অসুস্থতায় দ্বিগুণ সওয়াব ও গুনাহ মাফের কারণ কী?


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 12-10-2022

অসুস্থতায় দ্বিগুণ সওয়াব ও গুনাহ মাফের কারণ কী?

মুমিনের জন্য সুস্থতা ও অসুস্থতা দুটিই আল্লাহর বড় নেয়ামত। অসুস্থতার সঙ্গে আল্লাহর অবাধ্যতার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং মুমিনের জন্য অসুস্ততায় রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াবের হাতছানি। নবি-রাসুলগণও অসুস্থ হতেন। দীর্ঘ সময় অসুস্থ ছিলেন অথচ তাঁরা ছিলেন সৃষ্টির সেরা মাখলুক। তবে হ্যাঁ, অসুস্থতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য পরীক্ষা। কিন্তু অসুস্থতায় দ্বিগুণ সওয়াবের কারণ কী?

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-ব্যথা, আরাম-ব্যারাম, রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। অসুখ-বিসুখ তথা বিপদাপদের সময় যদি কোনো বান্দা ধৈর্য ধারণ করে তবে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার গুনাহ মাফ করেন এবং দ্বিগুণ সওয়াব দান করেন। অসুস্থ ব্যক্তিকে দান করেন কল্যাণময় জীবন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

مَنْ يُرِدْ اللهُ بِه„ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ

‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দুঃখকষ্টে পতিত করেন।’ (মুসলিম ৫৬৪৫)

২. হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেন-

 أَجَلْ إِنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلاَنِ مِنْكُمْ قُلْتُ ذ‘لِكَ أَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ قَالَ أَجَلْ ذ‘لِكَ كَذ‘لِكَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُه“ أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا سَيِّئَاتِه„ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا

হ্যাঁ। তোমাদের দু’ব্যক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম, এটি এজন্য যে, আপনার জন্য আছে দ্বিগুণ সওয়াব। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ তাই। কেননা যে কোন মুসলিম দুঃখ কষ্টে পতিত হয়, তা একটা কাঁটা কিংবা আরো ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেমন গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে পড়ে।’ (বুখারি ৫৬৪৮)

৩. হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলাম। তখন তিনি জরাক্রান্ত ছিলেন। আমি তাকে আমার হাতে স্পর্শ করে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি তো ভীষণভাবে জরাক্রান্ত। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ’, আমি এ পরিমাণ জ্বরে ভুগছি, যে পরিমাণ তোমাদের দু’জনের হয়ে থাকে। রাবী বলেন, আমি বললাম, এ কারণেই আপনার জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান রয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى مِنْ مَرَضٍ فَمَا سِوَاهُ إِلاَّ حَطَّ اللَّهُ بِهِ سَيِّئَاتِهِ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا

‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি রোগ-ব্যাধি বা অন্য কোনো মাধ্যমে কষ্টে পতিত হলে, আল্লাহ এর দ্বারা তার পাপগুলোকে এমনভাবে মুছে দেন, যেমনভাবে গাছ থেকে পাতাগুলে ঝরে পড়ে।’  (মুসলিম ২৫৭১)

বস্তুত মুমিন বান্দার কল্যাণ দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও নিহিত। মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর; মুমিন ছাড়া আর কারও এই বৈশিষ্ট্য নেই। তার জন্য আনন্দের কোনো কিছু হলে সে আল্লাহর শোকর করে; তাতে কল্যাণ হয়। আবার ক্ষতিকর কিছু হলে সে ধৈর্যধারণ করে, এতেও তার কল্যাণ হয়।’ যার কষ্ট যতবেশি, তার সওয়াব ও গুনাহ মাফের ধরণ ও ততবেশি। তাইতো বিপদাপদ তথা অসুস্থতায় ধৈর্য ধারণ করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অসুস্থতাসহ সব ধরনের বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ গুনাহ মাফ ও দিগুণ সওয়াব পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]