সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দৃষ্টিনন্দন ছাদবাগান প্রশংসায় ভাসছেন শিক্ষকসহ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা


কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : , আপডেট করা হয়েছে : 12-03-2023

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দৃষ্টিনন্দন ছাদবাগান প্রশংসায় ভাসছেন শিক্ষকসহ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা

এ যেনো বিদ্যালয় নয়, আস্ত এক নার্সারী। দেখে বোঝার কোনো অবকাশই নেই যে এটি কোনো বিদ্যালয়ের ছাদ হতে পারে। ২ হাজার ৪০০ স্কয়ার ফিটের দৃষ্টিনন্দন ছাদবাগান গড়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সেই ছাদে রয়েছে দেশি-বিদেশি প্রায় ৩ শতাধিক ফুল ও ফলসহ শাক-সবজির গাছ। বর্তমানে পুরো উপজেলাজুড়ে প্রশংসায় ভাসছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। 

প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয় হলেও অপরুপ এই সাজসজ্জায় যেনো শহরসহ পুরো উপজেলার সব সৌন্দর্যকে হার মানায় এটি। শুধু ছাদবাগানেই সীমাবদ্ধ নয়, আছে বিদ্যালয় চত্বরসহ অফিস, শ্রেণি কক্ষ পরিপাটি করে সাজানো। গ্রীলে ও ছাদে ঝুলছে বাহারী লতা-পাতা। ছাদে বসে পাঠ্যপুস্তকসহ প্রকৃতি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা। এ থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরিচিত হচ্ছে বিভিন্ন ফল ও ফুল গাছের সাথে। গড়ে উঠছে তাদের মধ্যেও বৃক্ষপ্রেম। সৃষ্টি হচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমি মানসিকতা।

একদিকে এই বিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য যেমন সবার মন কাড়ছে ঠিক অপরদিকে অন্যান্য বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের এমন সৌন্দর্যপূর্ণ বিদ্যালয় গড়তে উদ্বুদ্ধ করছে। 

সরেজমিনে রবিবার (১২ মার্চ) সকালে উপজেলার বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে সবুজ ফসলি মাঠ। বিদ্যায়ল সম্মুখে রয়েছে বোল্লা কালী মন্দির। বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে দিনাজপুর-ফুলবাড়ী আঞ্চলিক সড়ক। বিদ্যালয় চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে একটি এক তালা এবং একটি দ্বিতল দুইটি ভবন। প্রবেশদ্বারে থেকে সম্মুখে আছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। রয়েছে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি জাতীয় ফুল শাপলার প্রতিকৃতি। বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে বেয়ে নামছে লতা-পাতা। শ্রেণি কক্ষের বারান্দা, অফিসকক্ষ সবুজ গাছে ভরপুর। সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠতেই দৃষ্টি কাড়বে ঝুলন্ত লতা। ছাদে উঠতেই দেখা মিলে পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যালে-ুলা, পেঞ্জি, স্টক, এস্টার, চন্দ্রমল্লিকা, গ্যাজানিয়া, এনকা গাদা, ফ্লক্স, হলিহক, বারোমাসী ফুল, নীলমনি লতা, গোল্ডেন শাওয়ার, সিলভার কুইন, জারবেরা, রুবেলিয়া, রুসেলিয়া, কৈলাস সুন্দরী, মানি প্লান্টসহ নানা রকম ফুল গাছের। একইসাথে আছে বারমাসী কাঁঠাল, কাটিমন আম, লেবু, কুল (বরই), সবেদা, বেল, কলা, কামরাংগা, আনার, কমলা, মাল্টা, ড্রাগন, আমড়া, লাউ, ক্যাপসিকাম, লেবু, সাদা এলাচসহ বিভিন্ন প্রকারের ফল গাছ। এ যেন বিদ্যালয় না এ এক ফুল আর ফল গাছের আস্ত নার্সারী। 

ছাদবাগানে দাঁড়িয়ে বাগান পরিচর্যা করছিল ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বীকৃতি রায়, জয়া রায়, ৪র্থ শ্রেণির নূপুর রায়, বিভর চন্দ্র রায়, ৩য় শ্রেণির অনামিকা রায়সহ আরো অনেকে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রেণি কক্ষে ক্লাস শেষে বাগান পরিচর্যা করছেন। তীব্র রোদে মুর্ছা যাওয়া গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে।

বাগান সম্পর্কে তারা বলে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে এই ছাদ বাগান পরিচর্যা করা হয়। নিয়মিত পাঠ্যসূচিতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বাহিরে একটি পাঠ এই ছাদ বাগানে বসে পড়ান শিক্ষকরা। সেখানে প্রত্যেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পালাক্রমে একদিন করে বাগানে থাকা ফল ও ফুল গাছের সাথে পরিচয় করানো হয়। আমাদের খুবই ভালো লাগে এতো সুন্দর একটি বাগান দেখে। আমরা রোজ পাঠ শেষে এসে ছাদে বসে খেলাধূলাসহ ফল-ফুলের গাছপালা নিয়ে চর্চা করি।  

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘসময়ের প্রচেষ্টায় আজ বিদ্যালয়টিতে এতো মনোমুগ্ধকর একটি ছাদবাগান তৈরি হয়েছে। এই বাগান শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ে পরিচর্যা করেন। বিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষায় এটি বড় ভূমিকা রাখছে। বাগানের কিছু টব বাহির থেকে কেনা হলেও বেশিরভাগ টবগুলো আমাদের  তৈরিকৃত। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না রায় বলেন, বহুদিন থেকে চেষ্টা করছি দৃষ্টিনন্দন একটি বাগান গড়তে। কিন্তু বিদ্যালয়ে সীমানাপ্রাচীর না থাকায় এতোদিন তা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে দ্বিতল একটি নতুন ভবন হওয়ার পরে সেই ভবনের ছাদেই গড়ে তোলা হয় স্বপ্নের সেই ছাদ বাগান। বর্তমানে বিদ্যালয় ছাদে ৩০০ প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ বিশিষ্ট বাগান করা হয়েছে। আমার এবং সহকারী শিকক্ষদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফল এই ছাদ বাগান। বর্তমানে বিদ্যালয় ছাদে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একদিন করে পাঠদান করা হয়। সেখানে প্রকৃতি, জীব ও বৈচিত্র সম্পর্কে জ্ঞানদানসহ বিভিন্ন গাছের সাথে তাদের পরিচিত করিয়ে দেয়া হয়। 

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার ১০৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫২নং বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখে আমি অভিভূত। উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। এরমধ্যে বেশকিছু বিদ্যালয়ে রয়েছে তৈরি করা হয়েছে ছাদবাগান। তবে বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এক বাক্যে সেরা বিদ্যালয়। তাদের ছাদবাগানসহ পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। তাদেরকে দেখে অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তারাও এখন চেষ্টা করছেন দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় গড়ে তুলতে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, বর্তমান কৃষিতে ছাদবাগান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেহেতু কৃষি জমি দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং শহর অঞ্চলে ছাদবাগানগুলো খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। ছাদে মানুষ ফলমূলসহ সবজি চাষ করছে। ঠিক তেমনি বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মনোমুগ্ধকর ছাদবাগান করা হয়েছে। আমরা বাগানটি পরিদর্শন করেছি। বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ছাদবাগানের পজিটিভ দিক হলো, ছোট বাচ্চারা তারা গাছপালা লাগাতে উৎসাহিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টির খুবই ভালো উদ্যোগ এটি। আমরা এটি সবখানে প্রচার করছি।   





Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]