বাংলাদেশ বিনিয়োগের আদর্শ স্থান: প্রধানমন্ত্রী


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 08-12-2022

বাংলাদেশ বিনিয়োগের আদর্শ স্থান: প্রধানমন্ত্রী

বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে আদর্শ স্থান হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সর্বোচ্চ বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছি। বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে, যেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ রচনা হতে পারে। আশা করি, বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। পারস্পরিক সুবিধার্থেই তিনি বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগ কামনা করেন। নিজ দেশে বিনিয়োগ করতে স্থানীয় জনগণও অনুপ্রাণিত হবেন। মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে (বিএসইজেড) স্থাপিত জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে তিনি ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিনিয়োগের জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিশেষ ইউটিলিটি সার্ভিস দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বিনিয়োগবান্ধব আইন বা নীতিমালা করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতামূলক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি অবকাঠামো বিস্তৃত করা হয়েছে। বিভিন্ন সেবা-পরিষেবা দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি যাতে কালক্ষেপণ না হয়, সে ব্যবস্থাও সরকার করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে, যেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটি সেতুবন্ধ রচনা হতে পারে। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটির বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আমাদের নিজেদেরই। আর পূর্বদিকে ৫০ কোটি, উত্তরদিকে ১৫০ কোটি, পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার রয়েছে। যোগাযোগ অবকাঠামো বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহণে বিরাট সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা সমৃদ্ধ হবেন, আমাদের দেশেরও উন্নতি হবে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি আঞ্চলিক বাজার ধরার সুবিধার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব মার্কেটের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বড় বাজার রয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ উন্নত করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, সেখানেও আমাদের বাজার আছে। কাজেই বিনিয়োগের সবচেয়ে উত্তম জায়গা বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখে তার সরকার বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেন জি টু জি বিনিয়োগ হয়, সেই ব্যবস্থা নিয়েছে। যে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন হয়েছে, তা বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের মধ্যে জি টু জি চুক্তির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তিনি বলেন, এটা আমাদের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের নিদর্শন যে জাপান সব সময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে এবং আমরাও সব সময় জাপানের সঙ্গে একটা চমৎকার সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। আমাদের এই বন্ধুত্ব অটুট।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। ভারত, চীন, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে এবং আরও কয়েকটি দেশ বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। ফলে নদীপথে তারা পণ্য পরিবহণের সুযোগ পাবেন। আর রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যত্রতত্র কলকারখানা না করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। ইতোমধ্যে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হয়েছে। এতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করতে পারছি। ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। একদিকে পরিবেশ, অপরদিকে ভূমি রক্ষা করে এগুলো করছি।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং সুমিতোমো করপোরেশন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসায়ুকি হায়োডো। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। গরিবের ইনসুলিন সুবিধা নিশ্চিতে গুরুত্বারোপ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গরিব মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ইনসুলিন এবং অন্যসব জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সুবিধা নিশ্চিত করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ডায়াবেটিসের বৈশ্বিক রাষ্ট্রদূত হিসাবে প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার পর্তুগালের লিসবনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডায়াবেটিস কংগ্রেস-২০২২-এ ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবিলম্বে অবসান ঘটানোর জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং জনগণের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য অতিপ্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবহার করতে হবে। 
শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যব্যবস্থার অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি উন্মোচন করেছে। ডায়াবেটিস এবং অন্য এনসিডিগুলোর জন্য আরও বেশি মারাত্মক হতে পারে-এমন বৈষম্য মোকাবিলা করার জন্য আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও গবেষণায় বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে সচল করতে হবে। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ফর ডায়াবেটিস’ উপাধিতে ভূষিত : আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রথম ‘গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ফর ডায়াবেটিস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডায়াবেটিস সম্মেলন-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনের কাছ থেকে সম্মাননা পত্রটি গ্রহণ করেন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আইডিএফের বিদায়ি প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক অ্যান্ড্রু বোল্টন; আইডিএফ-এর অন্যান্য প্রতিনিধি এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণর্কারী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত ডাক্তার, স্বাস্থ্য পেশাদার স্বাস্থ্য কর্মীরা, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা, পর্তুগালে প্রবাসী বাংলাদেশি, সাংবাদিকসহ ও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]