স্তনে ১০.২৮ কেজির ‘বিরল টিউমার !


রিয়াজ উদ্দিন: , আপডেট করা হয়েছে : 08-02-2022

স্তনে ১০.২৮ কেজির ‘বিরল টিউমার !

রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার কারণে রোগীর অগ্নাশয়ে অন্য একটি বিরল টিউমার ‘ইনসুলিনমা’ থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছিল।

অস্ত্রোপচার করে ৫৫ বছর বয়সি এক মহিলার স্তন থেকে ১০.২৮ কিলোগ্রামের টিউমার বাদ দিলেন চিকিত্সকরা। তাও আবার সাধারণ টিউমার নয়। এই টিউমারের নাম ‘ফিলোডস টিউমার’। আমেরিকান ক্যানসার সেন্টারের মতে ফিলোডস খুবই বিরল একটি টিউমার।

মাস দু’য়েক আগে বালিগঞ্জের বাসিন্দা এই মহিলার বাস থেকে নামার সময় এক জনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে তাঁর ডান দিকের স্তনে আঘাত লাগে। তার পর থেকেই তিনি লক্ষ্য করেন যে, তাঁর ডান দিকের স্তনে একটু ফোলা ভাব দেখা দিয়েছে। তার পরের কয়েক দিনে এই ফোলা অংশ আয়তনে ক্রমশই বাড়তে থাকে। এক দিন অজ্ঞানও হয়ে যান তিনি। পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, মহিলার রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গিয়ে ৩০-৩৫ এমজি/ডিএল-এর মধ্যে থাকছে। চিকিত্সা পরিভাষায় যাকে বলা হয় হাইপোগ্লাইসিমিয়া। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করার পরেও তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়নি। তত দিনে স্তনের ফোলা অংশ প্রায় কোমর পর্যন্ত নেমে এসেছে। মহিলার কোর বায়োপ্সি রিপোর্ট এলে পরিষ্কার হয় যে, তাঁর স্তনে বাসা বেঁধেছে টিউমার।

এর পরই তাঁর পরিবারের সদস্যরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্রেস্ট এন্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিত্সক ধৃতিমান মৈত্রর কাছে নিয়ে আসেন। ধৃতিমান সন্দেহ করেন যে, তাঁর স্তনে ফিলোডস টিউমার হয়েছে। একই সঙ্গে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে রোগীর অগ্নাশয়ে অন্য একটি বিরল টিউমার ‘ইনসুলিনমা’ থাকতে পারে বলেও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। এর পরই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করা হয়। তবে রক্তে ইনসুলিন ও সি-পেপটাইড মেপে এবং আরও কিছু রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যায় যে রোগীর ইনসুলিনমা নেই। বরং তার জায়গায় অন্য একটি বিরল লক্ষণ আছে। তাঁর স্তনের টিউমার থেকে নিঃসৃত হচ্ছে ‘আইজিএফ-২’ নামক এক প্রোটিন হরমোন, যা ইনসুলিনের মতোই রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়।

এর পরই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিত্সকরা। দু’ঘণ্টার চেষ্টায় বাদ দেওয়া হয় বিশালাকার এই টিউমার। অস্ত্রোপচারে ধৃতিমানকে সাহায্য করেন চিকিৎসক শতক্রতু বর্মন, চিকিৎসক অন্তরীপ ভট্টাচার্য ও চিকিৎসক শুভ রায়।

ফিলোডস টিউমার-কে বিরল বলে মানতে নারাজ ধৃতিমান অস্ত্রোপচারে শেষে বলেন, ‘‘এত বড় টিউমার আমি এর আগে কখনও দেখিনি। অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল। মহিলা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরাও খুশি। রক্তে শর্করার পরিমাণও আগের থেকে বেড়েছে।’’ অস্ত্রোপচারে সাহায্য করার জন্য তিনি এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিত্সক পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী এবং নীতি আগরওয়াল এব‌ং এনেস্থেসিওলজি বিভাগের দেবাশীষ ঘোষ-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

রাজশাহীর সময় / এম জি


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]