চাকরি হারানোর শঙ্কায় রুয়েটের ১৩৭ শিক্ষক-কর্মচারী


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 16-04-2023

চাকরি হারানোর শঙ্কায় রুয়েটের ১৩৭ শিক্ষক-কর্মচারী

সৌমিক সরকার রাহুল রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) চাকরি করছেন সহকারী নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। ২০২১ সালের ১ জুন এই পদে যোগদান করেন তিনি। এরপর ভালোই চলছিল সৌমিকের সবকিছু। তবে হঠাৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে। গত ৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রুয়েটের সাবেক উপাচার্যের মেয়াদে দেওয়া নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা দিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠিতেই নড়বড়ে হয়ে যায় সৌমিকের সবকিছু।

শুধু সৌমিকই নয়, তার মতো অবস্থায় পড়েছেন রুয়েটের ১৩৭ জন চাকরিজীবী। তাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের দায়ে তাদের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই চিঠি আসার খবরে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। তারা বলছেন, এতদিন চাকরি করার পর হঠাৎ এমন অস্বাভাবিক তথ্য শুনে তারা যেন আকাশ থেকে পড়ছেন।

সৌমিক বলেন, আমি যোগ্যপ্রার্থী হিসেবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছি। নিয়োগ বোর্ডে কে থাকবে আর কে থাকবে না, তা চাকরিপ্রার্থীর জানার বিষয় নয়। এখন হঠাৎ করে চাকরি নাই বললে আমরা কোথায় যাবো? এখানে আমাদের দোষ কোথায়?

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, যেহেতু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩ এর ১০ (৩) এবং ১১ (৮) ধারার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় আইনের মৌখিক প্রিন্সিপাল অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গৃহীত ও সম্পাদিত কার্যক্রম শুরু থেকে বাতিল অর্থাৎ এ সংক্রান্ত সব নিয়োগ বাতিল করা হলো।

তবে রুয়েট অর্ডিন্যান্স এ ১০ ধারার ৩ উপধারায় বলা আছে, ভাইস-চ্যান্সেলরের পদ শূন্য হলে কিংবা ছুটি, অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে তিনি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, শূন্যপদে নবনিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা ভাইস-চ্যান্সেলর পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত চ্যান্সেলরের ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত না থাকা সাপেক্ষে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (উপ-উপাচার্য) ভাইস-চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ওই নিয়োগের সময় রুয়েটের উপ-উপাচার্য পদটি শূন্য ছিল।

এছাড়া ১১ এর ৮ উপধারায় বলা আছে, ভাইস-চ্যান্সেলর তার বিবেচনায় প্রয়োজন মনে করলে তার যে কোনো ক্ষমতা ও দায়িত্ব সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তাকে অর্পণ করতে পারবেন।

এদিকে, নিয়োগ বাতিলের এই চিঠি দেখে ভুক্তভোগী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা গত মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বেলা ১১টায় রুয়েট প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অবিলম্বে নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

নিয়োগপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার আ ফ ম মাহমুদুর রহমান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে একজন অতিরিক্ত সচিব সিন্ডিকেট সদস্য থেকে আমাদের নিয়োগ অনুমোদন ও বৈধতা দিয়েছেন। কিন্তু এতদিন পর ওই মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা কীভাবে সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়।

কেয়ারটেকার মেহেদী হাসান পান্না বলেন, আমার পরিবার আমার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। এতদিন পর যদি চাকরি না থাকে তাহলে আমার ও পরিবারের কী হবে? আমার চাকরিতে আবেদন করার বয়সও শেষ। এমতাবস্থায় কোনো দোষ ছাড়া চাকরিচ্যুত করলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।

সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. নাঈম রহমান নিবিড় বলেন, আমি ২০২১ সালের ১ জুন থেকে রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত আছি। এর পর আমি বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় অ্যাডমিট কার্ড পাওয়ার পরেও অংশগ্রহণ করিনি।

তিনি বলেন, নিয়োগ বোর্ডে কোনো অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতির দায়ভার তো আমার না। অনেক বড় অনিয়ম করে এখানে একাধিক ব্যক্তি দীর্ঘদিন থেকে চাকরি করছে। অথচ আমরা দোষী না হয়েও শাস্তি পাবো, এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজনে যা যা করার দরকার করবো।

রাজশাহী প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে আছি। এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না।

এ বিষয়ে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ীই এই নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। একটি তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চাকরি বাতিলের এই চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]