আশ্চর্য দ্বীপ যেখানে শুধু সুন্দরী নারী, পুরুষ প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!


তামান্না হাবিব নিশু : , আপডেট করা হয়েছে : 15-10-2022

আশ্চর্য দ্বীপ যেখানে শুধু সুন্দরী নারী, পুরুষ প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!

পৃথিবীতে এমন একটি আশ্চর্য দ্বীপ যেখানে ধর্ষণ নেই। সম্পূর্ণ পুরুষশূণ্য সেই দ্বীপে সব বয়সের নারীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে। বাল্টিক সাগরের সবুজ-নীল জলে সাঁতার কাটতে পারে। পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মেয়েদের বিশেষ কোনও সাজগোজের যেমন প্রয়োজন নেই, তেমনই পুরুষ দেখলেই নিজেদের শারীরিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ারও কারণ নেই। সেই মেয়েদের পৃথিবীতে শিশু-যুবক-বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষেরই প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। নারীরা এখানে নিতান্ত স্বল্প পোশাকে বা নামমাত্র আচ্ছাদনে শরীর ঢেকে অথবা চাইলে একেবারে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে। ইচ্ছে হলে দোলনায় দুলে দুলে সারাদিন বই পড়তে পারে। গলা খুলে গান গাইতে পারে। অন্য নারীর চোখে অথবা প্রকৃতির চোখে নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য স্পা ও পার্লার ব্যবহার করতে পারে। যোগব্যায়াম করতে পারে। মেডিটেশন করতে পারে। সাগরসৈকতে সূর্যস্নান করতে পারে। রান্না করা শিখতে পারে। ঘোড়ায় চড়ে সমস্ত দ্বীপে দাপিয়ে বেড়াতে পারে। নিবিড় অরণ্যে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। কোনও নারীকেই প্রতি পদক্ষেপে লিঙ্গশাসিত পুরুষতান্ত্রিক বাতাবরণের আতঙ্কে কাঁটা হয়ে থাকতে হবে না।

ফিনল্যান্ড হল উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের বাল্টিক সাগরের উপকূলের এক দেশ। ঘন সবুজ অরণ্য আর ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা অসংখ্য হ্রদ। দেশটির বনভূমি এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এগুলিকে ফিনল্যান্ডের ‘সবুজ সোনা’ নামে ডাকা হয়। হেলসিংকি হল ফিনল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।এই হেলসিংকিকে বলা হয় বাল্টিক সাগরের মুক্তো। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাল্টিক সাগর। সেই সাগরের ঠান্ডা নীল-সবুজ জলরাশির উপকূলে রয়েছে সবুজে ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ। নাম তার ‘সুপার-শি’  বিপজ্জনক অথবা নিরীহ, সমস্তরকম পুরুষেরই প্রবেশ সেখানে নিষিদ্ধ।

সুপারশি দ্বীপের মালিক একজন আমেরিকান মহিলা। তাঁর নাম ক্রিস্টিনা রথ।

ক্রিস্টিনা জানিয়েছেন, একবার ছুটি কাটাতে তিনি আমেরিকার একটি রিসর্টে যান। সেখানে গিয়ে ভ্রমণকারীদের আচরণ ও ক্রিয়াকলাপ দেখে তাঁর মনে হয়, নারী পর্যটকদের প্রতি পুরুষ ভ্রমণকারীদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক স্বাভাবিক নয়। অধিকাংশ পুরুষের চোখেই কাম ও লালসার ছায়া। উল্টোদিকে নারীদের সমস্ত মনোযোগও পুরুষ সঙ্গীদের ওপরে। কোনও নারী ট্যুরিস্ট হয়তো খুব মন দিয়ে একটি কাজ করছে। কিন্তু কোনও সুদর্শন পর্যটককে দেখলেই টুক করে লিপস্টিক বের করে নিজের ঠোঁটদুটো একবার রাঙিয়ে নিচ্ছে। কার্যত অপ্রয়োজনীয় এই সাজগোজ শুধুমাত্র পুরুষের জন্য।

তখন থেকেই ক্রিস্টিনা ভেবেছেন, শুধু নারীদের জন্যই তিনি একটি দ্বীপ বানাবেন। ইউটোপিয়া নয়, সত্যি সত্যি এক বাস্তব দ্বীপ। যেখানে নারীরা সম্পূর্ণ নিজের মতো করে বাঁচবেন আর নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। কোনও পুরুষের উপর নির্ভর করতে হবে না তাঁদের। এইসময় তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় এক ফিনিশিয় যুবকের। আলাপ গড়ায় প্রেমে।একবার সেই প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর স্বদেশভূমি দেখতে গিয়ে ফিনল্যান্ডের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন ক্রিস্টিনা। আর তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আমেরিকায় নয়, স্বপ্নের রিসর্টটি তিনি গড়ে তুলবেন তাঁর প্রেমিকের মাতৃভূমি ফিনল্যান্ডেই। 

এরপরই তিনি কিনে ফেললেন আট দশমিক চার একরের একটি সমুদ্রবেষ্টিত মনোরম দ্বীপ। নাম রাখলেন ‘সুপার-শি’। দ্বীপটিকে বিলাসবহুল অবসরযাপন কেন্দ্র হিসেবে রূপ দেবার জন্য তিনি বহু অর্থ ব্যয় করে কাজকর্ম শুরু করে দেন।৮.৪ একরের এই দ্বীপ কিনতে তাঁর  সালে বিক্রি করে দেন ৬৫ মিলিয়ন ডলারে। সেই টাকা দিয়ে ২০১৭ সালে তিনি দ্বীপটি কিনে নেন। ২০১৮ সালের ২৩ জুন থেকে ভ্রমণপিপাসু নারীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই দ্বীপ।

‘সুপার-শি’ দ্বীপে প্রথমে তৈরি হয়েছিল পাঁচ-ছ’টি বিলাসবহুল কেবিন। রথের লক্ষ্য দশ-বারোটি কেবিনের। এর পাশাপাশি এই দ্বীপে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু ক্যাফে ও বিলাসবহুল হোটেল। এই দ্বীপে এক সপ্তাহ সময় কাটাতে খরচ হবে ৩৫০০ মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দু লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। কিন্তু শুধু আর্থিক সামর্থ্য থাকাই যথেষ্ট নয়। একই সঙ্গে আপনার মধ্যে থাকতে হবে নতুন কিছু শেখার ও জানার আগ্রহ। প্রথমে ভ্রমণপ্রার্থীকে অনলাইন আবেদন করতে হবে। তারপর সেই আবেদনপত্র খতিয়ে দেখে রথ নিজে ভিডিও কল করে ইন্টারভিউ নেবেন এবং নির্বাচন করবেন পর্যটকদের। কয়েক হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে সব তথ্য যাচাই করে প্রতিবার মাত্র ১০ জন নারীকে নির্বাচিত করা হয়। ক্রিস্টিনা জানিয়েছেন, এই দ্বীপের পরিকল্পনার পিছনে কোনও পুরুষ-বিদ্বেষ নেই। ভবিষ্যতে নারীদের বিশেষ অতিথি হয়ে পুরুষেরাও হয়ত এই দ্বীপে পা রাখার অনুমতি পাবেন। তবে আপাতত সেই সম্ভাবনা নেই। কোনও পুরুষ-সঙ্গী ছাড়া এই দুশ্চিন্তামুক্ত দ্বীপ-জীবন যে কোনও নারীকেই করে তুলবে আত্মবিশ্বাসী। যেতে চান না কি কয়েকদিনের জন্য এমন পুরুষমুক্ত ‘সব-পেয়েছির দেশ’-এ?


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]