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক অথবা গরু মহিষের বিষ্টার সহিত হয়তো এর বীজ চলে এসেছে। রাজশাহীর তানোর, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট দ্রুত এর আগাছা ছড়িয়ে পড়েছে। ফসল ও পরিবেশ রক্ষায় এ আগাছা নিধনে আমাদের সকলের কাজ করা উচিত।#

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]