উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা মহাসড়ক বন্ধ


রাবি প্রতিনিধি : , আপডেট করা হয়েছে : 12-03-2023

উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা মহাসড়ক বন্ধ

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বাসভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডায় স্থানীয়দের সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় আট ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মুখোমুখি সংঘষের্র ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েকটি মোটর সাইকেল ও দোকানসহ ক্যাম্পাসে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে। এতে সাংবাদিক, পুলিশ ও ব্যবসায়ীসহ অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী রাকিব আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাবি ক্যাম্পাস এবং এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। 

সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার (১২ মার্চ) সোমবারের (১৩ মার্চ) সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিনোদপুর বাজার এবং এর আশপাশের এলাকায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।  

এদিকে, মধ্যরাতে রাতে সংঘর্ষ থামলেও রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মিলে প্রশাসন ভবনে তালা দেন। এসময় কিছু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী দুপুরের দিকে গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ারে আগুন জ¦ালিয়ে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তারা কয়েক দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী স্থানীয় ও পুলিশ সদস্যদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক করা, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানায়, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমীনের সঙ্গে বাস ভাড়া নিয়ে বচসা হয়। এতে বাকবিত-ায় স্থানীয় এক দোকানদার জড়িয়ে পড়েন। এসময় সেখানে ওই বিভাগের ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হলে পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং গোলাম কিবরিয়ারসহ ৩টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে আশপাশের হলের শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর পরে দফায় দফায় সেখানে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি পুলিশ ফাঁড়িতে স্থানীয়রা আগুন জ¦ালিয়ে দেয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষে অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে করে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত সাড়ে ৮টার দিকে দমকল বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি উপস্থিত হয়। 

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে দুই ঘঁন্টা অবরুদ্ধ রাবি উপাচার্য: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলানোর পাশাপাশি সিনেট ভবনের পাশে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ রাবি উপাচার্যসহ জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পা-ে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুন্নবী সামাদীকে সেখানে ঘিরে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে। পরে কৌশলে সেখান থেকে তারা উদ্ধার হয়। 

উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা: স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপের গাফিলতির অভিযোগ তুলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ উপ-উপাচার্য এবং প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এসময় ‘এক দফা এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ’, ‘এক দুই তিন চার, প্রক্টর তুই গদি ছাড়’, ‘হৈ হৈ রই ভিসি, প্রক্টর গেল কই’, ‘জ্বালোরে-জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘আমার ভাইয়ের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই‘, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় হ্যান্ডমাইকে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রক্টর থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আমাদের ওপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়েছে। আমার ভাইদের জখম করেছে। রামেক এখন আহত রাবি শিক্ষার্থীতে ভরপুর। আমার ভাইয়েরা মেডিকেলের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে। আমাদের দাবি ছিল, উপাচার্য বিনোদপুরে (ঘটনাস্থল) গিয়ে আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেবেন। কিন্তু ভিসি কোনোমতেই সেখানে যেতে রাজি না। এখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসিসহ প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। আমরা তাদের পদত্যাগ চাই।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিট বলেন, আন্দোলনের কারণে ঢাকা রাজশাহী সড়ক বন্ধ। প্রশাসনও আমাদের ওই সড়ক ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। মানুষ তো আর থেমে থাকবে না। আমরা বিকল্প রুটে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আগের রুটে ফিরে যান চলাচল শুরু হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, তারা ছাত্রদের চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিকভাবে খোঁজ-খবর রাখছেন। সব ছাত্র যেন চিকিৎসা পান, সেটি দেখভাল করছেন। তবে ছাত্রদের সবার অবস্থাই এখন আগের চেয়ে স্থিতিশীল।

এ ঘটনায় রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আনিসুর রহমান নিজেই গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান করেন। তিনি জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বিনোদপুরসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা করেনি। তবে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]