স্কুল পড়ুয়া দুই বান্ধবীর এক প্রেমিক, অতঃপর…


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 05-02-2023

স্কুল পড়ুয়া দুই বান্ধবীর এক প্রেমিক, অতঃপর…

মুন্সিগঞ্জের একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আদিবা আক্তার ও জেসিকা মাহমুদ ওরফে জেসি নামের দুই বান্ধবী। এক পর্যায়ে আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় একই এলাকার আরেকটি কলেজের ছাত্র বিজয় রহমান। তাদের সম্পর্ক চলতে থাকে। এ সময় জেসিকা মাহমুদ ওরফে জেসির সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ান বিজয়। কিন্তু তিনি বিষয়টি আবিদাকে বুঝতে দেননি।

পরবর্তীতে গোপনে আবিদাকে বিয়েও করেন বিজয়। বিয়ের খবর জানাজানি হওয়ার পর বিজয় ও জেসির কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিনশট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠান জেসি। এরপর আবিদা ও বিজয়ের সংসারে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। এক পর্যায়ে জেসিকে উচিত শিক্ষা দেওয়া ও বিষয়টি মিমাংসার পরিকল্পনা করে বিজয় ও আবিদা। পরে জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে আনে। এ সময় তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসিকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী থেকে বিজয় রহমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৭। পরে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসিকা মাহমুদ জেসি হত্যার আসামি বিজয় রহমানকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিজয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

র‌্যাব আরও জানায়, বিজয় ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া অপর আসামি আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আদিবা আক্তারের সঙ্গে সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ভিকটিম জেসিকার সাথেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। বিজয় উভয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অপর আসামি আদিবার সঙ্গে গোপনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে বিজয় এবং আদিবার গোপনে বিয়ের বিষয়টি ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসি জানতে পারে। পরে বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আদিবার মাঝে বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ হলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।

এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আদিবার সাথে আলোচনা করে বিজয়। পরে ১ জানুয়ারি উভয়ে মিলে জেসিকা মাহমুদ জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আদিবা ঘটনার দিন বিকেলে জেসির সাথে দেখা করলে সে বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথনের স্ক্রিনশট দেখায়। এছাড়া এই সমস্যা মিমাংসা করার জন্য আদিবা ভিকটিম জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে।

পরবর্তীতে আদিবা ফোন করে বিজয়কে ছাদে আসতে বলে। অতঃপর সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসির গলাটিপে ধরলে শ্বাসরোধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য তারা জেসি ছাদ থেকে ফেলে দেয়। পরে জেসি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। এ জন্য জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় ছাদ থেকে নামিয়ে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভিতরে চলে আসে। পরবর্তীতে পাশের বাসায় থাকা বিজয়ের চাচা জেসিকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করলে বিজয় এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসে।

একপর্যায়ে বিজয় এবং তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জেসিকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিজয় ভিকটিম জেসির ভাইকে বোনের অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলে। জেসির ভাই হাসপাতালে এসে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান জেসি মারা গেছে।

মৃত্যুর ঘটনা শুনে বিজয় এবং আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। জেসির মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে জেসির ভাই জানতে পারে তার বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেসির ভাই মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানায় বিজয় ও আদিবাসহ আরও ১-২ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা দায়ের পর ৪ জানুয়ারি হত্যার অন্যতম সহযোগী আদিবাকে গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়া বিজয় মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে চার দিন আত্মগোপনে থাকে। সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তীতে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে। একপর্যায়ে ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপনে থাকে। গতকাল শনিবার রাতে ওয়ারী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]