ফেসবুকে ফুলগাছ বিক্রি করে ভাগ্যবদল কলেজ শিক্ষার্থী আসিফের


মঈন উদ্দিন , আপডেট করা হয়েছে : 19-12-2022

ফেসবুকে ফুলগাছ বিক্রি করে ভাগ্যবদল কলেজ শিক্ষার্থী আসিফের

রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়ার বাসিন্দা আসিফ আদনান (২১)। রাজশাহীর মামুনুজ্জামান পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী তিনি। এবার (২০২২) পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজ থেকেই এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি আগ্রহ ছিল আত্মউদ্যোগী হওয়ার ও স্বপ্ন ছিল সাবলম্বী হওয়ার। তাই বিভিন্ন অনলাইন ফ্রিল্যান্সারদের কাছে থেকে পরামর্শ ও নিজের চেষ্টায় অবশেষে স্বপ্ন সফল করেন তিনি। শিক্ষাজীবনেই সাবলম্বী হতে অনলাইনে ফুল করে হয়ে উঠেন সাবলম্বী।

পারিবারিকভাবে খুব বেশি স”ছল না হওয়ায় অনলাইন কাজের মাধ্যমে সামলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টা করতে থাকেন তিনি। এক সময় অনলাইনে ড্রপ সিপিং কাজে যুক্ত হন আসিফ। তবে ড্রপ সিপিং এর কাজে  উপার্জন ছিল অনিশ্চিত। তাই সে বাধ্য হয়ে একটি নির্ভরযোগ্য ও ¯’ায়ী অনলাইন উপার্জন মাধ্যমের খুঁঝতে থাকে। গত তিন মাস আগেও তেমন ধারণা ছিল না অনলাইনে ফেসবুকের মাধ্যমে ফুলগাছ বিক্রি করে উপার্জনের। তবে দিনের পর দিন বেশকিছু অনলাইন ফ্রিল্যান্সারদের কাছে ধর্ণা দিয়ে ধারণা নেন কাজ সম্পর্কে। পরে নিজেই বুদ্ধি খাটিয়ে বের করেন ফেসবুকে ফুলগাছ বিক্রির উপায়। এখন প্রতি মাসেই প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করেন তিনি। 

ফেসবুকে ফুলগাছ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ আদনান বলেন, তিন মাস আগে মাথায় পরিকল্পনা নেই ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে কিছু করার, সাবলম্বী হওয়ার। বলা যায় একেবারে শূণ্য হাতেই শুরুটি হয়েছিল আমার। প্রথমদিকে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপগুলোতে পর্যবেক্ষণ শুরু করি। নগরীর মোল্লা নার্সারী, সেরা বাংলা নার্সারীসহ বিভিন্ন নার্সারী থেকে ফুল, ফুলের চারা ও বীজ সংগ্রহ শুরু করি। তবে আমার প্রতিবেশী মোল্লা নার্সারীর তৌহিদুল ভাই আমাকে প্রচন্ড সহযোগিতা করেছেন এ কাজে।

তার কাছে থেকেই ফুলগাছ, চারা, পরিচর্যা ও সার-কিটনাশক সম্পর্কে ধাণরা নিয়ে ফেসবুকের বৃক্ষ ও ফুল সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ ও নিজের প্রোফাইলে পোস্ট শুরু করি। প্রথমদিকে ধীরে ধীরে অল্প-স্বল্প সাড়া মিললেও পরবর্তীতে অনেকের কাছে থেকেই মিলতে থাকে সাড়া। পেতে থাকি ফুল ও ফুলের চারা গাছের অর্ডার। 

এভাবে বাড়তে থাকে অনলাইনে ফুলগাছ বিক্রির অর্ডার। এরপর আমি ‘রাজশাহী অব গার্ডেন’ নামে একটি নিজস্ব পেজ খুলে পোস্ট করতে থাকি। পেজে এ্যাডিনিয়াম, পিটুনিয়াম, ক্যালেনচো, মোন ক্যাকটাস, হাজারি গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, বাগান বিলাশ, রজনীগন্ধা, সন্ধ্যা মালতি, সূর্যমূখী, শিউলি, জবা, ড্যানথাস, সিলফিয়া, সেলোসিয়া, স্টার, গ্যাজেনিয়া, হলিফক, কমলা গাঁদা, চায়না গাঁদা সহ বাহারি প্রজাতির ফুলগাছ ও চারা বিক্রি করি। এসব ফুলগাছ ও চারা রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা অনলাইনে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে অর্ডার করে থাকেন। এক্ষেত্রে পূর্বেই ক্রেতাদের নিকট থেকে পেমেন্ট নিয়ে থাকি। পরে তাদের ঠিকানায় কুরিয়ারের মাধ্যমে পার্সেল করে পাঠিয়ে দেই। এপর্যন্ত প্রায় চার থেকে পাঁচশত অর্ডার পেয়েছি।  বর্তমানে আমার পেজ থেকেই সেল হতে থাকে। তবে পূর্বের পরিচিতি ও অন্যান্য পেজ থেকেও অর্ডার পায় ব্যাপক বলে জানান তিনি।

আসিফ আরও জানান, বর্তমানে প্রতিদিন মেসেঞ্জার ও হোয়াটসএ্যাপেই কথোপকথন হয় দেড় থেকে দুই’শ জনের মতো ক্রেতার সাথে। এর মধ্যে গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি অর্ডার কনফার্ম হয়। অর্ডারগুলো রিসিভ করে সেরাবাংলা ও মোল্লা নার্সারীসহ বিভিন্ন নার্সারী থেকে ফুলের চারাগাছ সংগ্রহ করে তা ক্রেতাদের কাছে দিয়ে থাকি। নিজের নার্সারী না থাকার পরও আমি ফুলগাছ সংগ্রহ করে ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে আমি সফল। এ থেকে আমি আমি আমার নিজের পড়াশোনা, হাতখরচসহ পারিবারকেও সাপোর্ট দিয়ে থাকি। এখন অনেক টায় সাবলম্বী আমি।

জানতে চাইলে মোল্লা নার্সারীর মালিক তৌহিদুল বলেন, সে (আসিফ) আমার প্রতিবেশী। মাসতিনেক থেকে সে ফেসবুকে ফুলের ব্যবসা শুরু করেছে। সর্বপ্রথম আমি তাকে ফুলগাছ পরিচর্যা, সার, বীজ, গাছ লাগানো, বিভিন্ন ফুলের প্রজাতির নামসহ প্রভৃতি বিষয়ে ধারণা দেয়। তাকে ধারণা দেয় কিভাবে ফুলগাছ কুরিয়ারে পাঠাতে হলে তা প্যাকিং করতে হবে। কারণ, ঠিকমতো প্যাকিং না করলে গাছ পথেই মারা পড়বে এবং কাস্টোমারও অসš‘ষ্ট হবেন। 

সবমিলিয়ে বর্তমানে আসিফ ফেসবুকে ফুলগাছ বিক্রি করে ভালো ইনকাম করছে। সে তার অীধকাংশ কাস্টোমারের অর্ডার আমার নার্সারী থেকেই নেয়। তার অসংখ্য অর্ডারের কারণে আমার নার্সারীর বেচাকেনাও ভালো হ”েছ বলে জানান নার্সারী মালিক তৌহিদুল। 

ফেসবুকে ফুল বিক্রির মাধ্যমে সফল আসিফের বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য সেন্টারের অতিরিক্ত উপপরিচালক আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, আসিফের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আসিফের মতো অনেকেই আছেন যারা উদ্যান চাষ, ছাদ বাগান এবং ছোটখাটো নার্সারী করে সাবলম্বী হয়েছেন এবং ভালো উপার্জন করছেন। আসিফদের মতো আত্মউদ্যোগী যুবকদের কৃষি পরামর্শসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথা সরকার সব সময় পাশেই রয়েছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]