ইরানে কার দাপট বেশি?


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 09-10-2022

ইরানে কার দাপট বেশি?

হিজাব দিয়ে ‘ঠিকমতো’ চুল না ঢাকার অভিযোগে সম্প্রতি মাহসা আমিনি নামে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে গ্রেফতার করে ইরানের নৈতিক (মোরালিটি) পুলিশ। পরে কারাগারে থাকাবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। পুলিশের দাবি, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ওই তরুণী। তবে পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে মাহসার। এ ঘটনার জের ধরে ইরানজুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এখন প্রশ্ন: বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের এ সিদ্ধান্ত কার; দেশটিতে কে বেশি ক্ষমতাধর।

ইরানে ক্ষমতার স্তরবিন্যাস অনুযায়ী, দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তার অধীন রয়েছে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, দেশের বিচার বিভাগ, সংসদ, গার্ডিয়ান কাউন্সিল এবং সশস্ত্র বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনীর অধীন আছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। আবার পুলিশের অধীন রয়েছে নৈতিক পুলিশ। আর আইআরজিসির অধীন রয়েছে বাসিজ।


খামেনি কতটা ক্ষমতাধর?

ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ১৯৮৯ সাল থেকে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা তিনি। খামেনি জাতির প্রধান এবং সর্বাধিনায়ক। তিনি জাতীয় পুলিশ এবং নৈতিক পুলিশকে আদেশ দেয়ার ক্ষমতা রাখেন, যাদের কর্মকর্তারাই মাহসা আমিনিকে গ্রেফতার করেছিল।

ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির নিয়ন্ত্রণও আয়াতুল্লাহ খামেনির হাতে। আইআরজিসি এবং এর স্বেচ্ছাসেবী শাখা বাসিজ প্রতিরোধ বাহিনী মূলত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় নিযুক্ত। এ ছাড়াও যেকোনো বিক্ষোভ-প্রতিবাদ মোকাবিলায় আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রেও সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি খামেনি।


প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা

ইরানের সর্বোচ্চ নির্বাচিত কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। দেশটির ডেপুটি সুপ্রিম নেতাও তিনি। অর্থাৎ, আয়াতুল্লাহ খামেনির পরই অবস্থান রাইসির। সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশীয় ও পররাষ্ট্রনীতিতে রাইসির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তবে তার ক্ষমতা খুবই সীমিত, বিশেষ করে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে।

ইরানের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর তত্ত্বাবধান করে প্রেসিডেন্ট রাইসির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও পুলিশের কমান্ডার নিয়োগের এখতিয়ার শুধু খামেনির। আর সর্বোচ্চ এই নেতার কাছেই জবাবদিহি করতে হয় পুলিশ কমান্ডারকে। রাইসি রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) এবং বাসিজেরও কমান্ডার। তবে খামেনি কোনো বিক্ষোভ দমনের নির্দেশ দিলে সেখানে প্রেসিডেন্টের তেমন কিছু করার থাকে না এবং সর্বোচ্চ নেতার আদেশেই অনুসরণ করতে হয়। 


ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা যাচাই করা হয় পার্লামেন্টের মাধ্যমেও, যেখানে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। আবার আয়াতুল্লাহ খামেনির ঘনিষ্ঠ মিত্ররা থাকেন গার্ডিয়ান কাউন্সিলে, যারা নতুন আইন অনুমোদন ও ভেটো দিতে পারেন।


ইরানের নৈতিক পুলিশ কারা

ইরানের জাতীয় পুলিশের একটি শাখা নৈতিক পুলিশ। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর জারি হওয়া পোশাক সম্পর্কিত নীতি এবং ইসলামি আইন সমুন্নত রাখতে ২০০৫ সালে এ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রায় সাত হাজার নারী-পুরুষ নিয়ে এই নৈতিক পুলিশ বাহিনী গঠিত। সতর্কতা জারি, জরিমানা করা কিংবা সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করার ক্ষমতা রয়েছে তাদের।


হিজাবের নিয়ম কার্যকর করার জন্য চলতি গ্রীষ্মে বেশ কিছু নতুন ব্যবস্থা চালু করেন কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট রাইসি। হিজাব ব্যবহারের নিয়ম অমান্য করা নারীদের ‘চিহ্নিত’ করতে নজরদারি ক্যামেরা চালুর পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে হিজাবনীতির বিরোধিতাকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে ইরানে।


বিপ্লবী বাহিনী কারা?

রেভল্যুশনারি গার্ড (আইআরজিসি) বা বিপ্লবী বাহিনী ইরানের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী। ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর দেশের ইসলামি ব্যবস্থা সমুন্নত রাখতে এটি গঠন করা হয়। রেভল্যুশনারি গার্ড এখন একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক বাহিনী, যারা দেশটির রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। এই বাহিনীতে দেড় লাখের বেশি সৈন্য রয়েছে। নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী থাকা রেভল্যুশনারি গার্ড ইরানের কৌশলগত অস্ত্রেরও রক্ষণাবেক্ষণ করে।  

কুদস ফোর্স নামে একটি বিদেশি বাহিনীও রয়েছে আইআরজিসির, যারা গোপনে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের মিত্রদের অর্থ, অস্ত্র, প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণ দেয়। এটি বাসিজ প্রতিরোধ বাহিনীকেও নিয়ন্ত্রণ করে। 


বাসিজ বাহিনী কারা? 

১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বাসিজ প্রতিরোধ বাহিনী মূলত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ইরানের প্রতিটি প্রদেশ ও শহরে এবং দেশের অনেক সরকারি সংস্থায় তাদের শাখা রয়েছে। নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত এই সংগঠনের সদস্যরা বিপ্লবী গার্ড বা আইআরজিসির প্রতি অনুগত। বাসিজের প্রায় এক লাখ সদস্য ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন বলে ধারণা করা হয়।

ইরানে ২০০৯ সালের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে বাসিজ বাহিনী প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে জড়িত।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]