মেসির দেশের নতুন নায়ক, কে এই ‘স্পাইডারম্যান?


আব্দুল্লাহ্ সাদাত: , আপডেট করা হয়েছে : 14-12-2022

মেসির দেশের নতুন নায়ক, কে এই ‘স্পাইডারম্যান?

সেমিফাইনালে ম্যাচের বয়স তখন ৩৯ মিনিট। আর্জেন্টিনা এগিয়ে ১-০। মাঝমাঠে পায়ে বল পেয়েছিলেন বছর বাইশের তরুণ। রুদ্ধশ্বাসে ছুটে গিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের দিকে।

ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা নীল-সাদা জার্সি গায়ে এই তরুণ তুর্কিকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন প্রাণপণ। কিন্তু বুধবারের ম্যাচে ইউলিয়ান আলভারেস ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে তাঁর স্বপ্নের দৌড় দেখেছে গোটা বিশ্ব।

ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা নীল-সাদা জার্সি গায়ে এই তরুণ তুর্কিকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন প্রাণপণ। কিন্তু বুধবারের ম্যাচে ইউলিয়ান আলভারেস 

প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট আগলে ছিলেন চলতি বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। আলভারেসকে তিনি আটকাতে পারেননি। তাঁর ডান পায়ের হালকা টোকায় বল জড়িয়ে গিয়েছে জালে।

বুধবার সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার ক্রোয়েশিয়া বধের নেপথ্য কারিগর যদি হয়ে থাকেন লিয়োনেল মেসি, তবে আলভারেস নিঃসন্দেহে নায়ক। তিনটির মধ্যে দু’টি গোলই এসেছে তাঁর পা থেকে।

২০০০ সালের ৩১ জানুয়ারি আর্জেন্টিনার কালচিন শহরে জন্ম আলভারেসের। তাঁর ডাক নাম লা আরানা, যার অর্থ মাকড়সা। ক্লাব ফুটবল কিংবা দেশের হয়ে খেলা, সতীর্থরা মাঝেমাঝেই এই ডাকনামে ডেকে থাকেন তাঁকে।

বুধবারের ম্যাচে মাঝমাঠ বরাবর আলভারেসের অবিশ্বাস্য দৌড় যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা অনেকে মাকড়সার গতিবিধির সঙ্গে তরুণ ফুটবলারের মিল খুঁজে নিতেই পারেন।

সেমিফাইনালে আরও একটি গোল রয়েছে আলভারেসের নামে। সেই গোলের কৃতিত্ব অবশ্য তাঁর চেয়ে বেশি তাঁর অধিনায়কের। মেসির ঠিকানা লেখা পাসে দ্বিতীয় গোলটি করেন আলভারেস।

আলভারেসকে আর্জেন্টিনা দলে নতুন মুখ বলা চলে। গত বছর দেশের জার্সিতে সিনিয়র দলে অভিষেক হয় তাঁর। বিশ্বকাপের নির্ণায়ক ম্যাচে চিলির বিরুদ্ধে দি মারিয়ার পরিবর্ত হিসাবে ৬২ মিনিটে মাঠে নামেন তিনি। ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে করেন প্রথম আন্তর্জাতিক গোল।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, তাঁর জন্মদিনের দিন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাবে চুক্তি স্বাক্ষর করেন আলভারেস। ইউরোপীর ক্লাবের সঙ্গে সাড়ে ৫ বছরের চুক্তি হয়েছে তাঁর।

ম্যান সিটির আগে আলভারেস আর্জেন্টিনার রিভার প্লেট ক্লাবে খেলতেন। তখনও তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়নি। ২০২১ এবং ২০২২ আর্জেন্টিনীয় এই তারকার কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

আলভারেসের প্রেমিকা এমিলিয়া ফেরেরো কাতারে গিয়েছেন তাঁর খেলা দেখতে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই গ্যালারিতে বসে আর্জেন্টিনার হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন তিনি। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের।

আলভারেস ম্যান সিটিতে সই করার পর এই প্রেমের কথা প্রকাশ্যে আনেন যুগল। এমিলিয়া নিজেও খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত। তিনি হকি খেলেন। শারীরশিক্ষার শিক্ষক হিসাবে চাকরিও করেন। ইনস্টাগ্রামে আলভারেসের প্রেমিকার অজস্র ফলোয়ার রয়েছে।

এমিলিয়া এবং আলভারেস একই শহরে থাক‌েন। সমাজমাধ্যমে কিংবা সংবাদমাধ্যমে, বরাবর আলভারেসের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন এমিলিয়া। প্রকাশ্যে করেছেন প্রেম নিবেদন।

ছোটবেলা থেকেই লিয়োনেল মেসির অন্ধভক্ত আলভারেস। স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে বিশ্বকাপে একই সাজঘর ভাগ করে নিতে পেরে তাঁরও যেন স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

বুধবারের ম্যাচের পর পুরনো একটি ছবি ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে। কিশোর মেসিভক্ত আলভারেস ২০১২ সালে স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে এক বার ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন। অনুর্ধ্ব ১৩ দলে খেলতে খেলতে একেবারে মেসির কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেই ফ্রেম ফিরে এসেছে ১০ বছর পর।

বুধবার গোলের পর শিশুর মতো উচ্ছ্বাসে আলভারেসকে জড়িয়ে ধরেছিলেন মেসি। উঠে পড়েছিলেন তাঁর কাঁধে। দু’টি ফ্রেম মিলিয়ে দেখছেন ফুটবলভক্তরা।

সেমিফাইনালে জয়ের পর মেসি জানিয়ে দিয়েছেন, ফাইনালের ম্যাচই হবে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে তাঁর শেষ খেলা। আর দেশের হয়ে খেলবেন না তিনি। শেষ ম্যাচে শেষ বারের মতো এক বার মরিয়া হয়ে উঠবেন কেবল।

লিয়োর সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার শেষ চেষ্টায় শরিক হবেন মেসিভক্ত আলভারেসও। মাঠে তাঁদের ম্যাজিক দেখতে আরও এক বার মুখিয়ে থাকবে বিশ্ব।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]