সুখী পরিবার গঠনে স্বামীর ১২ করণীয়


ধর্ম ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 15-12-2022

সুখী পরিবার গঠনে স্বামীর ১২ করণীয়

সুসম্পর্কপূর্ণ সুখী সংসারের জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই রয়েছে বিশেষ করণীয় কাজ। তবে দায়িত্বশীল হিসেবে স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রী থেকে অনেকাংশে বেশি। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এমন ১২টি করণীয় রয়েছে, যা একটি পরিবারকে সুখী সংসারে রূপ দিতে পারে। সেগুলো কী?

১. ভালো ব্যবহার করা

সুখ সম্প্রীতির জন্য ভালো ব্যবহারের বিকল্প নেই। এমনকি ভালো ব্যবহার দিয়ে শত্রুকেও বশে আনা যায়। তাই সুখী পরিবারের জন্য প্রথমেই স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো। যদি তোমরা তাদের অপছন্দ করো, (তবে হতে পারে) তোমরা এমন বস্তুকে অপছন্দ করছ, যার মধ্যে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন। ’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৯)

২. পরামর্শ গ্রহণে স্ত্রীকে গুরুত্ব দেওয়া

সুপরামর্শের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী একটি সুখী-সুন্দর পরিবার গড়ে তোলে। এ ক্ষেত্রে উভয়েরই অবদান আছে বরং কাউকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ স্বামী যেমন বাইরের কাজ করে আর তেমনি স্ত্রী বাড়ির ভেতরের কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে। তাই পরিবারের যেকোনো কাজে তার সঙ্গে পরামর্শ করা ও সঠিক হলে সে পরামর্শ মূল্যায়ন করা উচিত। আল্লাহ বলেন, ‘আর জরুরি বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো। ’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৫৯)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অহি নাজিল হলে তিনি হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তাআলার সঙ্গে পরামর্শ করেন। (বুখারি ৪৯৫৩) আবার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করেন। (বুখারি ২৭৩২)

৩. বাড়িতে প্রবেশ করতেই স্ত্রীকে সালাম দেওয়া

পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম সালাম। সে জন্য বাড়ি থেকে বের হতে ও বাড়িতে প্রবেশকালে বাড়ির অধিবাসী বিশেষত স্ত্রীকে সালাম দেওয়া। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায় থাকে। যদি তারা বেঁচে থাকে তাহলে রিজিকপ্রাপ্ত হয় এবং তা যথেষ্ট হয়। আর যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করে। যে ব্যক্তি বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়ির লোকজনকে সালাম দেয়, সে আল্লাহর জিম্মায়। যে ব্যক্তি মসজিদের উদ্দেশে বের হয়, সে আল্লাহর জিম্মায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, সে আল্লাহর জিম্মায়। (আবু দাউদ ২৪৯৪)

৪. অসুস্থ স্ত্রীর সেবা করা

স্ত্রী অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত হলে তার সেবা করা স্বামীর কর্তব্য। হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। কেননা তাঁর স্ত্রী আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যা অসুস্থ ছিলেন। তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেন, বদর যুদ্ধে যোগদানকারীর সমপরিমাণ সওয়াব ও (গনিমতের) অংশ তুমি পাবে। (বুখারি ৩১৩০)

৫. ঘরের কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করা

স্ত্রীকে সাংসারিক কাজে সহযোগিতা করাও স্বামীর জন্য একান্ত করণীয়। বিশেষত সে অসুস্থ হলে বা তার পক্ষে কোনো কাজ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লে তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা জরুরি। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তিনি (নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবারের কাজ করতেন, যখন নামাজের সময় হতো তখন তিনি নামাজের জন্য বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি ৬৭৬)

৬. স্ত্রীর প্রতি ভালো ধারণা রাখা

স্ত্রীকে অযথা সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকা। স্ত্রীদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকরণীয়। অনেকেই অযথা স্ত্রীকে সন্দেহ করে থাকে। আর এতে সংসারে অশান্তির দাবানল জ্বলতে থাকে। ফলে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হয়। তাই সন্দেহ করা ঠিক নয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান পাপ।’ (সুরা হুজুরাত : আয়াত ১২)

৭. স্ত্রীর সঙ্গে বসে খোশগল্প করা

অবসরে একান্তে স্ত্রীর সঙ্গে খোশগল্প করা, তার মনের কথা জানা, তাকে বোঝার চেষ্টা করা, তার কোনো চাহিদা থাকলে তা জেনে নিয়ে পূরণ করা স্বামীর জন্য জরুরি। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (ফজরের সুন্নত) সালাত আদায় করতেন, তখন আমি জাগ্রত হলে তিনি আমার সঙ্গে কথা (খোশগল্প) বলতেন। অন্যথায় তিনি শয্যাগ্রহণ করতেন এবং ফজরের নামাজের জন্য মুয়াজ্জিন না ডাকা পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন।’ (বুখারি ১১৬১)

৮. স্ত্রীর জন্য সজ্জিত ও সুবাসিত হওয়া

স্ত্রীকে খুশি রাখতে স্বামীদের করণীয় হচ্ছে নিজেকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে রাখা। কেননা অপরিচ্ছন্ন থাকা ও অপরিষ্কার পোশাক পরিধান করা স্ত্রীরা পছন্দ করে না। হজরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য সুসজ্জিত হতে এমন পছন্দ করি যেভাবে আমার জন্য তার সুসজ্জিত হওয়া পছন্দ করি।’ (তাফসির কুরতুবি ৫/৯৭)

৯. স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করা

স্বামীর ওপর কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করা। এটি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা। হাদিসে এসেছে, ‘তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে; তোমার ওপর তোমার চোখের হক আছে এবং তোমার ওপর তোমার স্ত্রীরও হক আছে। (বুখারি ১৯৭৫, ৫১৯৯)

১০. স্ত্রীকে বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া

স্ত্রীকে তার মা-বাবা, ভাই-বোন ও নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়াও সুখী পরিবারের অন্যতম আলামত। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া বা মাহরাম ব্যক্তিকে সঙ্গে দিয়ে পাঠানো। ইফকের ঘটনাকালে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অসুস্থ হলে তিনি পিতার বাড়িতে গমনের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুমতি চান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লাম তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি পিতার বাড়ি চলে যান। (বুখারি ২৬৬১)

১২. স্ত্রীকে মারধর না করা

বিনা কারণে বা তুচ্ছ কোনো ঘটনায় স্ত্রীকে মারধর করা উচিত নয়। বরং তার ত্রুটি বুঝিয়ে দিয়ে তাকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া। আর মারধর করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো তাঁর স্ত্রীদের মারধর করেননি। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে কোনো কিছুকে প্রহার করেননি। না তাঁর কোনো স্ত্রীকে, না কোনো খাদেমকে ‘ (মুসলিম ২৩২৮)

১১. দ্বীনি ব্যাপারে স্ত্রীকে দিকনির্দেশনা দেওয়া

বিশেষ করে প্রত্যেক স্বামীর জন্য আবশ্যক কর্তব্য হলো স্ত্রীকে দ্বীনি কাজের দিকনির্দেশনা দেওয়া। যাতে তারা তা যথাসাধ্য পালন করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি তোমার পরিবারকে নামাজের আদেশ দাও এবং তুমি এর ওপর অবিচল থাকো।’ (সুরা ত্বহা : আয়াত ১৩২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুখী পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]