তিন বছর ধরে শিকলে বন্দী রাব্বানী


অনলাইন ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 07-02-2023

তিন বছর ধরে শিকলে বন্দী রাব্বানী

গত তিন বছর ধরে লোহার শিকলে ছেলেকে বন্দী করে রেখেছেন অসহায় বাবা-মা। পরিবারের সদস্যদের চোখের আড়াল হলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এবং যাকে তাকে মারপিট করে নন্দীগ্রাম উপজেলা থালতা মাঝগ্রাম ইউনিয়নের পারশুন গ্রামের ক্ষুদেপাড়ার ২৫ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন গোলাম রব্বানী। অর্থভাবে চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছেন ওই অসহায় বাবা-মা। দরিদ্র পরিবারের শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করে এখন সর্বশান্ত বাবা গোলাম মোস্তফা।

সোমবার দুপুরে গোলাম মোস্তফা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গোলাম রব্বানীর মা মর্জিনা বেগম ছেলেকে বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন। গত দুইদিন সে কিছুই মুখে দেয়নি বলে জানান তার মা। ওই পরিবারে থাকার মতো আছে দুইটি মাটির ঘর। একটি ঘরের সামনের দরজার দেয়ালের মাঝে ছোট একটি ফাঁকা জানালা। গোলাম রব্বানীর হাতে শিকল, জানালার সঙ্গে শিকলে তালা লাগোনো। বিছানায় বসে বিস্কুট খাচ্ছে সে। অল্প সময়ের মধ্যেই সে দাঁড়িয়ে গেল। কখনো শুয়ে পরছে আবার কখনো উঠে বসছে গোলাম রব্বানী।

গোলাম রব্বানীর মা মর্জিনা বেগম বলেন, ছেলের হাত পায়ের শিকল খলা রাখলে গ্রামের মানুষেক মারে পিটে। বিভিন্ন ভাবে ক্ষতি করে মানুষের। বাড়ি ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। তাই নিরুপায় হয়ে শিকল দিয়া আটকে রাখছি তাকে। ছেলের ভাল চিকিৎসা করাব কীভাবে বাবা? গরিব মানুষ, ঠিকমতো সংসার চালান আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছেলের এ দৃশ্য মা হয়ে সহ্য করতে পারি না। ওর জন্য নিজেও সারা রাত ঘুমাতে পারি না। আগে ভালো ছিল

গোলাম রব্বানীর বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। গোলাম রব্বানী আমার বড় ছেলে। নিজের জমিজমা আর নাই। ছেলেকে তেমন পড়াশোনা করাতে পারিনি। আগে আমার সাথে কাজ কাম করত। ২০১৮ সালের দিকে সে পাগলামি শুরু করে। যেটুকু সামর্থ্য ছিল, তা দিয়ে ছেলেকে অনেক ডাক্তার-কবিরাজ দেখাছি। ২০১৯ সালে বাড়িতেই তাকে শিকল বন্দী করে রাখি। এখন অর্থের অভাবে ভালো কোনো ডাক্তারের কাছে তাঁকে নিয়ে যেতে পারছিনা।

থালতা মাঝগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন জানান, গোলাম রব্বানীর বিষয়ে আমি কিছুদিন আগে জেনেছি। আমার ব্যক্তিগত ও পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত বলেন, আমি গোলাম রব্বানীর বিষয়ে জানার পর সমাজ সেবা অফিসারকে সেখানে পাঠিয়ে ছিলাম। তার বাবাকে আসতে বলেছি। আমিও গোলাম রব্বানীর বাড়িতে যাব। আমার যেটুকু সাধ্য আছে তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করব। এছাড়া সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি আহবান জানাই তারা যেন গোলাম রব্বানীর পাশে দাঁড়ায়।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]