অবশেষে মুখোমুখি লড়াইয়ে টুইটার-অ্যাপল


অনলাইন ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 14-12-2022

অবশেষে মুখোমুখি লড়াইয়ে টুইটার-অ্যাপল

টুইটার কেনার আগে থেকেই ইলন মাস্ক বলে আসছিলেন, অ্যাপটিকে তিনি সুপার অ্যাপে রূপায়িত করতে চান। যেখানে গুগল ও অ্যাপল সুপার অ্যাপের তকমা নিয়ে ছিল এতদিন, সেখানে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীকে যে ভালোভাবে নিবে না অ্যাপল এ আর নতুন কী!

অ্যাপের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য করে আসছিল অ্যাপল ও গুগল। বিশেষ করে অ্যাপল স্টোর থেকে অ্যাপগুলোর সিংহভাগ লভ্যাংশ নিজেদের পকেটে নিয়ে যাওয়ায় সফটওয়ার কোম্পানিগুলো বিতৃষ্ণায় ভুগলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে কেউ রুখে দাঁড়ানোর সাহস করেনি। অবশেষে সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ে অ্যাপলের মুখোমুখি হলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক।

সুপার অ্যাপের ঘোষণার পর থেকেই টেক বোদ্ধারা বলছেন, ইলন মাস্কই এখন যোগ্য ব্যক্তি যে কি-না অ্যাপল-গুগলের আধিপত্য ভেঙে দিতে পারে। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) চালু হয়েছে টুইটার ব্লু। নতুন আঙ্গিকে ভিন্নধর্মী সব ফিচার নিয়ে চালু হওয়া টুইটার ব্লুর প্রতিমাসের সাবস্ক্রিপশন ফি ধরা হয়েছে ৮ ডলার। কিন্তু কেউ যদি অ্যাপলের আইওএস প্লাটফর্ম থেকে (হোক সেটা আইফোন অথবা ম্যাকবুক) টুইটারের সবস্ক্রিপশন নিতে যান তাহলে গুনতে হবে ১১ ডলার।

কিন্তু অ্যাপলের বেলায় মাস্ক এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলেন তার উত্তর মিলবে অ্যাপলের নিজস্ব পলিসিতে। কোনো টেক কোম্পানি অ্যাপলের স্টোরে নিজের অ্যাপ রাখতে চাইলে সেখানে ‘অ্যাপল ট্যাক্স’ হিসেবে লভ্যাংশের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কেটে নেয়া হয়। এর মানে কেউ অ্যাপল থেকে টুইটারে সাবস্ক্রাইব করলে মাথাপিছু ৩ দশমিক ৩০ ডলার যাবে অ্যাপলের পকেটে। এখানেই দাবার চাল চেলেছেন ইলন মাস্ক। বাড়িয়ে দিয়েছেন অ্যাপল ইউজারদের জন্য সাবস্ক্রিপশন ফি।

ধারণা করা হচ্ছে, মাস্কের এ নতুন নিয়মে যারা এতদিন ধরে টুইটার ব্যবহার করছেন তারা মাস্কের ওপরে না বরং অ্যাপলের ওপরে নাখোশ হবেন। এতে করে অ্যাপলের ব্যবহার ও বিক্রিও কমে যেতে পারে বলে শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইলন মাস্কের আগে অ্যাপলের এই গোয়ার্তুমির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এপিক গেম নামে একটি সফটওয়ার প্রতিষ্ঠান। মূলত ফোর্টনাইট ও ইনফিনিটি ব্লেড গেমের জন্য বিখ্যাত ছিল এপিক। ২০২০ সালের আগস্টে এপিক অ্যাপলের একচেটিয়া ব্যবসার বিরুদ্ধে মামলা করে।

অভিযোগে বলা হয়, অ্যাপল কোম্পানিগুলোকে সাবস্ক্রিপশন ফি নেয়ার জন্য ক্রেডিট কার্ড ও অন্য কোনো ব্যবস্থা রেখেনি। শুধু অ্যাপল পে এর মাধ্যমেই টাকা দেয়া যাবে যাতে অ্যাপল সহজেই ৩০ শতাংশ ভাগের হিসাব নিজেদের ঝুলিতে পুরতে পারে। অন্যদিকে অ্যাপল বিকল্প কোনো লগইনের ব্যবস্থাও রাখেনি যেখানে ব্যবহারকারী চাইলে অন্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লগইন করতে পারবে।

তবে মামলার রায়ে বলা হয়, অ্যাপল একচেটিয়া ব্যবসা করছে না, কারণ অ্যাপলের বিকল্প হিসেবে গুগল প্লে-স্টোর রয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত জানায়নি আদালত। এ ব্যাপারে ব্লুমবার্গের জেষ্ঠ্য আইন বিশেষজ্ঞ জেনিফার রে বলেন, ‘অ্যাপল লড়াইয়ে জিতে গেছে কিন্তু মূল যুদ্ধে হেরে গেছে। আদালত এক প্রকারে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অ্যাপলের বিকল্প আছে। সফটওয়ার কোম্পানিগুলো অ্যাপলের বিকল্প খুঁজে নিলে অ্যাপলই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’

তবে নিজেদের আত্মপক্ষ সামাল দিতে অ্যাপল-গুগল বারবার বলে আসছে তারা ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে অ্যাপগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। এছাড়াও মার্কেটিং ও মডারেশন সাপোর্টও দিয়ে থাকে। কোনো যাচাই-বাছাই না করে ব্যবহারকারী একটি অ্যাপ ইনস্টল করলে তা বড় রকমের ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এই ঝুঁকি নিরসনে যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি অ্যাপল-গুগল করে থাকে। এসব সুবিধা ও নিরাপত্তার জন্যই লভ্যাংশের একটি অংশ কেটে নিয়ে যায় এ কোম্পানি দুটি।

তবে সফটওয়ার কোম্পানিগুলো বলছে, অ্যাপলের ৩০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কেটে রাখা এক রকমের দিন দুপুরে ডাকাতির সামিল। যেখানে বিকল্প পেমেন্ট ব্যবস্থা নেই, মার্কেটিং এ টাকা খরচের জন্য জোরজবরদস্তি চলে এবং নিজেরাই অ্যাপল মিউজিক ও অ্যাপল টিভি প্লাসের মতো অ্যাপ বাজারে আনে যা কি-না স্পটিফাই ও নেটফ্লিক্সের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেখানে এসব ছেলে ভুলানো কথা বলা এক রকমের প্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই না।

তবে এতদিন পর মোক্ষম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছে অ্যাপল। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক রীতিমতো আয়েশ করে সময় নিয়ে ধাপে ধাপে অ্যাপলের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করছেন। সম্প্রতি টুইটার তার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া এক টুইটে বলেছে, ‘আমরা হয়তো এখানে বলতে পারবো না কিংবা বিজ্ঞাপন দিতে পারবো না যে আমাদের বিকল্প অনেক মাধ্যম রয়েছে। তবে গ্রাহকরা জানেন কী করতে হবে। আশা করি যারা জানেন তারা বাকিদের জানিয়ে দিবেন।’ টুইটারের এই বিদ্রুপাত্মক ইঙ্গিতপূর্ণ  টুইট মূলত অ্যাপলের বিজ্ঞাপন পলিসির বিরুদ্ধে একটি বড় চপেটাঘাত।

মাইক্রোসফট, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই ও এপিকের মতো কোম্পানিগুলো সফটওয়ারের বাজারে বড় যোদ্ধা হলেও অ্যাপের বাজারে অনেকটাই অসহায়। টুইটারের সাহসী পদক্ষেপ তাদের মনে নতুন করে আশা যোগাচ্ছে।

এদিকে ২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ওপেন অ্যাপ মার্কেট অ্যাক্টে বলা হয়েছে, অ্যাপ স্টোরগুলোকে বিকল্প মাধ্যমের কথা প্রচার করতে দিতে হবে ও নিজেদের স্টোরে নিজের পণ্যকে বেশি গুরুত্ব সহকারে প্রদর্শন করা যাবে না।

যদিও নতুন এ বিলটি এখনো পাশ হয়নি ও ঠিক কবে নাগাদ পাশ হবে তাও হলফ করে বলা যাচ্ছে না। তবে অ্যাপ স্টোরগুলোকে এক হাত দেখে নিতে মাস্ক যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছেন তাতে নতুন করে নিজেদের পলিসি নিয়ে ভাবতে হবে অ্যাপলকে- এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্ট টেক ও ব্যবসা বিশ্লেষকরা।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]