রোহিঙ্গা জেনোসাইডের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য যুক্তরাষ্ট্র


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 14-02-2023

রোহিঙ্গা জেনোসাইডের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য যুক্তরাষ্ট্র

২৪ ঘণ্টার সফরে কাল আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে। তাঁর এই সফরের আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিভিন্ন বৈঠক ও মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন এনইউজির মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অং কিয়াও মো। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান

কালের কণ্ঠ : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে বাংলাদেশে আসছেন। আপনারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাঁর ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনেক বৈঠক করেছেন।

অং কিয়াও মো : হ্যাঁ। গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছি তা অবশেষে সফল হতে যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকবার যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং কাউন্সেলর ডেরেক শোলেকে অনুরোধ করেছি বাংলাদেশ সফর করতে। ডেরেক শোলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে আসবেন এবং জেনোসাইডে প্রাণে বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সত্যটা জানবেন—এটি আমরা সব সময় চেয়েছি। আমরা এর জন্য কাজ করেছি। আশার কথা হচ্ছে, ডেরেক অবশেষে কক্সবাজারে যাচ্ছেন।

কালের কণ্ঠ : ডেরেক শোলের বাংলাদেশ সফর কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

অং কিয়াও মো : রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নিপীড়নকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের সফর। যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসে এ যাবৎ মাত্র আটবার কোনো নিপীড়নের ঘটনাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটি ঘোষণা করা বা কোথাও জেনোসাইড হচ্ছে তা স্বীকার করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি মোকাবেলায় আইনি বাধ্যবাধকতা যুক্তরাষ্ট্রের আছে। জেনোসাইডের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে ন্যায়বিচার ও উপযুক্ত জীবন পায় তা নিশ্চিত করা এখন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব।

কালের কণ্ঠ : রোহিঙ্গা না মিয়ানমার পরিস্থিতি—কোনটি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ডেরেক শোলের এই সফরে?

অং কিয়াও মো : মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করার মধ্য দিয়ে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, মানবিক সংকটের গুরুত্ব প্রতিফলিত হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিশ্চয়ই সে দিকে দৃষ্টি রাখবে।

আমি যা বুঝতে পারছি তা হলো, ডেরেক শোলেসহ তাঁর সফরসঙ্গীরা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখার এবং সংকটের ভয়াবহতা আরো ভালোভাবে অনুধাবন করার সুযোগ পাবেন। কোনো সন্দেহ নেই, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় মিয়ানমার পরিস্থিতি, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারে গণতন্ত্রায়ণের প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে আসবে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রয়োজন।

কালের কণ্ঠ : মিয়ানমারে গণতন্ত্রায়ণে যুক্তরাষ্ট্র কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে?

অং কিয়াও মো : যুক্তরাষ্ট্রের সামনে অনেক পথ খোলা আছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করেছে যে মিয়ানমারে জেনোসাইড সংঘটিত হয়েছে। এখন তা ঠেকানো, প্রতিকার, ক্ষতিপূরণ, রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করা যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। আশ্রিতদের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা আরো জোরদার করতে পারে। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতসহ বিভিন্ন বিচারিক কাঠামোতে মিয়ানমারের জান্তার জবাবদিহি নিশ্চিত করার যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র তাতে আরো সহযোগিতা করতে পারে।

কালের কণ্ঠ : মিয়ানমারে জান্তার বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তাতে কতটা সহযোগিতা করতে পারে?

অং কিয়াও মো : যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএ)’ প্রণয়ন করেছে। সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে স্থানীয় প্রতিরোধ বাহিনীসহ গণতন্ত্রায়ণ প্রক্রিয়ায় কিভাবে সহযোগিতা করবে।

কালের কণ্ঠ : ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার পরও বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছে।

অং কিয়াও মো : বাংলাদেশ মানবতা দেখিয়েছে। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়ক আরো কিছু কৌশল বাংলাদেশের নেওয়া প্রয়োজন। আশ্রিত হিসেবে রোহিঙ্গাদের অধিকার বাংলাদেশের এমনভাবে নিশ্চিত করা উচিত যাতে তারা ফিরে গিয়ে নিজেদের জীবন গড়তে পারে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সমস্যা মিয়ানমারে সৃষ্টি হয়েছে, এর সমাধানও মিয়ানমারে হতে হবে। ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালের অভিজ্ঞতার আলোকে রোহিঙ্গাদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে বাংলাদেশের অবশ্যই কৌশল নেওয়া উচিত।

কালের কণ্ঠ : যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গা নেওয়া শুরু করেছে। এটি কি আদৌ এ সংকটের সমাধান আনবে?

অং কিয়াও মো : তৃতীয় দেশে স্থানান্তর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। এটি বাস্তবসম্মতও নয়। এটি স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তির ক্ষেত্রে হতে পারে, যাঁরা আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য দেবেন। ১০ লাখেরও বেশি লোককে অন্য দেশে স্থানান্তরের চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর তৃতীয় দেশে স্থানান্তর ছাড়াও আরো দুটি সমাধানের কথা বলেন। সেটির একটি হলো স্থানীয়করণ। অর্থাৎ যে দেশে আশ্রয় নিয়েছে সে দেশেই অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। এটিও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ তারা বাংলাদেশের নাগরিক হতে চায় না। তারা তাদের নিজেদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। এটিই একমাত্র সমাধান।

রোহিঙ্গারা যেখান থেকে এসেছে সেখানে যেন ফিরে যেতে পারে এবং অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারে সেটি আমাদের সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।

কালের কণ্ঠ : মিয়ানমার এখনো বড় কিছু দেশের সমর্থন পাচ্ছে। এখানে ভূ-রাজনীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

অং কিয়াও মো : অবশ্যই রাশিয়া ও চীনের কাছে মিয়ানমারের ভৌগোলিক অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, চীন ও ভারতের কাছে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ও সংযোগ পরিকল্পনার জন্য মিয়ানমার গুরুত্বপূর্ণ।

কালের কণ্ঠ : মিয়ানমারে জাতীয় ঐক্য সরকারের অবস্থা এখন কেমন?

অং কিয়াও মো : জাতীয় ঐক্য সরকার দিন দিন সাফল্য পাচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার পরিমাণ বাড়ছে। এটিই মিয়ানমারের বৈধ সরকার। এই সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের দুই বছর হয়ে গেছে। জান্তার কর্তৃত্ব দিন দিন খর্ব হচ্ছে। মিয়ানমারের জনগণ জান্তার আদেশ মানছে না। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই এখন জাতীয় ঐক্য সরকারকে মিয়ানমারের সরকার হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। সময় লাগলেও আমরা সঠিক পথেই যাচ্ছি। আর আমরা জাতীয় ঐক্য সরকার সব ধরনের বৈচিত্র্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি।

কালের কণ্ঠ : যুক্তরাষ্ট্র কী আপনাদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে?

অং কিয়াও মো : যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু আমাদের অফিস খুলতে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিস আছে। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে আমাদের মিশন আছে। আমাদের প্রতিনিধিদলকে অন্য দেশগুলোর সরকারের প্রতিনিধিদের মতোই মর্যাদা ও প্রটোকল দেওয়া হয়।

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছে?

অং কিয়াও মো : আমার এ বিষয়ে বলা সম্ভব নয়। আমি জাতীয় ঐক্য সরকারের হয়ে মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করছি। অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]