নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দিয়াড়-রহিমানপুর ঘাটে বড়াল নদের উপর একটি ব্রিজ নির্মানের অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নদের দু-পাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ। মাঝি বিহীন ঘাটে যাত্রীরা নিজেরাই প্রতিদিন রশি টেনে নৌকায় নদ পারাপার হচ্ছেন। ব্রীজ নির্মান না হওয়ায় এলাকার উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ নিয়ে একদিকে কৃষকরা যেমন বিড়ম্বনায় পড়ছেন, অন্যদিকে নদ পারাপার নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও পড়ছেন নানা বিপাকে। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট একাধিকবার দাবিও তুলেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু তাতেও কোন ফল হয়নি।
স্থানীয়রা বলেন, একাধিকবার ব্রিজটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর থেকে মাপজোক করা হলেও কোন কাজ হয়নি।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদে পারাপারের জন্য রাখা রয়েছে একটি খেয়া নৌকা। নদের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত টানিয়ে দেয়া হয়েছে নাইলনের মোটা রশি। যার মধ্যে দেয়া হয়েছে রডের বালা। যাতে রশি দ্রুত আশা-যাওয়া করতে পারে। নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এই রশি টেনেই খেয়া নৌকায় নদ পারাপার হন।
পারাপারের সময় ঐ এলাকার যাত্রী কামরুল ইসলাম জানান, প্রায় দীর্ঘদিন ধরে এমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই এলাকার কয়েক গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। যাত্রী পারাপারের জন্য স্থানীয় কয়েক গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় আব্দুল হান্নান নামের মাঝি দীর্ঘদিন থেকে পারাপার করতেন। তিনিই নৌকা ও রশির ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এখন এই আয়ে তার আর চলে না। এর আগে বড়াল নদটি পারাপারের জন্য সেখানে বাঁশের আড় ছিল। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে খেয়া নৌকা। তবে সেই নৌকায় এখন তেমন আর মাঝি থাকেন না। কখনও মাঝির স্ত্রী পারাপার করেন, বেশির ভাগ সময় যাত্রীরা নিজেরায় নৌকা নিয়ে পারাপার হন।
স্থানীয় শিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, নদের উত্তর পাশে রয়েছে একটি বাজার, সরকারী প্রাথমিক, মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়সহ ঘনবসতিপূর্ণ ২টি গ্রাম। দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ ৩টি গ্রাম। আরও রয়েছে কয়েকশ হেক্টর কৃষি জমি। তাছাড়া নাটোর জেলা সদরে যাওয়ার জন্য প্রধান সড়কে পৌছুতে যাতায়াত করতে খেয়া নৌকাটিই তাদের একমাত্র ভরসা।
নদের দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। ব্রীজ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে ৫ গ্রামের মানুষকে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পারাপার হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে দীর্ঘদিন থেকে শুধু শোনা যাচ্ছে ব্রীজটি অনুমোদন হয়েছে। কয়েকবার মাপ-জোখও হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তিনি সেখানে দ্রুত একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানান।
মাঝি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আগের মতো গ্রামের মানুষ টাকা বা ফসল দেয় না। তাই নিজে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি’।
তবে যাত্রীদের সুবিধায় ঘাটে একটি নৌকা ও রশিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা তিনি নিজেই করে দিয়েছেন।
স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই ব্রীজটির প্রস্তাব ইতোপূর্বে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে সেখানে ব্রীজ নির্মাণ করা হবে।