আমেরিকা ইউরোপকে পাত্তা না দিয়ে ভারত তেল কিনছে রাশিয়া থেকে


রিয়াজ উদ্দিন: , আপডেট করা হয়েছে : 26-02-2023

আমেরিকা ইউরোপকে পাত্তা না দিয়ে ভারত তেল কিনছে রাশিয়া থেকে

রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের যুদ্ধের বছর ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু এক বছর পার করেও যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চলেছে।

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর পুতিনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল গোটা বিশ্ব। আমেরিকা এবং পশ্চিমে তার বন্ধু দেশগুলি যুদ্ধের বিরোধিতা করে। রাশিয়াকে সরাসরি আক্রমণ না করলেও পুতিনের দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়।

রাশিয়াকে ভাতে মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া। তাই রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনায় তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

আমেরিকার আপত্তিতে অনেক দেশই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ভারত সে পথে হাঁটেনি। তারা পশ্চিমের ভ্রুকুটি উড়িয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা জারি রেখেছে।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে যুদ্ধের বাজারেও রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছে ভারত। যদিও তারা ইউক্রেন যুদ্ধকে সমর্থন করে না।

পরিসংখ্যান বলছে, যুদ্ধের পর রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। পশ্চিম এশিয়া এবং আমেরিকা থেকে তারা যে তেল কিনত, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি তেল কেনা হচ্ছে পুতিনের দেশ থেকে।

রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েছে ভারত। তার পর বিদেশেও তা রফতানি করেছে। এমনকি, ভারত থেকে রাশিয়ার তেল পৌঁছেছে আমেরিকাতেও। জানুয়ারিতেই প্রায় ৮৯ হাজার ব্যারেল ডিজ়েল ভারত থেকে নিউ ইয়র্কে পাঠানো হয়েছে।

দেখা গিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার ফলে গত এক বছরে ভারতের লাভের অঙ্ক বেড়েছে অনেকখানি। ৪০০ কোটি ডলার অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে নয়াদিল্লি। টাকার অঙ্ক আরও বেশি হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

যুদ্ধ শুরুর আগে ভারত ব্যারেল প্রতি ১১০ ডলারে (৯ হাজার ১২৩ টাকা) বিদেশ থেকে অপরিশোধিত তেল কিনত। ২০২২ সালের মে মাসের মধ্যে তেলের দাম ১৬ ডলার (১ হাজার ৩২৭ টাকা) কমিয়ে দেয় রাশিয়া। ভারতের জন্য বিশেষ ভাবে কমানো হয় আরও ৩০ ডলার (২ হাজার ৪৮৮ টাকা)।

অর্থাৎ, যে তেল ভারতকে ব্যারেল প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হত, রাশিয়া থেকে কেনায় সেই খরচ কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।

অপরিশোধিত তেল বিক্রির ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রাধান্য ছিল মূলত পশ্চিমি দুনিয়া। কিন্তু যুদ্ধের পর আমেরিকা এবং পশ্চিমের অধিকাংশ দেশ রাশিয়ার তেল বয়কট করলে তৈল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এশিয়ার বাজারে মনোনিবেশ করে মস্কো।

১২

যুদ্ধের আগে পর্যন্ত ইউরোপেই ছিল রাশিয়ার তেল বিক্রির রমরমা। কিন্তু আমেরিকাকে অনুসরণ করে রাশিয়ার তেলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। তার পর থেকে ক্রমে রাশিয়ার তেলের শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে ভারত।

চলতি বছরে জানুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিন রোজ ১৩ লক্ষ ব্যারেল করে অপরিশোধিত তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে ভারত। তার মধ্যে ৬০ শতাংশ কিনেছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা।

২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে দেখা যায়, ভারতের তেল আমদানিতে রাশিয়ার শেয়ার বেড়ে হয়েছে ১৮ শতাংশ। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে যা ছিল মাত্র ১ শতাংশ। ইরাকের পর রাশিয়াই ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলির নিষেধ সত্ত্বেও জাতীয় স্বার্থে রাশিয়া থেকেই তেল কিনছে নয়াদিল্লি। আমেরিকা ভারতের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত না হলেও কোনও আপত্তিও তোলেনি। তারা জানিয়েছে, এ বিষয়ে দিল্লির সঙ্গে আলোচনায় বসার সুযোগ রয়েছে।

ভারত এবং রাশিয়ার এই তৈল বাণিজ্যে আপত্তির কিছু নেই বলে জানিয়েছে আমেরিকার অন্যতম সহযোগী দেশ হিসাবে পরিচিত জার্মানিও। ভারতে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ফিলিপ অ্যাকারম্যান স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না কি কিনবে না, তা তাদের মাথা ঘামাবার বিষয় নয়।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]